
পানিতে তলিয়ে ৩ হাজার হেক্টর আমন খেত দুর্ভোগে কৃষক ও সাধারণ মানুষ


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল যেন আরেক ভবদহে পরিণত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন বিল ও নিচু এলাকাগুলো পানির নিচে চলে গেছে। এ পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ১৫০ হেক্টর বীজতলা এবং ৫০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষেত। ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলার হাজারো কৃষক ও পানিবন্দি মানুষ। ভরা বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে গেছে অন্তত ২০টি বিল ও একাধিক গ্রাম। এসব বিলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ডাইয়ের বিল, রামচন্দ্রপুরবিল, শাল্যের বিল, কচুয়ার বিল, ঘুড্ডের বিল, হাচ্চালার বিল, বাঁশতলার বিল, চেলারবিল, ঢেপুরবিল, পালিচাঁদবিল, বুড়ামারাবিল, খড়িলেরবিল ও হাজিখালির বিল। আর ডুবে যাওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে বালুইগাছা, গোবিন্দপুর, বড়দল, ঘুড্ডিরডাঙি, পুরাতন সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর, জেয়ালা, দামারপোতা ও মাছখোলা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এনামুল হক খোকন বলেন, “বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী অন্তত ২০টি বিল ও ১০টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। গ্রামীণ রাস্তায় হাঁটু পানি, স্কুলে ক্লাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম, ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থাও। দুর্ভোগ সীমাহীন। ”স্থানীয় কৃষক ইউনুচ আলী বলেন, “১০ বিঘার অর্ধেক জমিতে চারা দিয়েছি, বাকি জমি এখন পানির নিচে। বীজতলাও প্রায় নষ্ট। এইভাবে চলতে থাকলে চারা রোপণের সুযোগও পাব না। ” আরেক কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, “২০ বিঘার আট বিঘায় চারা দিয়েছিলাম। এখন সব জমিই তিন-চার ফুট পানির নিচে। খাল বন্ধ থাকায় পানি নামছে না, নিঃস্ব হয়ে গেলাম। ” সবজি চাষিরাও বাদ পড়েননি। কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, “চার বিঘায় ঢেঁড়স, বরবটি, পটোল, ওলসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার সবজি চাষ করেছিলাম। সব পানির নিচে। এখন আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। কিন্তু কোথা থেকে পুঁজি আসবে?”শুধু কৃষি নয়, জনজীবনও বিপর্যস্ত। সাতক্ষীরা পৌর শহরের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে, যানবাহন বন্ধ। ভ্যানচালক ফজর আলী বলেন, “রাস্তায় পানি উঠলে ভ্যান চালানো যায় না। ঘরে বসে থাকলে পরিবার চলে না। টানা বৃষ্টিতে জীবনটাই থেমে যায়। ”স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এমন দুর্ভোগ বারবার হচ্ছে। খাল দখল আর অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়কার উর্বর বিলগুলো এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “টানা বর্ষণে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসাব করতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে। ” এদিকে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৪-৫ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। জলাবদ্ধতা ও কৃষি ক্ষতির এই ভয়াবহ চিত্র মোকাবেলায় জরুরি সরকারি পদক্ষেপ ও ত্রাণ সহায়তা না এলে কৃষকেরা ভেঙে পড়বেন চরম বিপর্যয়ে- এমনটি আশঙ্কা করছেন বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী এলাকার মানুষ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ