বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ব্যাপক নতুন শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপ করা এ শুল্ক এড়ানো বা হ্রাস করার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির সময়সীমা পার হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে বলেন, শুল্কের কারণে শত শত কোটি ডলার এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ না করলে এই নতুন শুল্ক ২৭ অগাস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ভারতের ওপর আরোপ করা মোট মার্কিন শুল্ক ৫০ শতাংশ হবে; যা যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বাণিজ্য অংশীদারের ওপর চাপানো সর্বোচ্চ শুল্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্রাজিলের রপ্তানি পণ্যও যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুয়িজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা অন্যায়ভাবে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে অভিযোগ করে এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিচারকে ‘উইচ হান্ট’ অবহিত করে দেশটির ওপর সর্বোচ্চ মাত্রার এই শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করার জন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ট্রাম্প বিদেশে তৈরি করা কম্পিউটার চিপের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এই হুমকি এমন সময়ে এসেছে যখন হোয়াইট হাউজের চাপে অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন এক ঘোষণায় কয়েক ডজন বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্যের ওপর আরোপ করা শুল্কের সংশোধিত একটি তালিকা প্রকাশ করে আর এই মাসুল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টারত দেশগুলোর জন্য ৭ অগাস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করে। ট্রাম্প যাকে ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ বলছেন তা হ্রাস করা অথবা বাদ দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি করতে দেশগুলো দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করা। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে বিরাজমান ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র অন্যায্য আচরণের শিকার হচ্ছিল। ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কারণে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার রপ্তানি নির্ভর দেশগুলো তাদের অন্যতম। উৎপাদন নির্ভর লাওস ও মিয়ানমারের রপ্তানি পণ্যের ওপর চাপানো হয়েছে ৪০ শতাংশ শুল্ক। ফলে দেশ দুটি ট্রাম্পের আরোপ করা কিছু সর্বোচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে ট্রাম্প এমন দেশগুলোকেই লক্ষ্যস্থল করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে চীনের ওপর আরোপ করা ৩০ শতাংশ শুল্ক এখনই কার্যকর হচ্ছে না। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা চলতে থাকায় ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটির ওপর আরোপিত শুল্ক আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন যা ১২ অগাস্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার এই দিনটিতে এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। জাপান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার সূচকগুলো সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে আর ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মার্কেটগুলোর সূচক হ্রাস পেয়েছে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ বার্ট হফম্যান বলেছেন, কয়েক মাস ধরে চলা বিশৃঙ্খলার পর নতুন শুল্কের তালিকা দেশগুলোকে কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ দেবে। “এটাই তো হওয়ার কথা। এখন আপনি শুল্কের প্রভাব বিশ্লেষণ শুরু করতে পারেন,” বলেন তিনি। যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি ইতোমধ্যেই এপ্রিলে ট্রাম্প যে হুমকি দিয়েছিলেন তার চেয়ে হ্রাসকৃত শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে পেরেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে রাজি হয়ে চুক্তি করে নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থাকা সুইজারল্যান্ডের ওপর ৩৯ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। এই শুল্ক বহাল থাকলে দেশটির অর্থনীতি কঠিন চাপে পড়বে। ওই পরিণতি এড়ানোর জন্য দেশটি ট্রাম্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো চুক্তি করতে পারেনি, কিন্তু দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তারা বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে একটি বৈঠক করছেন। ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ এশীয় মিত্র তাইওয়ানের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে জানিয়েছেন, এই হার ‘অস্থায়ী’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের আলোচনা এখনও চলমান। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রতিবেশী কানাডার ওপর শুল্ক হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করেন। ট্রাম্পের অভিযোগ দেশটি ফেন্টানাইল ও অন্যান্য মাদক সীমান্ত পার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ‘সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে’। কিন্তু বিবিসি জানিয়েছে, বিদ্যমান যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউএসএমসিএ) কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা কানাডার বেশিরভাগ পণ্য আরোপিত নতুন শুল্ক এড়াতে পারবে। আরেক প্রতিবেশী মেক্সিকোর ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করলেও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকায় তা আরও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প অন্য যে দেশগুলোর ওপর বেশি মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছেন সেগুলো হল, সিরিয়া ৪১ শতাংশ, কেনিয়া ৪০ শতাংশ, ইরাক ৩৫ শতাংশ, সার্বিয়া ৩৫, লিবিয়া ৩০, আলজেরিয়া ৩০, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০, বসনিয়া হার্জেগোভিনা ৩০, কাজাখস্থান ২৫, মলদোভা ২৫, ব্রুনেই ২৫ ও তিউনিসিয়া ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশসহ বাকি দেশগুলোর ওপর ২০ থেকে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কার্যকর হল বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর আরোপ করা নতুন মার্কিন শুল্ক
- আপলোড সময় : ০৭-০৮-২০২৫ ০৮:০৩:১৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০৮-২০২৫ ০৮:০৩:১৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ