
নগরবাসীর দুঃখ নিত্য যানজট
- আপলোড সময় : ১০-০৮-২০২৫ ০২:৩৪:১২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৮-২০২৫ ০২:৩৪:১২ অপরাহ্ন


* শৃঙ্খলার অভাবে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে
* বাস স্টপেজ নির্ধারণ ১৩০টি, দক্ষিণ সিটিতে ৭০টি ও উত্তরে রয়েছে ৬০টি
* রাজধানীতে ২০ শতাংশ বাস-মিনিবাস ফিটনেসবিহীন : বিআরটিএ
* যানজটে শুধু রাজধানীতে দৈনিক অপচয় হচ্ছে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা
অতিরিক্ত যানবাহন, সড়কের অপ্রতুলতা, অবৈধ পার্কিং-ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সড়ক দুর্ঘটনা-নির্মাণ কাজ, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এবং অবৈধ অটোরিকসার অবাধ বিচরণ করছে। এ ছাড়া রাজধানীতে নির্ধারিত বাস স্টপেজের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর দৃশ্য প্রতিদিনের। সড়কের সব স্থানে বাস থামানোর কথা নয়, তবুও বাস থামছে, যাত্রী উঠছে, নামছেও। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনা এবং ভোগান্তি বেড়েই চলেছে নগরবাসীর। এককথায় বলতে গেলে বর্তমানে সড়কে শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। ফলে নগরবাসীর কাছে সবচেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে নিত্যদিনের যানজট। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সবগুলো ট্রাফিক বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় যারা সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং আইন অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। তার পরও নগরবাসীর দুঃখ যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না।
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক কিছুই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিবহন খাতে সংস্কার খুব একটা চোখে পড়েনি। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গণপরিবহনব্যবস্থায় অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যেখানে-সেখানে বাস থেমে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে, যা যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ। ফিটনেসবিহীন বাসগুলো এখনো রাস্তায় চলাচল করছে, যা যাত্রীদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। এছাড়াও, মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে, যা স্পষ্টতই আইনবহির্ভূত হলেও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেই। যাত্রীবাহী বাসগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চালকের বেপরোয়া মনোভাবকে উৎসাহ দিচ্ছে, বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। অন্যদিকে, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা পরিবহনব্যবস্থার দুর্দশাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তবে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে নগরীর যানজট এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতো না। বিশেষ করে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক রাজধানীতে প্রবেশ করতে না দিলে এমনিতেই যানবাহনের চাপ কমে আসতো। এ ছাড়া যাত্রীবাহী বাসগুলোকে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে না দিলেই যানজট অনেকাংশে কমে যেতো। ঢাকা মহানগরের ‘জনজীবনে’ যন্ত্রণার পেছনে মূল কারণ শৃঙ্খলার অভাব। ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলার ছিটেফোঁটাও নেই। বাসগুলো যেখানে সেখানে থামছে, স্টপেজ বলে কোনো কিছু কার্যতই নেই। ব্যস্ততম সড়কের মাঝখানে হঠাৎ বাস থেমে যায়, যাত্রী ওঠানামা করে, আর তার পেছনে আটকে যায় অ্যাম্বুলেন্স, স্কুলবাস কিংবা অফিসমুখী গাড়ি। চালকদের কোনো আগ্রহ নেই নিয়ম মানার, এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি নেই বললেই চলে। বর্তমানে রাজধানীতে ৪ লাখ বৈধ রিকসা, ৫ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকসা, ১লাখ অবৈধ ইজিবাইক, ১ লাখ ৩৪ হাজার অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন, ১২ লাখ মোটর সাইকেল, সাথে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ২৫ লাখ যানবাহনের ভারে ঢাকা সিটি যেন ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে। এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ৪ হাজার ট্রাফিক পুলিশ কার্যত নিস্ক্রিয়।
সরেজমিনে গত কয়েকদিনে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রবেশ পথে যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, উত্তরা এলাকায় যেখানে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। অথচ বাস দাঁড়ানোর জন্য রাজধানীতে ১৩০টি বাস স্টপেজ নির্ধারণ করা আছে। যার মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ৭০টি এবং উত্তরের ৬০টি স্থান রয়েছে। কিন্তু এসব স্টপেজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তুলছেন বাসচালকরা। শুধু তাই নয়, ফ্লাইওভারগুলোতে ওঠার আগে একই রাস্তায় একই সারিতে ২/৩টি বাস এক সাথে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। আবার ফ্লাইওভার থেকে নামার সময়ও একইভাবে যাত্রী তোলার কারণে পেছনে গাড়ির সারি নিমিষেই লম্বা হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী, মগবাজার-মালিবাগ, মহাখালী, খিলগাঁও, বিমানবন্দর ও উত্তরায় অবস্থিত বিভিন্ন ফ্লাইওভারে এমন দৃশ্য এখন নিত্যদিনের। ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তাদের সেদিকে নজর নেই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, কাকরাইল, আগারগাঁও, মিরপুর-১০, মগবাজার মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে নিস্ক্রিয় দেখা গেছে। এদের কেউ কেউ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন, কেউবা মোবাইল দেখে সময় পার করছেন। শুধুমাত্র বিজয় সরণীর মোড়ে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ট্রাফিক পুলিশকে সক্রিয় দেখা গেছে। সড়কের গণপরিবহনগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়াই যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে করছে যাত্রী উঠা নামা। বিশেষ করে উত্তরা বিমানবন্দর এলাকার বিএনএস সেন্টার উড়াল সড়কে উঠার আগে যাত্রীবাহী গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ সময় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আজমপুর এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। বিমানবন্দর মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন শপিংমল, ব্যাংক বীমা ও সরকারি বেসরকারি অফিসের সামনের সড়ক দখল করে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় দূরপাল্লার নামি-দামি এসি/নন-এসি গাড়ির চাপে যান চলাচলে ধীর গতি চলে আসে। মহাসড়কে বেপরোয়া ফিটনেস বিহীনবাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, কভারভ্যান, সিএনজি ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায় কাগজপত্র ও লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চলাচল করলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলার সুযোগে দুর্বৃত্তরা রেজিষ্ট্রেশনবিহীন গাড়িতে সাংবাদিক, র্যাব, পুলিশ, ডাক্তার ও প্রেস লিখার বিভিন্ন স্টিকার লাগিয়ে উত্তরা এলাকায় চুরি ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই বিমানবন্দর মহাসড়কের উপর রিকসা ও ব্যাটারীচালিত তিন চাকার অটোরিকসা চলাচল করতে দেখা যায়। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকার মেইন রোডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সমনেই বেটারীচালিত অটোরিকসা ও অবৈধ লেগুনা সড়ক দখল করে যাত্রী উঠা নামা করে। উত্তরা ৭ নং সেক্টর সড়ক মুগ্ধ মঞ্চ, ১২- ১৩ মোড় হয়ে জমজম টাওয়ার মোড়, সিঙ্গার মোড়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ সড়ক এসব এলাকার ভয়াবহ অবস্থা। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেটারী চালিত অটোরিকসার যন্ত্রণায় সেখসনে হাটা চলা যায় না। যানজটের কবলে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহীরা ফুটপাতে উঠে যায়, এতে ভোগান্তি পরে পথচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে অনেক সময় লেগে যায় আধা ঘণ্টা। কারণ, প্রতিটি মোড়ে অন্তত পাঁচ থেকে দশটি বাস দাঁড়িয়ে থাকে যাত্রী তুলতে। ফুটওভার ব্রিজ ফাঁকা থাকলেও মানুষ নিচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে, বাসগুলো সেই সুযোগেই হঠাৎ থেমে যাত্রী নেয়। এমনভাবে প্রতিটি জায়গাই পরিণত হয়েছে অঘোষিত বাসস্টপে। মহাখালীর ডিওএইচএস এ থাকেন শামীমা আক্তার। কাজ করেন পল্টনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিন সকাল সাতটার মধ্যেই বাসে উঠতে হয় তাকে, অফিস শুরু হয় নয়টায়। তিনি বলেন, রাস্তার যা অবস্থা, সময় ধরে কিছু বলা যায় না। কখন যে বাস দাঁড়িয়ে যাবে, কেউ জানে না। কখনো আধাঘণ্টার পথ দেড় ঘণ্টায়ও পার হওয়া যায় না। অনেক দিন এমন হয়েছে, সময়মতো বের হয়েও অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে। মাথার ভেতর তখন টেনশন কাজ করে। তাই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হই। এই রুটে চলাচলকারী শরিফ বলেন, ফুটওভার ব্রিজ আছে, তাও মানুষ নিচ দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছে। মাঝখানে বাস থেমে যাত্রী তোলে, পেছনে অ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকে। আমি নিজে দেখেছি, রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে, আর বাসচালক চালাচ্ছেন নিজেদের নিয়মে। এ শহরে চলার কোনো শৃঙ্খলা নেই। যানজট এখন শুধু সময় নষ্ট নয়, এটা একটা মানসিক চাপ। রোজ ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি, যেন অফিস না, যুদ্ধ করে এসেছি। শুধু বাস থামানোর বিশৃঙ্খলাই নয়, ঢাকার রাস্তায় চলা বহু গণপরিবহনেরই নেই বৈধ ফিটনেস সনদ।
বিআরটিএ’র তথ্য বলছে, অন্তত ২০ শতাংশ বাস-মিনিবাস চলছে ফিটনেসবিহীনভাবে। এই গাড়িগুলোর একাংশ এত পুরনো যে, চলার সময় কাঁপে, হঠাৎ ব্রেক ফেল করে। রাজধানীর মিরপুর থেকে গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী একটি বাসের চালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা বেতন পাই না, দিনে যাত্রী যত তুলব, ইনকাম তত। রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী না তুললে মালিক বলে লস করছি। সব দোষ আমাদের ঘাড়ে চাপায়, কিন্তু যাত্রীও রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি না থামলে পেছনের বাস থামে। তিনি বলেন, এটা মালিকের দায়িত্ব। গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদের রোজগারও বন্ধ। শৃঙ্খলা দরকার, কিন্তু আগে আমাদের সিস্টেমটা ঠিক করা লাগবে। রাজধানী ছাড়িয়ে যানজটের ছায়া পড়েছে শহরতলীর দিকেও। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ বা সাভার থেকে ঢাকায় প্রবেশের মুখে প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত রিকসা। আইন অনুযায়ী এই যানগুলো মহাসড়কে চলতে পারার কথা নয়। আরেক বড় সমস্যা বাসগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। একই রুটে চলা একাধিক কোম্পানির বাস যাত্রী তুলতে গিয়ে রাস্তার মাঝেই শুরু করে রেষারেষি। অনেক সময় যাত্রী তোলার লড়াই প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সড়কে নেমে এসেছিল হাজারো শিক্ষার্থী। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাস্তবে রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। চালকেরা আজও কমিশনভিত্তিক বেতন পায় না, যাত্রী যত বেশি তুলবে, আয় তত বেশি। ফলে রাস্তায় তাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত লড়াই চলে কে আগে যাবে, কে বেশি যাত্রী তুলবে।
‘দি ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটে শুধু রাজধানীতে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। যানজটের কারণে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সামান্য দূরত্বের এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতেও মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় এখন অস্বাভাবিক মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। হাঁটার গতি আর যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি এখন প্রায় কাছাকাছি। তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলতে দেওয়া মানেই শহরের প্রতিটি মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। অথচ এই ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন লাখো মানুষ চলাফেরা করছে রাজধানীতে। এসব সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন সুস্পষ্ট নীতি, কার্যকর নজরদারি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। নইলে রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আসলে গণপরিবহনের মধ্যে পৃথিবীতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যানবাহন হচ্ছে বাস সার্ভিস। সবখানে বাস সার্ভিসের অগ্রাধিকার থাকে। কিন্তু ঢাকা শহরে কোনো ধরনের অগ্রাধিকার বা পরিকল্পনা নেই। এখন কথা বলতে হচ্ছে, সেই শহর নিয়ে যেখানে মেট্রো রেলের মতো একটি সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে সড়কের বাসগুলো সঠিক স্থানে নামে কি না, যাত্রী ছাউনিতে থামে কি না বা তার পুরো ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। শুধু এই কারণে যে, বিগত সরকারগুলো কোনো সরকারই আসলে সহজভাবে যেই সার্ভিসটাকে ডেভেলপমেন্ট করা যেত, সেটা নিয়ে কাজ করেনি। অথচ তারা চাইলেই মেট্রোর মতো বড় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া যেত, বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া যেত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে, দেশের সরকার পতন হয়, প্রশাসন পতন হয়, মন্ত্রী বদল হয়, সচিব বদল হয় কিন্তু এ বাসগুলোর চিত্র বদল হয় না, তাদের কাহিনি বদল হয় না। অনতিবিলম্বে দেশকে পরিবর্তন করতে হলে এ বাসগুলোর চেহারা পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের যে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলো আছে, সেগুলোর চরম ব্যর্থতা লক্ষ্য করছি। আমাদের যে রাষ্ট্রীয় পরিবহন ব্যবস্থাগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, পরিচালনার অযোগ্যতা, অদক্ষতা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এই সব কারণে আমরা যে বিষয়টি লক্ষ্য করি, তা হলো এই জটিলতাগুলোর কারণেই পরিবহনগুলো পাল্টানো যাচ্ছে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ