ঢাকা , বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আইসিউতে রাখা হলো পরীমণির মেয়েকে সাংবাদিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনসহ পুলিশের ১৮ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত ১৬০ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা ২০০০ কোটি টাকা দেনা রেখে ৯৩৭ কোটির রেকর্ড মুনাফা দেখালো বিমান জমে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন মাছ রক্ষায় পরিবেশের প্রতি সদয় হোন পারভীন আকতার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি এর নতুন ডিএমডি রাজধানীতে লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেলচালক নিহত পুলিশের ওপর হামলা করে মাদক কারবারিকে ছিনতাই, আটক ৪ শ্রীপুরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে যুবকের মৃত্যু ৮ শতাধিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ওয়ালটন প্লাজার উত্তরা ও তুরাগে ডাকঘর আছে, সেবা নেই খুলনায় কৃষি ব্যাংক লুটের মূল হোতা গ্রেফতার আশিয়ান সিটির প্লট বিক্রি ও বিজ্ঞাপন বন্ধের নির্দেশ রাজউকের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ সাগরে ভাসতে থাকা ৮ জেলেসহ ফিশিং বোট উদ্ধার প্রবাসীদের অনলাইন ভোটার নিবন্ধন শুরুর দাবি এনসিপির সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ নতুন মামলায় গ্রেফতার ২ ধর্মীয় উপসনালয়কে যারা অপবিত্র করতে চায় তারা দুর্বৃত্তÑ ধর্ম উপদেষ্টা
দু’টি পোস্ট অফিসে জনবল রয়েছে মাত্র ২৪ জন

উত্তরা ও তুরাগে ডাকঘর আছে, সেবা নেই

  • আপলোড সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ০৩:০৭:১৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ০৩:০৭:১৩ অপরাহ্ন
উত্তরা ও তুরাগে ডাকঘর আছে, সেবা নেই
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন রাজধানীর অভিজাত ও জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নাম উত্তরা মডেল টাউন ও তুরাগ থানা এলাকাটি। ডাক বিভাগের সেবার জন্য অনেক আগেই পৃথক স্থানে ডাকঘর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ডাক বিভাগ থাকলেও সর্বস্তরের মানুষের গুণগত সেবার মানোন্নয়ন করা হয়নি। বর্তমানে ডাকঘর থাকলেও আশানুরূপ কিংবা সর্বসাধারণের প্রত্যাশিত সেবা নেই বললেই চলে। দেশে সরকার যায়, নতুন সরকার আসে কিন্তু ডাক অফিসের কোন পরিবর্তন এখনও লক্ষ্য করা যায়নি। উত্তরা মডেল টাউন পোস্ট অফিসে জনবল রয়েছে মাত্র ২৩ জন। আর তুরাগের ডিয়াবাড়ি (তারারটেক) এলাকায় সাব পোস্ট অফিসে আছে মাত্র একজন। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্রের। গতকাল সোমবার সকালে ও দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন, তথ্য অনুসন্ধান ও সেবা বঞ্চিত একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার তিন নম্বর সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠের দক্ষিণ পাশে উত্তরা মডেল টাউন ডাকঘর ও তুরাগের নিশাতনগর ভায়া ডিয়াবাড়ী তারারটেক এলাকায় শাহিনদের বাড়িতে পুরানো একটি ডাকঘরে রয়েছে। ডাকঘর গুলোতে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে চিঠি না পৌঁছানো, কর্মকর্তাদের উদাসীনত, বিভিন্ন অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি, গ্রাহক হয়রানি, চরম ভোগান্তিসহ নানাবিধ বিভিন্ন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ডাক বিভাগের সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা বলছেন। নামে মডেল ডাকঘর হলেও সেই সেকাল একাল পুরোনো রীতিতেই চলছে কার্যক্রম। ডাকঘরে ডিজিটাল সেবা চালু থাকলেও মানুষকে তেমন টানতে পারছে না। এ ব্যাপারে তেমন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ডাকঘরের বর্তমান সেবা সম্পর্কে মানুষ জানে না। এজন্য সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও কম। গতকাল সোমবার সকালে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৮নং রোডে অবস্থিত উত্তরা মডেল ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায়, ৩ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি কার্যালয়ের পশ্চিমপাড়ে গাছের ঝোঁপঝাঁড়ে অনেকটাই ঢাকা পড়ে আছে ডাকঘরের ভবন। খানিকটা দূর থেকে বোঝার কোন উপায় নেই, এটি একটি সরকারি অফিস ডাকঘর। ভবনে ঢুকতেই ফটকের ওপর উত্তরা মডেল ডাকঘর লেখা সম্বলিত ডাক বিভাগের লাল রঙ্গের সাইনবোর্ড নজরে পড়লো । এর নিচে দোকান পাটের মতো টেবিল গুলো পড়ে আছে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চেয়ারে বসা না থাকলেও কক্ষের ভেতরে ভ্যান ভ্যান করে ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা। উপরে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ির পড়ে আছে ঝাড়ু, পুরাতন টেবিল ও বস্তাভর্তি জিনিস পত্রের স্তূপ। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ৩ ও ৪ নম্বর ব্যাংকিং কাউন্টারে দু-একজন সেবা গ্রহীতা থাকলেও অন্যান্য কাউন্টার গুলোতে গ্রাহক একেবারেই শূন্য। ডাকঘরের ভেতর স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট স্টিকার প্রদর্শিত কাউন্টারটিও শূন্য হয়ে পড়ে আছে। এখানে অল্প কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর কয়েকজন সেবা প্রত্যাশী মানুষকে ডাকঘরে সেবা নিতে আসতে দেখা গেল। এসময় তারা এ প্রতিবেদককে বিভিন্ন সমস্যা ও অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। ভুক্তভোগী, সচেতন মহল ও সংশ্লিষ্টরা বলছে, প্রচারণার অভাবে দিনকে দিন গ্রাহক শূন্য হয়ে পড়ছে উত্তরা মডেল টাউন ডাকঘর। অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুলছে নগদের ব্যানার। পাশেই ডাকঘরের দেওয়াল ঘেঁষে ফুটপাত দখল করে চলছে জুতার দোকান। নিচতলায় পোস্টমাস্টারের থাকার জায়গা ও স্টোরেজ রুম। প্রাইজবন্ড সংগ্রহ করতে আসা ছদ্মনাম শাহীন ওরফে ইব্রাহিম নামের এক গ্রাহক অভিযোগ করে দৈনিক জনতাকে বলেন, কাউন্টারে সেবা নিতে গেলে শুধু অফিস স্টাফদেরকে খোশগল্প করতে ও আড্ডা দিতে দেখি। কার বাসায় কি হয়েছে, না হয়েছে এসব কথাবার্তা। স্টাফরা ঢিলেঢালা অফিস করছে। কাজের প্রতি কারও মনোযোগ নেই। গ্রাহকরা এসে তাদের কাক্সিক্ষত সঠিক সেবা পাচ্ছে কি না এব্যাপারে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, উত্তরার এই স্থানটিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ডাকঘর পরিচালিত হয়ে এলেও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এতদিনেও গড়ে ওঠেনি সেবার কাক্সিক্ষত পরিবেশ। অথচ সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে স্বল্প খরচে চিঠিপত্র আদান-প্রদান, জিইপি (গিফটেড এডুকেশন প্রোগ্রাম), ইএমএস (এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস), মানি অর্ডার, পার্সেল সার্ভিস, ডিপিপি (ভ্যালু পেবেল পোস্ট), ভিপিএল (ভ্যালু পেবেল লকার), ডাকটিকিট বিক্রয়, ডাকদ্রব্য গ্রহণ, প্রেরণ, বিলি, ডাক জীবনবীমা, সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র বিক্রয়-ভাঙানো, প্রাইজবন্ড, পোস্টাল অর্ডার বিক্রয় ও ভাঙ্গানোর মতো এজেন্সিভিত্তিক সার্ভিস চালু রয়েছে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে গ্রাহক অনুকূল পরিবেশ গড়ে না ওঠায় গ্রাহকদের মাঝে খুব বেশি সাড়া নেই। সেই সাথে ভোগান্তির পুরোনো অভিযোগ তো আছেই। উত্তরা মডেল টাউন ডাকঘরটিতে বর্তমানে আশানুরূপ সেবার পরিবেশ নেই জানিয়ে ছদ্মনাম মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে নুরুজ্জামান নামের অপর এক সেবাগ্রহীতা আজ দৈনিক জনতাকে বলেন, মডেল টাউন এলাকায় ডাকঘরের পরিবেশটা ততোটা উন্নত নয়, এটাকে আধুনিকায়ন করা দরকার। এখানে অনেক কিছুর অভাব রয়েছে। ইসমাঈল ও এরশাদুল নামে দু’জন সেবা গ্রহীতা অভিযোগ করে দৈনিক জনতাকে বলেন, আমি একটা চিঠি পাঠাতে আসছি। কিন্তু, দুপুর আড়াইটার পর নাকি এখানে কোন চিঠি জমা নেওয়া হয় না। নগদ কাউন্টারে সেবা নিতে এসে দেখি এখানে অ্যাপস কাজ করছে না। তাই আমি কোনো সেবা না পেয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি। অপরদিকে, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পোস্ট অফিসে গ্রাহক সেবা চালু থাকার কথা থাকলেও দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটের সময় ডাকঘর থেকে এক নারী পোস্টাল অপারেটরকে রিকশাযোগে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে তুরাগের চন্ডাল ভোগ গ্রামের স্হায়ী বাসিন্দা মো. মাসুদ রানা দৈনিক জনতাকে বলেন, আমাদের দিয়াবাড়ি তারারটেক গ্রামে শাহীনদের বাড়িতে অস্থায়ী একটি সাব পোস্ট অফিস রয়েছে। এখানে দেশ- বিদেশ থেকে চিঠিপত্র আদান প্রদান করা হয়। বিভিন্ন ডাক ও জরুরি কাগজপত্র ডেলিভারি দেয়া হয়ে থাকে। তবে, আমাদের মূল পোস্ট অফিস হলো নিশাত নগর। উত্তরা মডেল টাউন ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার মো. সাদরুল আমিন এসব অভিযোগের বিষয়গুলো অস্বীকার করে সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে এখানে যোগদান করেছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাকঘরে অনেকেই অনেক ধরনের সেবা নিতে আসেন। গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য আমি চেষ্টা করছি। অভিযোগগুলো কোথায় জানাতে হয় সেটা অনেক গ্রাহকই জানেন না। বর্তমানে ডাকঘরে কতজন জনবল রয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে সাদরুল আমিন আরো বলেন, আমিসহ ২৩ জন এখানে কাজ করছি । এব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসী ডাক বিভাগের সেবার মানোন্নয়ন ও প্রতিকার চেয়ে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উত্তরা-তুরাগ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য