ঢাকা , শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫ , ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
চীন-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনীর উদ্বোধন ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে- শিল্প উপদেষ্টা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট নীতিমালা নেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে, ঝুঁকি বাড়ছে প্রতি বছরই সরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে আয়নাঘর : জীবিতদের প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ, নিহতদের ১০ কোটি টাকা দিতে লিগ্যাল নোটিশ ২৬ বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশে বাধা ডেঙ্গুতে ৩ মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ৪০৮ ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি -শিবির সরকারের ১২ মাসে ১২ সাফল্যের কথা জানালেন প্রেসসচিব অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে: আসক উত্তর বা দক্ষিণপন্থি নয়, বিএনপি মধ্যপন্থি দল-সালাহউদ্দিন ঢাকায় ফ্লাইট রেস্ট্রিকশন জোনে ৫২৫ উঁচু ভবন রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম পুনর্বিবেচনার রায় পিছিয়েছে কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এলো নিমজ্জিত ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলের লাশ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কর্নেল আজাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন ইউনিয়ন যাচ্ছে অন্য আসনে, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ টিকিট সিন্ডিকেটে জড়িত এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল দাবি পাবিপ্রবি ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা মোহাম্মদপুরে সেনা অভিযানে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৪

অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে: আসক

  • আপলোড সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ০৮:১৩:০৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ০৮:১৩:০৮ অপরাহ্ন
অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে: আসক
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল বৃহস্পতিবার সংগঠনটির সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করে সংগঠনটি। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ একটি যুগান্তকারী গণজাগরণের সাক্ষী হয়। চাকরিতে বিশেষ কোটা ব্যবস্থা ও স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক ঐতিহাসিক আন্দোলন। ন্যায়, মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল এই আন্দোলন। দমন-পীড়ন, বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছাত্র-জনতা শাসকগোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করে রাস্তায় নেমে আসে এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়। এই আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক পালাবদল নয়। বরং এটি ছিল একটি নতুন যুগের সূচনা। যেখানে মানুষের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে গড়ে উঠেছিল একটি বিস্তৃত গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ। বিবৃতিতে বলা হয়, দুঃখজনক হলেও সত্য, আন্দোলনের পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হতাশ করেছে। এখনও নির্বিচারে গ্রেপ্তার চলছে। হেফাজতে মৃত্যু ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। যা আগের সরকারের দমনমূলক আচরণের পুনরাবৃত্তির মতোই মনে হচ্ছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির কারণে নাগরিকের নিরাপত্তা বিষয়ক উৎকণ্ঠা চলমান রয়েছে।
মব সন্ত্রাস: একই সময়ে সারা দেশে উচ্ছৃঙ্খল জনতার মাধ্যমে সংঘটিত ‘মব সন্ত্রাস’র ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক প্ররোচনায় পরিচালিত কিংবা সামাজিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সংঘটিত এসব সহিংস কর্মকাণ্ডে বহু সংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, যা মানবাধিকারের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।
সংখ্যালঘু পরিস্থিতি: বর্তমান পরিস্থিতির আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্রমাগত দুর্বল এবং সুরক্ষাহীন অবস্থা। জনগণের প্রত্যাশা ছিল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নিপীড়ন এবং হুমকির ঘটনা আরও বেড়েছে। এমনকি ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালানো হয়েছে, যার মধ্যে লুটপাট এবং জীবননাশের হুমকিও রয়েছে। এসব ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও বিচার বা শাস্তি না হওয়ায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা আরও গভীর হয়েছে।
নারী নিপীড়ন: গণআন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা নারীর জন্য পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। নারীরা বর্তমানে এক বিস্তৃত নিরাপত্তাহীনতার আবহে জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশে নারীদের মারধর, অপমান এবং শারীরিক নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, এবং পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতা এখন প্রায় নিয়মিত সংবাদে উঠে আসছে। নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো, তাদের পোশাক বা আচরণ নিয়ে নৈতিকতা নির্ধারণের চেষ্টা তথা ‘মোরাল পুলিশিং’র নামে যা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। নারীদের এই নিপীড়ন কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সহিংসতার রূপ নিয়েছে। যেখানে নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পথ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
সংবাদমাধ্যম: সংবাদমাধ্যম আজ নানারকম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শত শত সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল, কৌশলে চাকরিচ্যুতি, মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা, গ্রেপ্তার, সংবাদপত্র অফিসে হামলা এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার চর্চা কতটুকু বিদ্যমান- সেই প্রশ্নটিও বছর জুড়ে অব্যাহত ছিল।
শিক্ষাঙ্গণ: শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অনেক শিক্ষার্থীকে অন্যায্যভাবে প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে, সনদ বাতিল করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হুমকির মুখে পড়ছে।বিবৃতিতে বলা হয়, এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মাঝে একটি আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, বাংলাদেশ বলপূর্বক গুম থেকে রক্ষার আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেছে এবং পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে সংঘটিত গুমের অপরাধ তদন্তের জন্য একটি ‘গুম কমিশন’ গঠন করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য দায়বদ্ধতার পথে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’ পুনর্গঠন না করাটা মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণায় সাধুবাদ: রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করায় সাধুবাদ জানাচ্ছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক ধারায় ফেরার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আসক আশা করে, এই ঘোষণার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে। এই প্রেক্ষাপটে, আসক জোরালোভাবে দাবি করছে, আইনের শাসন, আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচারহীন গ্রেপ্তার, মব সন্ত্রাস ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, নারীর প্রতি সহিংসতায় জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ, সভাসমাবেশ ও সংগঠন করার সাংবিধানিক অধিকার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এই সংকট নিরসনে রাষ্ট্রকে এখনই কার্যকর, দায়িত্বশীল ও মানবাধিকার-বান্ধব ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে জনগণের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত পরিবর্তনের স্বপ্ন ব্যর্থ না হয়।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স