ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ছালড়া গ্রামে একটি অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারের ২ একর জমিসহ বন বিভাগের প্রায় ৩০ একর জমি জবরদখল করে মৎস্য খামার, টেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে সালাহউদ্দিন ও তার সহযোগী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। সরকারি আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। একটি অসহায় পরিবারের জমি জবর দখল করে তাদেরকে বিতারিত করার পাঁয়তারা করছে। ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের পক্ষে নব্বই বছর বয়সী আশরাফুন্নাহার তার দুই প্রতিবন্ধী ছেলে ও দুই প্রতিবন্ধী নাতিকে নিয়ে একমাত্র ছোট ছেলে আবু নাহিদ কর্মক্ষম ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
২০২২ সালে টেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক ঢাকা ক্যান্টমেন্ট এলাকায় শেখ সালাহউদ্দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে এখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আওয়ামী লীগ এমপি কেএম খালিদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ বিল্লাল হোসেন সরকার এর সহায়তায় এবং তার পার্টনার নেত্রকোনা বারহাট্টা এলাকার রেজোয়ান সিদ্দিক, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ, ঢাকার উত্তরা এলাকার এ এস বি মজুমদার রিংকু, লক্ষীপুরের এসএম জুবায়ের, খুলনা বাগের হাট মোড়লগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক হুমায়ুন কবির খান যোগসাজশে অসহায় আশরাফুন্নাহারের ছালড়া মৌজার প্রায় ২ একর জমি ১ গভীর নলকূপ, ২টি গোডাউন, ১টি হাফ বিল্ডিং অফিস, লেবার ঘর, তার বড় ছেলে রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে মৌখিকভাবে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকায় ভাড়া নেয়। কিছুদিন যাওয়ার পর রফিকুল ইসলাম মারা যান। এ সুযোগে শেখ সালাহউদ্দিন ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন। এবং জমিতে বেড়া দিয়ে পথ আটকিয়ে দেন। সেই সাথে উক্ত ভূমি খেকোর দলটি সরকারি বন বিভাগের প্রায় ৩০ একর জমি দখল করে নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ, মুরগির খামার স্থাপন করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কিন্তু বন বিভাগ অদৃশ্য কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে আশাফুন্নাহার ও তার পুত্র জমিতে গেলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করে মারা হবে বলে হুমকি দেন। তারা প্রকাশ্যে বলে বেড়ায় তারা শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের আত্মীয়। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে দেখা যায়, শেখ সালাহউদ্দিন, পিতা-আবু সাঈদ, ২৫/২, ৩য় তলা, রাস্তা নং-০৪, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তিনি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা তিনি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এএইচটি ইমাম তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তাই কেএম খালিদ, সংসদ সদস্য ময়মনসিংহ-৫ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্যকে মুক্তাগাছা ছালড়া গ্রামের অঞ্চলে ব্যবসা করার জন্য প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান দেওয়া হলো। চিঠির নিচের অংশে শেখ হাসিনার স্বাক্ষর সংবলিত। অন্যদিকে মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকার স্বাক্ষরিত এবং এমপি (সাবেক) কেএম খালিদ প্রতি স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দেন। তার প্রেক্ষিতে উক্ত সালাহউদ্দিন ধরাকে সরা জ্ঞান করে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এবং এইচ টি ইমাম এর পরিচয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এবং অসহায় ও প্রতিবন্ধী পরিবারের সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জবরদখল করে রেখেছে।
এ ব্যাপারে আশরাফুন্নাহার ও তার পরিবারের লোকজন বাদী হয়ে গত ০৫/০৩/২০২৪ ইং তারিখ সালাহউদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা নং-৫৫/২০২৪। উক্ত মামলা বিজ্ঞ আদালত বাদীদের জমিতে বিবাদীদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিবাদীরা আদালতের নিষেধ অমান্য করে জমি জবরদখল করে রাখে। ৩১/০৭/২০২৪ একই আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে স্থিতাবস্তা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিবাদীরা নোটিশ পাওয়ার পরেও আদালতের নির্দেশ অমান্য করেন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় তাদের বিরুদ্ধে ১৯/০৭/২০২৪ ইং তারিখ বাইলেশন মিসকেস নং-৩২/২০২৪ দাখিল করেন।
এদিকে ১৫/১০/২০২৪ ইং তারিখ মুক্তাগাছা থানার নন-এফআইআর মামলা নং-১১১/২০২৪ মামলায় বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে শেখ সালাহউদ্দিন গং আন্ডার টেকিং দিয়ে আসেন। কিন্তু তার পরেও বাদীকে জমিতে প্রবেশ করতে দেয় নাই। এর প্রেক্ষিতে বাদী আশরাফুন্নাহার ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং-৯২০, তাং-২৫/০৯/২০২৪। উক্ত আবেদনটি ডিআইজি অফিস থেকে মুক্তাগাছা থানাকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও পুলিশ কোন কাজ করেনি বলে শামছুন্নাহার জানান। ২৪/০৯/২০২৪ ইং তারিখ মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দিলে সেখানেও কোন কাজ হয়নি। জমির দখল করা নিয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা নং-২০০/২৫, ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩, ৪/৫/৭/২০ ধারা তৎসহ ৪০৬/ ৪২০/ ৪৬৫/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৫০৬/ ৩৪/১০৯ ধারায় মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তদন্তকালে পিবিআই মূল আসামী শেখ সালাহউদ্দিন হুমায়ুন কবির ও নায়েব বিলকিস আক্তারকে বাদ দিয়ে অন্যান্যদের নামে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। আশরাফুন্নাহারের দাবি মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ায় তিনি ন্যয় বিচার হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি তার প্রতিবন্ধী ছেলে ও নাতি নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আশরাফুন্নাহার জানান, সালাহউদ্দিন গত সরকারের আমলে শেখ হাসিনা, এইচ টি ইমাম, মুক্তাগাছার এমপি কেএম খালিদ, আওয়ামীালীগ নেতা বিল্লাল হোসেন সরকারসহ তাদের প্রভাব খাটিয়ে আমার মতো অসহায় মানুষদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে আমার জমি উদ্ধারসহ ন্যয় বিচার চাই। তিনি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায় হত্যার চেষ্টা মামলা রয়েছে এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। মামলা নং-১১, তারিখ-২০/১০/২০২৪ ইং। ধারা-১৪৭/ ১৪৮/ ১৪৯/ ৩০৭/ ৩২৬/ ১১৪/ ৩৪/ প্যানেল কোড-১৮৬০। এ ব্যাপারে শেখ সালাউদ্দিনের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, মুক্তাগাছা ছালড়া গ্রামে টেস্ট এগ্রো ইন্ডাসট্রি ও মাস পোলট্রি এন্ড ফিসারিজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালে স্থানীয় সাইদ নামে এক ভদ্রলোক কয়েকজন পার্টনার নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পদ্মা ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি টাকা এবং ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে পরবর্তীতে খেলাপি হন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালে ব্যবসা বর্ধিতকরণ পদ্ধতিতে আমাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য এগ্রিমেন্ট করেন। ২০২২ সালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে টেস্ট এগ্রো ইন্ডাসট্রি ও মাস পোলট্রি এন্ড ফিসারিজ দুটি হস্তান্তর করেন। এতে শর্ত থাকে যে, ৯ বছরে ব্যাংকের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা প্রতিষ্ঠান দুটি পরিচালনা করছি। আশরাফুন্নাহার গং বাদী হয়ে আমাদের নামে যে মামলা করেছে আমরা আইনিভাবে তা মোকাবেলা করছি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর পুকুর খননসহ অন্যান্য কাজ করার সময় তারা আমাদের কিছুই বলেনি। এখন তারা জমিসহ অন্যান্য সম্পদ দাবি করছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
