ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বিএসএফ মহাপরিচালকের ব্যাখ্যায় দ্বিমত বিজিবির ডিজির ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন মৎস্য ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শিশু ধর্ষণ আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ সিলেটে পুকুর থেকে সাদাপাথর উদ্ধার ভোলাগঞ্জের পাথর লুট করে ১৫০০-২০০০ ব্যক্তি বাংলাভাষী লোকজনকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করতে দেব না- মমতা রোডম্যাপকে স্বাগত জানাই-জোনায়েদ সাকি ইসির রোডম্যাপে খুশি বিএনপি-মির্জা ফখরুল ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা মেসির জোড়া গোলে ফাইনালে ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে গ্রিমসবির কাছে হেরে বিদায় নিলো ম্যানইউ নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন হামজা ‘মুসলিম হওয়ার কারণে অনেকে আমাকে টার্গেট করেন’ ভারতের ২৬ বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ দেখছেন না শ্রীকান্ত নতুন ক্যাটাগোরিতে বেতন কত কমল বাবর-রিজওয়ানের? বড় ব্যবধানে হারলো সাকিবের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না: স্কট এডওয়ার্ডস রাকসু নির্বাচনের তফসিল ৩য় বারের মতো পুনর্বিন্যস্ত পিছিয়েছে ভোট জকসু নির্বাচনে বয়সসীমা থাকছে না
রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসে সমাবেশ

ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা

  • আপলোড সময় : ২৫-০৮-২০২৫ ১০:৫৪:১৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০৮-২০২৫ ১০:৫৪:১৬ অপরাহ্ন
ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা
* বাস্তুচ্যুত ও নিপীড়নে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা০েদর পথসভা, মিছিল
* মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে ফেরার আকুতি
* উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্পের ফুটবল খেলার মাঠে প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গার সমাবেশ


কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ পালন করেছে নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত ও নিপীড়নে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। গতকাল সোমবার সকালে উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্পের ফুটবল মাঠে প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা সমাবেশ করেন। পথসভা, মিছিল ও সমাবেশে রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটিতে ফেরার আকুতি তুলে ধরে আট বছর আগে তাদের ওপর চালানো বর্বর ‘গণহত্যার’ বিচারের দাবি জানান।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ও উগ্র রাখাইন গোষ্ঠীর নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট জন্মভিটা ছেড়ে পালিয়ে মানবঢলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ আগস্ট দিনটি ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। অতীতের মতো অষ্টম বর্ষ পালনে গতকাল সোমবার সকাল ৭টা থেকে উখিয়া-টেকনাফের অন্তত ১৫টি ক্যাম্পে মানববন্ধন, পথসভা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উখিয়ার মধুরছড়া ক্যাম্পের (ক্যাম্প-৪) ফুটবল মাঠে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ জড়ো হন।
ক্যাম্প-৯ এর ডি ব্লক, সাব-ব্লক সি-৬ এর বলি বাজার মাঠে সকালে মাস্টার সাদেক ও আরএসও নেতা মৌলভী মোহাম্মদ নূরের নেতৃত্বে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুফতি আনিস। এতে হেডমাঝি আবদুল আমিন, রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবায়ের, রহমত উল্লাহ, সাদেক হোসেন, আহমেদ, ইউসুফ, হেলাল (কায়ু মাইং), মোলভী বনি আমিন, নজিমুল্লাহ, মুফতি আনিস, মোলভী সাদেক, ক্যাম্প-৯ এর শমসু নূর এবং ক্যাম্প-১১ এর আরএসও সদস্য সায়েদুল আমিনসহ প্রভাবশালী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ইনানি সৈকত এলাকার বে-ওয়াচ হোটেলে চলমান রোহিঙ্গা সংলাপ নিয়ে দ্বিতীয় দিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আগমন উপলক্ষে সকাল ১০টার দিকে তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শেষ করা হয়। সমাবেশস্থলে দেখা যায়, নানা দাবি-সম্বলিত ফিতা মাথায় বেঁধে ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশে জড়ো হন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। কিছুক্ষণ পরপর মিছিল করে সমাবেশে নানা বয়সী মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়া স্বজনদের ছবিও নিয়ে আসেন অনেকে। প্ল্যাকার্ডগুলোতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধানের বিচার দাবি করা হয়।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ইতিহাসে এক কলঙ্কিত, ভয়াবহ এবং হৃদয়বিদারক দিন। এটি শুধু একটি তারিখ নয়, একটি বেদনাবিধুর স্মৃতি। আমাদের হাজারও সন্তান নৃশংস খুনের শিকার হয়েছে, অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, গৃহহীন হয়েছে লাখো পরিবার। আমরা এ দিনটিকে স্মরণ করি ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে। শোকের এ দিনে শুধু কান্না নয়, বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি।
রোহিঙ্গা নেতা হোসেন ইব্রাহিম বলেন, ?আট বছর আগের সেই গণহত্যার দৃশ্য রোহিঙ্গারা ভুলতে পারেননি। সেদিন চোখের সামনে সামরিক বাহিনী গুলি করে হাজারও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা নারীরা ধর্ষিত হয়েছেন। গুলিতে পঙ্গু হয়ে শত শত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার যে মামলা চলমান, তার প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
এদিকে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে স্থায়ী সমাধান ও বৈশ্বিক মঞ্চে সংকটকে তুলে ধরে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে সরকার চেষ্টা করছে।
সমস্যা সমাধানে সাত দফা প্রস্তাবনা ঘোষণা করে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের ভয়াবহ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সশস্ত্র ঘাতকদের থামানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ২০১৭ সালে এবং তারও আগে, সম্পদ এবং সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মিকে নিশ্চিত করতে হবে, যেন আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ না করে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মিজানুর রহমান বলেন, গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। রোহিঙ্গারা টেকসই-মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আইসিজে (আন্তর্জাতিক বিচার আদালত) এবং আইসিসিতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) যে বিচারকাজ চলমান, তার নিষ্পত্তি কামনা করেছেন। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে এক লাখ ২৪ হাজার এসেছে গত ১৮ মাসে। নিবন্ধিতদের বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা রয়েছেন। কিন্তু গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স