ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫ , ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স, ইসরায়েলের তীব্র ক্ষোভ ভারতে স্কুল ভবন ধসে প্রাণ গেল ৭ শিশুর ইরানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধের প্রস্তুতি ইসরায়েলের ভারতের কোচ হওয়ার স্বপ্ন ভাঙল জাভির সান্তোস ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন নেইমার! বার্নাব্যু ছাড়তে নারাজ এনদ্রিক আট বছর পর টেস্টে ৫ উইকেট শিকার স্টোকসের আট বছর পর টেস্টে ৫ উইকেট শিকার স্টোকসের পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেন শাহিন আফ্রিদি শেষ ম্যাচে জয় পাওয়ার পরেও উইকেটের উপর ক্ষোভ সালমানের সাইফউদ্দিনের পারফরম্যান্সে খুশি লিটন বিশ্বকাপই লিটনের মূল লক্ষ্য খায়রুল হকের হঠকারী রায়ে গুম, খুনের লাইসেন্স পেয়েছিল রাজনৈতিক মাফিয়ারা খায়রুল হককে গ্রেফতারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানালেন ফখরুল সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেফতার অন্তর্বর্তী সরকারের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সন্দেহ রয়েছে-নুর দুই শর্তে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা যাবে-আসিফ নজরুল সারা বছর মৃত ভোটার বাদ দেওয়ার ক্ষমতা চান ইসি কর্মকর্তারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ মাইলস্টোনে হেল্প ডেস্ক স্থাপন, নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ চলছে

বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের আর্তনাদ

  • আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৩:৫৮:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০৩:৫৮:২৩ অপরাহ্ন
বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের আর্তনাদ
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় একে একে ঝরে গেছে ৩২টি তাজা প্রাণ। গুরুতর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। আহত-নিহতদের বেশিরভাগই শিশু। আহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের বেডে আছে ৪৩ জন। প্রতিক্ষণে যন্ত্রণায় ছটফটে করছে তারা। তাদের সুস্থতায় নীরবে চোখের পানি ফেলে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন অভিভাবকরা। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় বার্ন ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসাধীন শিশুদের স্বজনরা কখনও বারান্দায় আবার কখনও বা ফ্লোরে বসে কাঁদছিলেন। আবার কেউবা কাঁচের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দগ্ধ প্রিয় মানুষটি কেমন আছে একনজর দেখার চেষ্টা করছেন। চোখের পানিতে সৃষ্টিকর্তার কাছে তাদের সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন। অনেক স্বজন ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে ছোটাছুটি করছেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালের ভেতরে ঢুকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু দগ্ধ শিশুদের সুচিকিৎসায় যাতে কোনও ধরনের ইনফেকশন না ছড়ায়, সেজন্য স্বজনদের প্রবেশ সীমিত করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্সসহ হাসপাতালে দায়িত্বরত সবাই চিকিৎসাধীন সবার সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা গজ-ব্যান্ডেজে ঢাকা শিশুরা যা খাওয়ার কথা বলছেন তা মুহূর্তেই হাজির করার চেষ্টা করছেন আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরা। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সব শিশুই আগুনে পোড়া বা ঝলসে যাওয়া জায়গার জ্বালা-যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। বেশিরভাগ অভিভাবকই পোড়া জায়গায় হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে দগ্ধ শিশুদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মায়েরা চুপি চুপি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছছেন আর সৃষ্টিকর্তার কাছে সুস্থতার দোয়া করছেন। বার্ন ইউনিটের বাইরে এক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ফ্লোরে বসে কাঁদছিলেন তিনি। একটু পর পর দোয়া করছিলেন, আল্লাহ তুমি আমার বাচ্চাটারে সুস্থ করে দাও। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর জানতে পারি তার ছেলে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাহতাব রহমান ভূঁইয়া (১৫)। বিমান দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে তার। বর্তমানে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ছেলে মাহতাব। ছেলের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। কথা হয় তামজিদ হোসেন নামে আরও এক অভিভাবকের সঙ্গে। ভেজা চোখে তিনি বলেন, আমার একমাত্র ভাগ্নি, কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে তার কান্না দেখে। মুখমণ্ডলসহ শরীরের অনেক অংশ ঝলসে গেছে। ফলে ওখানে তীব্র যন্ত্রণা করছে। এসির মধ্যে আছে, তবু বলছে মা বাতাস করো, মামা বাতাস করো। ওরে কখনও কিচেন রুমে যেতে দিতাম না আগুনের তাপ লাগবে বলে আর আজকে সে আগুনে পুড়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। বার্ন ইউনিটের বাইরে অপেক্ষমাণ দগ্ধ শিশুদের আত্মীয়-স্বজনদের আর্তনাদে ভারি হাসপাতালের পরিবেশ। কেউ কেউ আক্ষেপ করে বলছেন, হাসপাতালের বিছানায় যারা এখনও বাঁচার জন্য লড়ছেন, তারা জানেই না বাঁচা-মরা কাকে বলে। যেখানে স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাসায় এসে একসাথে ভাত খাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তারা এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশ্ন করেন, সন্তানরা কোথায় নিরাপদ? সন্তানরা যদি স্কুলেও নিরাপদ না হয় তাহলে আমাদের করণীয় কী? এই দেশে কী জীবনের কোনও মূল্য নেই? দেশ ছেড়ে যাওয়ায় কী সমাধান? এই দেশের আইনপ্রণেতার কি কখনোই জীবনের মূল্য বুঝবে না? এসব বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেছেন অনেকে। বার্ন ইউনিটের আইসিইউ বিভাগ থেকে বের হওয়া সাইদুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, দগ্ধদের অবস্থা এতই ভয়াবহ যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অনেকেই শতভাগ পোড়া শরীর নিয়ে ভর্তি আছেন। যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। আল্লাহ সহায় হওয়া ছাড়া বাচ্চাগুলোর বাঁচার উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, এতগুলো প্রাণ যে ঝরেছে এর দায়ভার কার! সরকার কীভাবে এর জবাব দেবে? জবাব দিলেই কী আর এই প্রাণগুলো ফিরে আসবে? ছোট ছোট বাচ্চাগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যারা বেঁচে আছে তারা মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে। জ্বালা-যন্ত্রণায় অনবরত কান্না করছে। তাদের কান্না দেখে আমরাও কান্না থামাতে পারছি না, বলতে বলতে কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তার। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন ব্রিফিংয়ে বলেন, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে ৪৪ জন দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা ৮, গুরুতর অবস্থা ১৩ ও বাকি ২৩ জন মধ্যবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে আহতদের নতুন করে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিংগাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। তিনি আমাদের সরাসরি কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বা রোগীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা রোগী নিয়ে যে আলোচনা করেছি, উনি আমাদের সঙ্গে কিছু মতামত দিয়েছেন। তার মতামতের ভিত্তিতে আমরা ক্যাটাগরি অনুযায়ী ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ঠিক করেছি। বার্নের (পোড়া) ম্যানেজমেন্ট একটি ডায়নামিক প্রক্রিয়া, এটি প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পরিবর্তিত হয়। আমরা ১২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর সিনিয়ররা রোগীদের ব্যাপারে বোর্ড মিটিংয়ে বসব, সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি বার্নেবল (ঝুঁকিপূর্ণ) থাকে। আমরা শিশুদের সবসময় নিয়মিতভাবে চিকিৎসা করে থাকি। আমরা ওই পয়েন্টগুলো ধরেই তাদের চিকিৎসা করছি। তবে রোগীদের যে কন্ডিশন, তাতে তাদের এই মুহূর্তে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে যারা ভর্তি আছে, তারা যেকোনো সময় খারাপ হতে পারে আবার ইম্প্রুভও করতে পারে বলে জানান তিনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে একটি টিম আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স