ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বিএসএফ মহাপরিচালকের ব্যাখ্যায় দ্বিমত বিজিবির ডিজির ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন মৎস্য ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শিশু ধর্ষণ আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ সিলেটে পুকুর থেকে সাদাপাথর উদ্ধার ভোলাগঞ্জের পাথর লুট করে ১৫০০-২০০০ ব্যক্তি বাংলাভাষী লোকজনকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করতে দেব না- মমতা রোডম্যাপকে স্বাগত জানাই-জোনায়েদ সাকি ইসির রোডম্যাপে খুশি বিএনপি-মির্জা ফখরুল ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা মেসির জোড়া গোলে ফাইনালে ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে গ্রিমসবির কাছে হেরে বিদায় নিলো ম্যানইউ নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন হামজা ‘মুসলিম হওয়ার কারণে অনেকে আমাকে টার্গেট করেন’ ভারতের ২৬ বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ দেখছেন না শ্রীকান্ত নতুন ক্যাটাগোরিতে বেতন কত কমল বাবর-রিজওয়ানের? বড় ব্যবধানে হারলো সাকিবের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না: স্কট এডওয়ার্ডস রাকসু নির্বাচনের তফসিল ৩য় বারের মতো পুনর্বিন্যস্ত পিছিয়েছে ভোট জকসু নির্বাচনে বয়সসীমা থাকছে না

পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে একমত নয় বাংলাদেশ

  • আপলোড সময় : ২৫-০৮-২০২৫ ০২:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০৮-২০২৫ ০২:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন
পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে একমত নয় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর ‘সমাধান দুইবার হয়ে যাওয়ার’ যে দাবি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার করেছেন, তার সঙ্গে একমত না হওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। গতকাল রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর ওই দাবি করে ইসহাক দার বলেন, “এই ইস্যুটির সমাধান আসলে দুইবার হয়েছে। “একবার ১৯৭৪ সালে, আবার ২০০০ এর শুরুর দিকে, যখন জেনারেল (পারভেজ) মোশাররফ এখানে এসেছিলেন। তিনি গোটা পাকিস্তান জাতির পক্ষ থেকে গোটা বাংলাদেশ জাতির উদ্দেশ্যে কথাটা বলেছিলেন।” তার এই বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশ একমত কি-না, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যাটা সমাধান হয়ে যেত তাদের মত করে, তাই না? “আমি তো বললাম আপনাকে যে, আমরা আমাদের অবস্থানটা বলেছি, উনারা উনাদের অবস্থানটা বলেছেন।” পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগের মধ্যে ঢাকা সফর করছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। দুদেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের আলোচনায় একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধ এবং আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফেরানোর অমীমাংসিত বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে ৩০ লাখ মানুষ নিহত এবং ৩ লাখ নারী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। অর্ধ শতক পরও পাকিস্তান ৩০ লাখ মানুষ হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেনি, রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমাও চায়নি। ২০০২ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মুশাররফ বাংলাদেশ সফরে এসে ওই ভূমিকার জন্য সাধারণভাবে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছিলেন কেবল। গত এপ্রিলে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানকে। গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও বিষয়টি তোলার কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তবে, সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকের পরপরই তাকে পাশের রেখে পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের দাবি করেন, অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান আগেই হয়ে গেছে। দুদেশের সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথাও তিনি বলেন। “অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে আপনার প্রশ্নৃ দেখুন, প্রিয় ভাই, ১৯৭৪ সালে ইস্যুটি লিখিতভাবে সমাধান হয়েছে। এই ডকুমেন্টটি ঐতিহাসিক এবং দুই দেশের কাছেই আছে। “আর তারপর, যখন জেনারেল মোশাররফ এখানে এসেছিলেন; খুব খোলামেলা এবং অকপটে তিনি এই ইস্যুটি তুলে ধরেছিলেন। এবং আমি মনে করি, পরিবারের মধ্যে, দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনো কিছুর একবার সমাধান হলে, সেটা হয়ে গেছে।” প্রায় ১৩ বছর পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি এবং আরও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ। দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার (বাসস ও এপিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সঙ্গে পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদের (আইএসএসআই) সহযোগিতার বিষয়ে হয়েছে সমঝোতা স্মারক। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বলেন, “আপনারা নিশ্চয় প্রত্যাশা করেন না যে ৫৪ বছরের সমস্যা, আজকের একদিনের মিটিংয়ে, যে মিটিংটা কত বছর, ১২-১৩ বছর পরে, ১৩ বছর পরে এবং তাও কিন্তু পূর্ববর্তী হিনা রব্বানী খারের মিটিং কিছু একটা দাওয়াত দেওয়ার জন্যৃ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। “কাজেই এখানে বসে এক ঘণ্টায় আমরা এটা সমাধান করে ফেলতে পারব, এটা আপনারা নিশ্চয় আশা করবেন না। কেউই আশা করবে না। আমরা পরস্পরের অবস্থানটা তুলে ধরেছি। আমি আপনাদেরকে এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা পরস্পরের অবস্থান তুলে ধরেছি।” অমীমাংসিত তিন বিষয় সমাধানে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করার বিষয়ে ‘একমত’ হওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা তিনটি বিষয়ে কিন্তু নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছি। দুই পক্ষই একটি বিষয় আমরা ঠিক করেছি যে, এই জিনিসগুলোকে আমাদেরকে সমাধান করতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে যাতে খুব স্মুদলি এগোতে পারে এজন্য এদেরকে পিছনে ফেলতে হবে। “এবং দুই পক্ষই এটুকু এগ্রি করেছি যে আমরা এ নিয়ে কথা বলব এবং চেষ্টা করব এই ইস্যুগুলি যেন আগামীতে বা কোনো এক পর্যায়ে, এক দিনে হয়ে যাবে না, এটা আমরা এটাও স্বীকার করেছি, ঝট করে আমরা একদিনে বসে এটা সমাধান করতে পারব না, ৫৪ বছরের ইস্যু।” তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা একমত হয়েছি যে, আমরা এটা নিয়ে কথা বলব আলাদাভাবে, এমনভাবেম যাতে করে এই জিনিসগুলোকে আমরা ফেলতে পারি। এছাড়া আমরা পরস্পর নিজেদের যে অবস্থানগুলো, সেগুলো আমরা ব্যক্ত করেছি।” অমীমাংসিত বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান একই রকম কি-না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “আনরিজলভড ইস্যুতে দুই দেশে তাদের নিজেদের অবস্থানটাই পুনর্ব্যক্ত করেছে।” তাহলে পাকিস্তান নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে একমত-এটা বলা যাবে কি-না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “না। আপনি এটা বলতে পারেন না। কারণ আমি কি বলেছিৃ ডোন্ট পুট ওয়ার্ডস ইন মাই মাউথ। সেটা হল যে, আমি বলেছি যে, নিজ নিজ অবস্থান ব্যক্ত করেছি। “শুধু একটি অগ্রগতি মনে করি আমি, ছোট্ট একটু, সেটা হল যে আমরা দুই পক্ষ একমত হয়েছি যে এই বিষয়গুলো আলোচনা করে সমাধান করা প্রয়োজন, যাতে করে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এগুলো বাধা হয়ে না আসে। না দুইপক্ষ এ ব্যাপারেও একমত হয়েছি যে, আমরা একদিনে বসে এটা সমাধান করে ফেলতে পারব না।” চীন ত্রিপক্ষীয় যে প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ নিয়েছে, সে কারণে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ধারাবাহিক বৈঠকগুলো হচ্ছে কি-না, এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে ‘না’। চীনের ওই উদ্যোগে তিন দেশের মধ্যে না রেখে পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশের দিক থেকে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা খুব সহজভাবে আমি আপনাদেরকে আগেও বলেছি। “সেটা হল, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক গত সরকারের আমলে, ইচ্ছাকৃতভাবে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আমি আপনাদেরকে আগেও বলেছি, এখন আবার বলছি, আমরা একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক চাই পাকিস্তানের সাথে, যেমন আমরা অন্যান্য বন্ধু দেশের সাথে চাই। ঠিক সেরকমই, এর চেয়ে বেশি কিছু না।” তিনি বলেন, “বেশি কিছু না মানে কিৃ আমাদের তো ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব দিকেই কথাবার্তা বলতে হবে, সেই হিসাবে সম্পর্কটা এগোচ্ছে। এটা ত্রিপক্ষীয় আলোচনার কারণে এগোচ্ছে অথবা সেটার কারণে এটা এগিয়ে যাচ্ছে সেটা কিন্তু মোটেই বিষয় না।” তিনটি বিষয়ে তুলের ধরার পর পাকিস্তান কী অবস্থান জানিয়েছে-এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “তাদের অবস্থান তাদেরকে যেটুকু জিজ্ঞেস করেছেন, তারা বলেছে- ওটুকুই। আমি সেটা কিছু বলতে চাই না।” বাংলাদেশের অবস্থানটা কী-এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা চাই যে, হিসাবপত্র হোক এবং আমাদের টাকাপয়সার যে ব্যাপার, সেটা সমাধান হোক। “আমরা চাই যে এই যে এখানে গণহত্যা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে তারা দুঃখ প্রকাশ করুক, মাফ চাক এবং আমরা চাই যে, যে আটকেপড়া মানুষগুলি আছে, তাদেরকে তারা ফেরত নিক।” আটকেপড়া মানুষদের ব্যাপারে অভ্যন্তরীণভাবে কিছু তথ্যের মুখোমুখি হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেটা হচ্ছে যে, আমাদের একটি হাই কোর্টের রায় আছে। এটা নিয়ে কিন্তু এখানে যারা হিউম্যান রাইটস নিয়ে কাজ করেন, তারা কিন্তু এটা নিয়ে বলছেন। এটা তার প্রেক্ষিতে দেখতে হবে আমাদের। “তো এটা নিয়ে আগামী দিনগুলোতে হয়ত আমরা বসব। ইন্টারনালি বসে সমস্যাটা সমাধান করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানের সাথে বিষয়টা এখনো (অমীমাংসিত)।” বৈঠকে ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কি-না, এ প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এ ধরনের স্পেসিফিকে আপনার না যাওয়া উচিত এখন। যেহেতু, আমি তো বলেছি যে, আমরা আমাদের অবস্থানটাকে তুলে ধরেছি। এটা আমার উপরে ছেড়ে দিন, এটুকু বিশ্বাস করেন যে, আমি বাংলাদেশের অবস্থান খুব শক্তভাবে ব্যক্ত করেছি।”

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স