ঢাকা , শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫ , ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গৃহবধূ থেকে সফল রাজনীতিক চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবারহের উদ্বোধন আজ ‘আমি গৃহবন্দি’, জেডআই খান পান্নার ফেসবুক পোস্ট আজ শুভ জন্মাষ্টমী হঠাৎ আলোচনায় ‘তৃতীয় জোট’ মাইলস্টোন ট্রাজেডি: ২৪ দিন পর আরও এক শিক্ষিকার মৃত্যু চীনা বিনিয়োগে বড় বাধা কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রে বাজার বাড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ ‘ফ্যাসিবাদী’ হাসিনার অপরাধে বঙ্গবন্ধু হত্যা জায়েজ করা যায় না-বাংলাদেশ জাসদ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পরিকল্পিত অস্থিরতা শিক্ষা প্রশাসনে শর্তের লড়াইয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে নেত্রকোণায় ছাদ ধসে তিন শ্রমিক নিহত, আহত দুই নতুনরূপে সেজেছে উত্তরার মুগ্ধ মঞ্চ রাজবাড়ীতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, শঙ্কায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪১ বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত মুজিবনগরে মহিলাসহ মোট ৪ জনকে বিএসএফর পুশইন গৌরনদী বাস-কোচ কাউন্টার মালিক ও শ্রমিক সমিতি গঠন
দুই ধাপে ৪২টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে বসে বিএনপি

হঠাৎ আলোচনায় ‘তৃতীয় জোট’

  • আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ১০:০০:৫৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০৮-২০২৫ ১২:০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন
হঠাৎ আলোচনায় ‘তৃতীয় জোট’
* বিএনপির সঙ্গে আছে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দল ও ১২ দলীয় জোটসহ সমমনা দলগুলো
* বিএনপির সঙ্গে অতীতে আন্দোলনে যেমন ছিলাম, নির্বাচনেও আমরা একসঙ্গে থাকবো : মোস্তফা জামাল হায়দার


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। একইকথা জোরদিয়ে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে, বিলম্বের সুযোগ নেই। কোনো শক্তিই এই নির্বাচন বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না। তবে নির্বাচনী বৈতরনীতে জয়ী হতে এরইমধ্যে বিএনপি-জামায়াত এবং ইসলামী দলগুলো আলাদা আলাদা জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের বাইরে হঠাৎ আলোচনায় সাড়া ফেলেছে তৃতীয় জোট। মূলত বিএনপি-জামায়াতের বাইরে গঠন হতে যাওয়া জোটকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, তাহলে কী নির্বাচনের আগে আলাদাভাবে এনসিপি ও জোট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে! তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলো নিয়ে তৃতীয় জোট করতে পারে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের আগেই রাজনীতির মাঠে দৃশ্যমান দুটি জোট। এই দুই জোটে বিএনপির সঙ্গে আছে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দল ও ১২ দলীয় জোটসহ সমমনা দলগুলো। আর জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে হতে পারে আরেকটি জোট। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলো নিয়ে তৃতীয় জোট করতে পারে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। কয়েকদিন আগের বিএনপির শীর্ষ এক নেতার বক্তব্যে স্পষ্ট জামায়াত ও বিএনপির জোট হচ্ছে না আসন্ন নির্বাচনে। তবে এবার ধানের শীষের সঙ্গী কারা সেটির আভাস মিলেছে। সপ্তাহখানেক আগে দুই ধাপে ৪২টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে বসে বিএনপি। যেখানে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন ও পরবর্তীতে ঐকমত্যের জাতীয় সরকার গঠনের ইঙ্গিত দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এদিকে রাজনীতিক দলগুলোর নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা নিয়ে সরকারকে প্রতিবেদন দিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির নেতৃত্বে ১৯টি, জামায়াতে ইসলামীর নের্তৃত্বে ১১টি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কমপক্ষে ১৫টি দলের জোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক দুই সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া এবং জেনারেল (অব.) আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হকসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের দলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতারা যোগ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারাও হয়তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সাবেক এই দুই সেনাপ্রধান এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝেই তারা দল গঠনের দিকে এগোবেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন, সরকার গঠন সবকিছুতেই তার যে দীর্ঘদিনের যুগপৎ আন্দোলনের সাথী যারা আছেন, তাদের নিয়েই করবেন বলে তারেক রহমান আমাদের জানিয়েছেন। আমরা এটাই বিশ্বাস করতে চাই। এর মধ্যে ছয়টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চও রয়েছে বিএনপির জোটে। আর আগে থেকে ১২ দলীয় জোট তো আছেই। যারা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে ধানের শীষ নিয়ে। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, আমাদের বলেছেন যে আপনারা প্রস্তুতি নেন নির্বাচনের। অতীতে আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। জোটবদ্ধ নির্বাচন করবো, জোটবদ্ধ সরকার গঠন করবো। এটা উনি সবসময়ই বলছেন।
১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির সঙ্গে অতীতে আন্দোলনে যেমন ছিলাম, এই নির্বাচনেও আমরা একসঙ্গে থাকবো। বিএনপির যে প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। কতগুলো ছিট বা কিছু, সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়নি এখনও। তবে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে হতে পারে আরেকটি জোট। যেখানে থাকতে পারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও নেজামে ইসলামের মতো দলগুলো। মতপার্থক্য ভুলে ভোটের মাঠে এবার সংঘবদ্ধ শক্তি প্রদর্শনের অপেক্ষায় তারা।
এ বিষয়ে কথা হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এরসঙ্গে। তিনি বলেন, ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যে যে ছোটখাটো বিষয়ে মতপার্থক্য আছে এটা এখানে খুব একটা কার্যকর হবে না। তবে এসমস্ত বিষয়কে কোনো কোনো দল, কোনো কোনো গোষ্ঠী উস্কে দেয়ার চেষ্টা করবে। তারা এবার সুবিধা করতে পারবে না। একটা পোলারাইজেশন হবে। ইসলামের পক্ষের শক্তিটা একটা বড় রকমের শক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। তবে এ দুই জোটের সাথেই লিয়াজোঁ রয়েছে কোনো কোনো দলের। যারা জোটের বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করতে চায়। তবে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের স্পিরিটের জায়গাটা হচ্ছে যে, বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার জন্য আমাদের এককভাবে নির্বচনের দিকে গিয়ে যাওয়া। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর জোট বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীক জোটের মধ্যে যাওয়ার আমাদের চিন্তাভাবনা নাই। জাতীয় বোঝাপড়া ভিত্তিতে কোনো জোট হয় এবং যদি কোনো মেরুকরণ হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করবো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দৃশ্যমান দুই জোটের বাইরে হতে পারে আরেকটি জোট। যার নেতৃত্ব দেবে এনসিপি। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন যখন আসবে, তখন আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলব। আমরা দলগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করেছি। কিন্তু জোট গঠনের বিষয়ে আমরা কোনো ঘোষণা দিইনি। নির্বাচন এলে যদি প্রয়োজন হয় জোট হবে। প্রয়োজন না হলে হবে না। এটা নির্বাচন ঘনিয়ে এলে পরিষ্কার হবে। এখন সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা আপাতত দলগত প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনে প্রার্থী প্রস্তুত করছি। আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে নানা মেরূকরণ হবে। আমরা সেটিও বিবেচনায় রাখছি। যদি জোট গঠন করতেই হয়, সেক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলোকে নিয়েই আমরা জোট গঠন করব। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের দলের সঙ্গে আপনাদের জোট হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাব দেন জামায়াতের এ নেতা। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে ফ্যাসিজমবিরোধী আন্দোলন করেছি। তারা এখনো রাজনৈতিক দল গঠন করেনি। করার ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্ররা দেশপ্রেম থেকেই শেখ হাসিনার পতনে আন্দোলন করেছেন। আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। সুতরাং আগামীতে দেশ গঠনে যদি তাদের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমাদের জোট হতে পারে। আমরা রাজনৈতিক ঐক্য নিয়েই সামনে এগোতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আগামী নির্বাচনে আমরা কোন জোটে যুক্ত হয়ে নির্বাচন করব, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আমরা সিরিয়াস আলোচনা শুরু করিনি। ধর্মীয় দলের নেতৃত্বে কোনো জোট হলে সে জোটে যাব না, সেটা আমরা আগেই স্পষ্ট করে বলেছি। কারণ বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের কোনো দেশেই ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে যে জোট হয়েছে, সেগুলো নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারেনি। বরং উল্টোটা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ৩ টি রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে দুটি যদি জোটবদ্ধ হয়, তৃতীয় যে শক্তি সেও নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে একটা জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য যেন তাদের শক্তি কিছুটা বাড়ে। আবার এমনও হতে পারে, যারা বিএনপি জোটে যেত বা জামায়াতের জোটে যেত তাদের কেউ কেউ মিলে এনসিপির সঙ্গে মিলে একটা তৃতীয় জোট হতে পারে। আর রাতের ভোট ও আমি ডামি নির্বাচনের বৈধতা দেয়া দল জাতীয় পার্টির অবস্থান বরাবরের মতোই অস্পষ্ট।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স