
মশাবাহিত রোগে বাড়ছে মৃত্যু
- আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ১২:২১:১২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৫ ১২:২১:১২ অপরাহ্ন


মশাবাহিত রোগে দেশে লাশের সারি বাড়ছে। চলতি বছরে ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ১৯ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে দেশের প্রায় সব এলাকার জনগণ আক্রান্ত হচ্ছে। ইতিপূর্বে ডেঙ্গু রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা একযোগে সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। এডিস মশা থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ হলেও এবার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায়। মূলত দেশের সিংহভাগ এলাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার কাঠামো না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মশক নিধনে যদিও ঢাকার দুই সিটিসহ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় কমবেশি জনবল রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা না করায় সুফল মিলছে না। ফলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যত ব্যর্থ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশের ঢাকায় ২৫ বছর আগে প্রথম ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত এডিস মশা শনাক্ত হয়। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং ৯৩ জন মারা যান। শুরুতে পর্যাপ্তসংখ্যক কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হলেও স্বল্পসময়েই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে পরিচালিত হচ্ছে গতানুগতিক পদ্ধতিতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। ফলে বিগত বছরগুলোতে কোনো মৌসুমে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি ছিল, কোনো মৌসুমে কম ছিল। তবে সরকারের বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগের অভাব এবং পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধাপে ধাপে বেড়েছে এডিস মশার বিস্তার। মূলত মশক নিধনের কাজকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো গুরুত্ব না দেয়ায় এখনো দেশে পদ্ধতিগত কাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে বিগত দুই দশকের বেশি সময়ে এ দেশে শক্তভাবে জেঁকে বসেছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা।
সূত্র জানায়, ডেঙ্গুতে প্রতিবছরই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসসহ বহুবিধ রোগের বাহক এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার অবগত হলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় তা নিরসন হচ্ছে না। ফলে বিগত ২৫ বছরে এডিস মশার কামড়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন কয়েক হাজার মানুষ। আর অসুস্থ হয়ে কয়েক লাখ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাতে মানুষকে শারীরিক কষ্ট ভোগ করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয়ও নিজেদের গুনতে হয়েছে। যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই সরকার বহন করে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যয়। কিন্তু এদেশে একদিকে মেন সরকার মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয়ও বহন করছে না।
সূত্র আরো জানায়, সারা দেশে চলতি বছরের শুরু থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭০ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে নারী ৪৭.১ শতাংশ এবং পুরুষ ৫২.৯ শতাংশ। সিটি করপোরেশন এলাকার ভেতরে রোগী ৩৯ জন এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরের রোগী ৩১ জন। জানুয়ারি মাসে মারা গেছেন-১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চে মৃত্যু নেই, এপ্রিল মাসে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন, জুন মাসে ১৯ এবং চলতি জুলাই মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৮ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ১৮ হাজার ৬২৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী ৪১.৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৮.৬ শতাংশ। সিটি করপোরেশন এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ২০ জন। আর সিটি করপোরেশনের বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬০৫ জন।
এদিকে কীটতত্ত্ববিদদের মতে, এডিস মশার নিয়ন্ত্রণে কার্যত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাংলাদেশে ৫ থেকে ৬ মাস বর্ষাকাল। যে কারণে এখানে এডিস মশা বা এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হওয়ার কথা। কারণ ১০ থেকে ১১ মাস ধরে বর্ষা থাকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায়, সেখানেও তারা এডিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে। তাহলে বাংলাদেশেও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সেজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কাজগুলোর যথাযথভাবে বাস্তবায়ন দরকার। ওসব বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়ে সরকার একমত পোষণ করলেও কিছুই হচ্ছে না কাজের কাজ। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে কমবেশি জনবল থাকলেও মশক নিয়ন্ত্রণে তার বাইরের বিশাল এলাকায় কোনো জনবল নেই। সেক্ষেত্রে মশক নিবারণী পরিদপ্তরকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। পাশাপাশি সরকারকে অন্য বিকল্পও ভাবতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মতো আবহাওয়ার দেশগুলোতে এডিস মশার প্রজনন থাকাই স্বাভাবিক। আর সেজন্যই সিটি ও পৌর এলাকার বাইরের জনগণকেও এডিস মশার হাত থেকে বাঁচাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। যদিও দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভেরিয়্যান্ট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করা হয়েছে। তার মাধ্যমে ওই এডিস মশার ঘনত্বের আগাম ধারণা দেয়া যায়। ওই গবেষণাগার থেকে এখন পর্যন্ত যত আগাম তথ্য দেয়া হয়েছে, তার সবগুলোই সঠিক হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায়-স্বাস্থ্যকর্মী, ক্লিনার, মশককর্মী, সুপারভাইজার, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা থাকা প্রয়োজন। আর তাদের কাজ নির্ধারিত থাকবে। তবে ওসব কর্মী স্থায়ীভাবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই, আউটসোর্সিংয়েও করা যেতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত কীটনাশকের সংস্থান, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা জরুরি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার সচিবের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. শাহজাহান মিয়া জানান, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার বিভাগ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যে কারণে গত বছরের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের চিত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে সিটি ও পৌরসভার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণে জনবল কাঠামো নেই। যদিও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। তবে এটা টেকসই কোনো পদ্ধতি নয়। টেকসই পদ্ধতি একদিনে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সেজন্য সরকার ভাবছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ