ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বিএসএফ মহাপরিচালকের ব্যাখ্যায় দ্বিমত বিজিবির ডিজির ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন মৎস্য ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শিশু ধর্ষণ আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ সিলেটে পুকুর থেকে সাদাপাথর উদ্ধার ভোলাগঞ্জের পাথর লুট করে ১৫০০-২০০০ ব্যক্তি বাংলাভাষী লোকজনকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করতে দেব না- মমতা রোডম্যাপকে স্বাগত জানাই-জোনায়েদ সাকি ইসির রোডম্যাপে খুশি বিএনপি-মির্জা ফখরুল ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা মেসির জোড়া গোলে ফাইনালে ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে গ্রিমসবির কাছে হেরে বিদায় নিলো ম্যানইউ নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন হামজা ‘মুসলিম হওয়ার কারণে অনেকে আমাকে টার্গেট করেন’ ভারতের ২৬ বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ দেখছেন না শ্রীকান্ত নতুন ক্যাটাগোরিতে বেতন কত কমল বাবর-রিজওয়ানের? বড় ব্যবধানে হারলো সাকিবের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না: স্কট এডওয়ার্ডস রাকসু নির্বাচনের তফসিল ৩য় বারের মতো পুনর্বিন্যস্ত পিছিয়েছে ভোট জকসু নির্বাচনে বয়সসীমা থাকছে না

জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত জান্নাত-ই-নুর শোকজের রহস্য উন্মোচন

  • আপলোড সময় : ২৫-০৮-২০২৫ ০১:১০:৪৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০৮-২০২৫ ০১:১০:৪৬ অপরাহ্ন
জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত জান্নাত-ই-নুর শোকজের রহস্য উন্মোচন
জুলাই আন্দোলনের গত ১ বছরে প্রায়ই নানা তদন্তে বের হয়ে আসছে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর। তেমনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ-২, রাজশাহী। বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। এই বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে এই বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলিতে অনিয়ম। নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযম এর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আরিফ হোসেন। যিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রাজশাহীর মেডিকেলের সকল কাজের দায়িত্বশীল। রয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আরেক নেতা মো. কাওসার সরকার। যিনি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে মেডিকেলসহ সকল কাজের দায়িত্বশীল। এই ত্রি-রত্নের কারসাজিতে ঠিকাদার মো. তরিকুল ইসলাম শুভ’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সোবহান এন্ড ব্রাদ্রার্স ও মেসার্স উত্তরা বিল্ডার্স’ যার ব্যবসায়িক পার্টনার মো. কাওসার সরকার নিজে, এই ২টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও কাওসার সরকারের বোনজামাই মো. আতিক সহ এই পাঁচ জনের টিম অনেক কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযমের নিজ জেলা টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের অধীন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ কাজে জরিত থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চারলেন বিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কাজের বিদ্যমান স্থাপনা সমূহের মূল্য নির্ধারণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমান সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। পারিবারিকভাবে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের অনুগত ও আস্থাভাজন নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযম কিছুদিন আগে এমনই এক দুর্নীতি করতে গিয়ে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জান্নাত-ই-নূরকে অন্যায়ভাবে শোকজ করেন। জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত প্রকৌশলীকে শোকজ এর আসল রহস্য অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমন্বিত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট নির্মানের অধীন স্যানিটেশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন কাজের জন্য আনা মালামাল সমূহের ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে ব্র্যান্ড প্রস্তাবনা সরবরাহ না করেই গণপূর্ত বিভাগ-২ রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ইএম) জান্নাত-ই-নুর কে উক্ত মালামালের বিল দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয় মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তিনি দুইবার শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত ও একজন সৎ অফিসার হিসেবে অত্র অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পরিচিত। সার্বিক দিক বিবেচনায় ও রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতালের গুণগত মান সম্পন্ন সঠিক পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ইএম), রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর মতামত প্রদানের জন্য নোটশিট ইনিশিয়েট করেন, যা রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঢাকায় ইএম পি এন্ড ডি জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দফতরে প্রেরণ করলে নোটশিটের প্রতুত্তরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান যে, সরবরাহ করা আইটেমগুলো ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল সংশ্লিষ্ট নয়। তবুও তখন তাকে বিল না দেয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম, রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২, তার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কাওসার সরকার এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মিলে সকল সিভিল কাজের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করতে পারলেও ইএম উপ বিভাগের এই সৎ কর্মকর্তার কারণে পুর্নাঙ্গভাবে সিন্ডিকেটের কর্তৃত্ব স্থাপনে সমস্যা হওয়ায় এই ঘটনার নাটক মঞ্চস্থ করেন। উল্লেখিত প্রকৌশলীদের সবার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ব্যাপক দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বিগত সৈরাচারী সরকার ও দলের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযম, উপ সহকারি প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আরিফ হোসেন (ছাত্রলীগ সভাপতি) এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাওসার সরকার সম্মিলিতভাবে টাইলস, রং, কাঠের/পিভিসি/ডাব্লুপিসি দরজা সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানীর প্রতিনিধির সাথে যোগসাজস করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাদের নির্দেশিত প্রতিষ্ঠান/কোম্পানীর থেকে মালামাল নিতে বাধ্য করে আসছেন। এভাবেই নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারদের তারা কাজ পাইয়ে দেন। এদিকে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে লোক নিয়োগের নিয়ম থাকলেও তা কোনোভাবেই মানছেন না এই বিভাগের কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, মিস্ত্রী, প্ল্যাম্বার, এমএলএসএস, সুইপার সহ প্রায় ১০ জনের একটি টিমকে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তবে তাদেরকে যত্রতত্র বুঝিয়ে বড় বড় অংকের বিল বের করে তা নিজে আত্মসাৎ করেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এই তালিকায় মানিক নামে নির্বাহী প্রকৌশলীর এক ভবঘুরে শ্যালকও রয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের ব্যাপক গণবদলি চলছে। এই সুযোগে একটি চক্র ঢাকার মতো এলাকায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/সংস্কার ও নির্মান কাজের মতো স্থানে কিভাবে এবং কি কারণে পদায়ন করা হচ্ছে যা অনেকের কাছেই সন্দেহের। সম্প্রতি স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট সরকার দলের ও একটি বিশেষ ধর্মের কিছু চিহ্নিত কর্মমর্তাকে বলদির আদলে কার ইশারায় কি কারণে কি উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার মতো স্থানে পদায়ন করা হচ্ছে যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে ভুক্তভোগিদের অভিমত। বিশেষ করে প্রধান প্রকৌশলী গণপূর্ত অধিদফতর ঢাকার গত ৭ আগস্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) দ্বয়ের বদলির আদেশের ক্রমিক নম্বর : ৩ ও ৩৬ নং ক্রমিকের কর্মকর্তাদ্বয়ের ধর্ম, রাজনৈতিক পরিচয় ও সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বসহ দেখার জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। কারণ, তাদের মধ্যে একজন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে দায়ীত্ত্বে পদায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১, রাজশাহীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শ্রী কিশোর কুমার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সত্যজিৎ রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগি এবং মূলধারার আওয়ামী লীগার ও ইসকনের সক্রিয় সদস্য। বিশেষ করে সত্যজিৎ রায়ের মত ফ্যাসিস্টের দোসরকে সম্প্রতি সংসদ ভবনের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি করা মানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার বিশেষ কোনো ধাপ নয়তো। স্থানীয় ঠিকাদার সহ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যেহেতু তারা আওয়ামী দোসর ও সরাসরি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ করতেন, তাদের মাঝে এখনও সেই রাজনৈতিক অহমিকা বিদ্যমান। এছাড়া তারা দীর্ঘদিন একইস্থানে থাকার কারণে একটি অসাধু সার্কেল গড়ে তুলেছেন। যার ফলে স্থানীয় ঠিকাদাররা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের নিয়ে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর সকল সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা, স্থানীয় ঠিকাদার সহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই অতি দ্রুত তারা এই সমস্যার সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স