ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫ , ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
অবিলম্বে সংস্কার গণহত্যার বিচার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে-নাহিদ রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক কাজল মোল্লা রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ১০ লাখ টাকার মাদক গায়েব ২৬ দিনে ১৯৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪০৯ জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়ম চাঁদাবাজিকালে আটক বৈষম্যবিরোধীর ৩ ও ছাত্রসংসদের ১ নেতা রিমান্ডে দেহাবশেষগুলো ছিল পরিচয় না পাওয়া ২ শিক্ষার্থীর পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি-ফখরুল ফ্যাসিস্ট সরকারের কাজগুলো আন্তর্জাতিকভাবে ডকুমেন্টারি হয়ে আছে-উপদেষ্টা ফরিদা আমরা বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যকে উদ্ধার করতে চাই-উপদেষ্টা আদিলুর ড. ইউনূসের মালয়েশিয়া সফর ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার দুই তরুণের স্বপ্ন, সারা বিশ্বের বাংলাদেশীদের সহজ জীবন ইমেজ সংকটে এনসিপি পাল্টে যাচ্ছে ঢাবির চেহারা গত বছর বিএনপির আয় প্রায় ১৬ কোটি, ব্যয় প্রায় ৪ কোটি টাকা টাকা ছাড়া মামলার নথি শুনানির জন্য যায় না আদালতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের মুড়লীতে আরসিসি রিজিট ঢালাইয়ে ব্যাপক অনিয়ম তিন মডেলের ওয়ালটন মনিটর এখন আরো সাশ্রয়ী মূল্যে বগুড়ায় কাভার্ডভ্যান-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ১০ লাখ টাকার মাদক গায়েব

  • আপলোড সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৩:৫৩:৩৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৩:৫৩:৩৪ অপরাহ্ন
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ১০ লাখ টাকার মাদক গায়েব
* হেরোইন মামলা বদল করে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে থানায় ঢুকে ছিনতাই মামলা * ওসি আলী ইফতেখার হাসান ও এসআই আলতাফের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে ডিএমপি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ১০০ গ্রাম হেরোইন। কিন্তু মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই থানার নথিপত্রে। মাদক উদ্ধার এবং একজন আটকের এ ঘটনা ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রীতিমতো চাঞ্চল্য। প্রায় ১০ লাখ টাকার হেরোইন উদ্ধার হলেও মামলা না হওয়ায় থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। থানাপুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে রাতে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ মাদক কারবারি মো. সাদ্দাম ওরফে ম্যানেজার সাদ্দামকে (৩৫) আটক করে পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও রহস্যজনকভাবে সেটি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযোগের তীর সরাসরি মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান ও এসআই মো. আলতাফের দিকে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে হেরোইন গায়েব করে সাদ্দামকে একটি পুরোনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যেখানে জব্দ করা হেরোইন আদালতে জমা দেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে উদ্ধার হওয়া ১০ লাখ টাকার সেই হেরোইন গেল কোথায়? সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হেরোইনসহ আটকের পর গত ৬ মে দিবাগত মধ্যরাতে সাদ্দামের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরের ড্রাফট করে থানাপুলিশ। মামলার প্রাথমিক বিবরণীর ড্রাফট, সাধারণ ডায়েরি, আসামি চালানসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। পরবর্তী সময়ে মাদকের সেই ২৪ নম্বর মামলা হয়ে যায় ছিনতাই মামলা। কিন্তু সেই মামলায় সাদ্দামকে গ্রেফতার না দেখিয়ে ২০২৪ সালের একটি ওয়ারেন্টে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়। অন্যদিকে, আসামির কাছ থেকে জব্দ করা হেরোইন আদালতে জমা না দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। মোহাম্মদপুর থানার জেনেভা ক্যাম্প বাজারের সেক্টর ৭-এর জি ব্লকে অবস্থিত ওয়াটার পয়েন্ট ইউনিটের রাস্তার ওপর থেকে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ সাদ্দাম ওরফে ম্যানেজার সাদ্দামকে আটক করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। ওই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার তৎকালীন এসআই মো. শাখাওয়াত হোসেনকে মামলায় বাদী করা হয় এবং মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই রাজু আহমেদকে। মামলাটি (মামলা নং-২৪) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২০১৮ এর ৩৯(১) এর ৮(গ) ধারায় দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬ মে মাদকসহ গ্রেফতারের পর ৭ মে ২৪ নম্বর মামলাটি ছিনতাই মামলা হিসেবে দায়ের করা হয়। যেখানে মামুন হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মোহাম্মদপুরের রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশে ডিউটি করছিলেন এসআই আলতাফ, এসআই শাখাওয়াত, এএসআই সাত্তারসহ আরও এক কনস্টেবল। তারা জানতে পারেন, জেনেভা ক্যাম্পে একজনকে মারপিট করে আটকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে এসআই শাখাওয়াত ও এএসআই সাত্তার তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় আসামির রেকর্ড যাচাই করে দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে মাদকের দুটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। সে সময় তার কাছে কোনো হেরোইন পাওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে, পরবর্তী সময়ে ওসির নির্দেশে এসআই আলতাফ আটক সাদ্দামকে ১০০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে চালান করার জন্য একটি এফআইআরের (অভিযোগপত্র) ড্রাফট, মামলার নম্বর, জিডি ও আসামি চালানের কপি তৈরি করেন। কিন্তু অদৃশ্য কোনো কারণে মামলাটি পরবর্তী সময়ে আর রুজু হয়নি। মামলার এফআইআর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ মে দিবাগত রাত এবং ৭ মে’র প্রথম প্রহরে জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর মোহাম্মদপুর থানায় রাত ১২টা ৪০ মিনিটে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর (এফআইআর) কপি লেখা হয়। সেখানে সাদ্দামের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের ৩৬(১) ধারার ৮(গ) উপধারায় একটি মামলা লেখা হয়। সেই মামলায় তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা বাজারমূল্যের ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার দেখানো হয়। মোহাম্মদপুর থানায় প্রস্তুত করা এফআইআর অনুযায়ী মামলাটির নম্বর দেওয়া হয় ২৪/৪৪৩। যে মামলায় মোহাম্মদপুর থানার আরেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাখাওয়াত হোসেনকে বাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপিতে দেখা যায়, কপিটির বাম পাশে বিপি ফরম নং ২৭ ও বাংলাদেশ ফরম নং ৫৩৫৬ উল্লেখ করা আছে। এ ছাড়া, ঠিক মাঝখানে ‘প্রাথমিক তথ্য বিবরণী’ লেখাটির নিচে ‘নিয়ন্ত্রণ নং ২৪৩’ এবং ‘থানায় পেশকৃত ফৌজদারি বিধান কোষের ১৫৪নং ধারায় ধাতব্য অপরাধ সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য’ লেখা রয়েছে। যে কাগজটিতে ঘটনার তারিখ ও সময় হিসেবে ৬ মে দিবাগত রাত ২৩টা ৪০ মিনিট উল্লেখ করা আছে। পাশাপাশি, পরদিন ৭ মে ১০০ গ্রাম মাদকসহ (হেরোইন) আসামিকে আদালতে পাঠানোর জন্য মোহাম্মদপুর থানার আসামি চালান কপি প্রস্তুত করে নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। সেই চালান কপিতে সাদ্দাম হোসেনের নাম ৩ নম্বর সিরিয়ালে রয়েছে। যে কপিতে সাদ্দাম হোসেনের নাম, পিতার নাম, মামলা নম্বর ও ধারা এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। চালান কপিতে লেখা, ‘আসামি চালান নং ২৫’। কপিটির ডান পাশে লেখা ‘৩৯২৪৩ হারুন’ ও ‘১৮০১৩ রাকিবুল’। এ ছাড়া, গ্রেফতার হওয়া আসামিকে আদালতে প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেই জিডি সম্পন্ন করে তা রেজিস্ট্রার বইয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়। যে বইটিতে জিডি নম্বর ৫০০ উল্লেখ হয়েছে। জিডিটি ৭ মে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে লিপিবদ্ধ করা হয়। জিডির নম্বর দেওয়া বইটির বাম পাশে লেখা- ‘বিপি ফরম নং ৬৫’, ‘বাংলাদেশ ফরম নং ৫৩৬৫’। বইটির মাঝখানে ‘সাধারণ ডায়েরি বহি’ লেখা রয়েছে। ঠিক তার নিচে ‘নিয়ন্ত্রণ নং ৩৭৭’ এবং এক পাশে ‘৯২৫৩২৮’ পৃষ্ঠা নম্বর লেখা রয়েছে। কিন্তু, ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার হওয়া সাদ্দাম হোসেনকে যে গ্রেফতারি পরোয়ানায় আদালতে পাঠানো হয়েছে সেখানে দেখা যায়, মোহাম্মদপুর থানার মামলা নং ১০(১১) ২৩ এবং জিআর নং ১৬৬৬/২৩ লেখা রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা জানান, চার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও এক পরিদর্শক (অপারেশন) নিয়ে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন ওসি। এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন এসআই আলতাফ, মল্লিক, মাহিদুল ও মোশারফ। ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর থানায় নতুন করে যোগ দেওয়া বর্তমান পরিদর্শকও (অপারেশন) তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তারা মোহাম্মদপুর থানায় কে গ্রেফতার হবে, কাকে কখন আটক করতে হবে সবকিছু নির্ধারণ করে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেন। এ ছাড়া, মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকা আবাসিক হোটেল, ফুটপাত ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক ও মাসিক হিসেবে টাকা আদায় করেন। কেউ যদি রাত ১১টার পর মোহাম্মদপুরের কোনো এলাকায় দোকান খোলা রাখেন, তাহলে তাদের টাকা দিতে হয়। অন্যথায় তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার মতো ঘটনাও ঘটে। এমন অনিয়মের পরও মামলা থেকে বাঁচতে ভয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। জেনেভা ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা জানান, ওসি সিন্ডিকেট জিয়া ও শান্তসহ আরও অনেকের মাধ্যমে মাদকের টাকা নিয়ে বুনিয়া সোহেলকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। বুনিয়া সোহেল জেনেভা ক্যাম্পের অন্যতম মাদক কারবারি। কয়েকদিন আগেও তার কাছ থেকে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল র?্যাব। এই সিন্ডিকেট যাকে খুশি যেকোনো মামলায় ঢুকিয়ে দেয়, আবার যাকে খুশি টাকার বিনিময়ে গভীর রাতে ছেড়ে দেয়। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। তারা আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলার আসামি এবং খাল দখল করে গড়ে তোলা সিলিকন সিটির এমডি সারোয়ার খালিদকে গ্রেফতারের পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মাত্র একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পাশাপাশি, বসিলা গার্ডেন সিটির শামীম কোম্পানি থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে শামীমকে গ্রেফতার না করে বসিলা ব্রিজ পার করে দিয়ে আসে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি বুনিয়া সোহেল ও চুয়া সেলিমকে গ্রেফতারের পর তাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন ওসি। এ ছাড়া, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশন থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় শামীম ব্যাপারির নাম এজাহার থেকে বাদ দিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওসির টাকা নেওয়ার বিষয়গুলো স্থানীয়দের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’। এখন পর্যন্ত স্থানীয়রা পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ডিএমপি কমিশনার বরাবর ২৬টির অধিক লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন মোড়ল ওরফে জাহিদ মোড়লকে নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট তৈরিরও অভিযোগ রয়েছে। এ সিন্ডিকেট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা নিয়ে মামলা বাণিজ্য চালায়। অথচ মোহাম্মদপুরে একাধিক গুলির ঘটনা থাকলেও মামলা হয়েছে মাত্র দুটি ঘটনায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদাবরের এক রিকশা গ্যারেজের মালিক জানান, জাহিদ মোড়লের সহযোগী রিয়াদ তার কাছে এক লাখ টাকা চেয়েছিল। তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার স্ত্রীকে মোহাম্মদপুর থানাপুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে চুরির মামলা দিয়ে জেলে ঢুকায়। শুধু পুলিশ সিন্ডিকেট নয়, সিভিল সিন্ডিকেটও রয়েছে ওসির। এসব অভিযোগের বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা বলেন, এমন কিছু অভিযোগ শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বিষয়গুলো আমলে নিয়েছি। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১০০ গ্রাম মাদক (হেরোইন) উদ্ধারের ঘটনায় হাতে আসা এফআইআর কপিতে লেখা মামলার বাদী শাখাওয়াত হোসেন। তিনি মোহাম্মদপুর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই)। বর্তমানে বরিশালে কর্মরত আছেন। এসআই শাখাওয়াত বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি, এসআই আলতাফ, এএসআই সাত্তার রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পাশে মোটরসাইকেলে ডিউটি করছিলাম। ওই সময় জেনেভা ক্যাম্প থেকে আলতাফের কাছে এক সোর্স ফোন করে বলে- জেনেভা ক্যাম্পে মারামারি লাগছে। তখন আমরা জেনেভা ক্যাম্পের ভেতরে যাই। ওই সময় কয়েকজন লোক বলে- ম্যানেজার সাদ্দামকে তারা আটক করেছে, আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। আমরা তখন ম্যানেজার সাদ্দামকে ওখান থেকে থানায় এনে দেখি তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে।’ ‘কিন্তু, তার বিরুদ্ধে এফআইআর কপিতে কে বাদী হিসেবে আমার নাম দিয়েছে, তা আমি জানি না। থানায় তো আমার বিপি নম্বর, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা সবই দেওয়া আছে। এ ঘটনা ডিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।’ ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (উপ-পরিদর্শক) এসআই রাজু আহমেদ বলেন, আমাকে থানার সিসি মুন্সী ফোন দিয়ে জানায় ‘আপনার নামে একটি হেরোইনের মামলা দেওয়া হয়েছে. সেটি আপনি তদন্ত করবেন এবং আসামিকে আদালতে পাঠাবেন।’ পরে আমি ২৪ নম্বর মামলার জন্য একটি ফরওয়ার্ডিং রেডি করে মুন্সীর কাছে জমা দিতে চাই। তখন মুন্সী বলে ‘এই ২৪ নম্বর মামলা হেরোইনের মামলা হবে না এবং আসামিও চালান হবে না।’ পরে আমি ফরওয়ার্ডিংটি মুন্সীর কাছে জমা এবং আসামির তালিকা থেকে নাম কেটে দিয়ে চলে আসি। একটি মামলা রুজু হলে আমরা আসলে জানতে পারি না। ওসি যাকে নির্ধারণ করে দেন, সে-ই তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে মামলাটি তদন্ত করেন। ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর পেছনের বা আগের কোনো ঘটনা জানি না। আমাকে জানানোর পর আমি জাস্ট ফরওয়ার্ডিং দিয়েছি। এর বেশি আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে কথা হয় মোহাম্মদপুর থানার সিসি মুন্সী সাজেদুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। প্রথমে এ রকম একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এসআই রাজু স্যার যখন ফরওয়ার্ডিং জমা দেন, তখন তাকে জানানো হয় এটি আর মাদক মামলা হচ্ছে না এবং এই মামলায় আসামিও আদালতে চালান হবে না। তাকে পরে অন্য ওয়ারেন্টে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান করা হয়। আপনাকে এই মামলাটি পরে কে নিতে নিষেধ করল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক আগের কথা। বিষয়টি আমার মনে নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আলতাফ বলেন, খবর পেয়ে শুধু তাকে (সাদ্দাম) জেনেভা ক্যাম্প থেকে ধরে নিয়ে এসেছি। তার সঙ্গে কোনো হেরোইন পাইনি। মামলার ড্রাফট সাজানো, জিডি, চালান কপি- এগুলো আপনার নির্দেশে হয়েছে এবং এই মামলা প্রত্যাহারের জন্য অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি যেগুলো বলছেন সেগুলো সব মিথ্যা। আমরা তার কাছে তো হেরোইন পাইনি, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে কীভাবে মামলা দেব? আর আমি তো এই মামলা নেওয়া বা না নেওয়ার কোনো নির্দেশদাতা নই। এসব নির্দেশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে আসে।’ এজাহার নেই কিন্তু এফআইআর, চালান কপি সবকিছু কীভাবে হলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। তবে, যেসব ঘটনার কথা আপনারা বলছেন, এসব ঘটনার সঙ্গে আমরা জড়িত নই। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার বলেন, থানায় ওইদিন অনেক আসামি ছিল। ভুলবশত ডিউটি অফিসার একজনকে নিয়ে চালান কপিও লিখে ফেলেছিল। এটা সে স্বীকার করেছে। পরে সে আলাদাভাবে একটি জিডিতে নোট দেয়। এটা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কারা যেন সুযোগ নিয়ে একটি এফআইআর কপি বানিয়ে সেটা বাইরে দিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় থানার লোকজন জড়িত না থাকলে কীভাবে এত গোপনীয় কাগজপত্র বাইরে যায়? থানার কেউ জড়িত না থাকলে এসব কাগজ বাইরে যাওয়ার কথা না। অবশ্যই তারা আমাদের খারাপ চায়। এ ঘটনায় ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, এ বিষয়ে আমরা এতদিন অবগত ছিলাম না। এখন আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। অধিকতর তদন্ত করে যারা এই ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, যদি এমন কোনো ঘটনা কেউ ঘটিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ