আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসন সীমানার পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তালিকা চূড়ান্তের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নির্বাচনী এলাকার সীমানায় যে পরিবর্তনআনা হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে কমপক্ষে ৪৬টি সংসদীয় আসনের ওপর। গত বৃহস্পতিবার সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর নতুন করে বিক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে বাগেরহাট, ফরিদপুর, পাবনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কয়েকটি জায়গায়।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ইসি যে গেজেট প্রকাশ করেছে, সেখানে বাগেরহাট থেকে একটি আসন কমানো হয়েছে, একটি আসন বাড়ানো হয়েছে গাজীপুরে। ইসি চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের গত দুই দিন বাগেরহাটে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আজ সোমবার থেকে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাগেরহাটের সব রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি।
এই আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা বলেছেন, সীমানা নিয়ে ইসি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে তারা মাঠের কর্মসূচির পাশাপাশি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তবে, সংবিধানের নির্দিষ্ট ধারার কথা উল্লেখ করে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, সাধারণত বড় কোনো আইনি ব্যত্যয় ছাড়া সীমানার গেজেট নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা বা রিট করা যায় না। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বশেষ ২০২৪ সালে যে সীমানায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার পতনের কারণে নতুন নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন কমিশন সীমানায় এই পরিবর্তন নতুন করে সংকট তৈরি করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিশেষায়িত কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শে গত ৩০ জুলাই ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে ইসি। গত মাসে ওই খসড়ার ওপর শুনানি শেষে নতুন সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
গত ৩০ জুলাই ইসি যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে ৩৯টি আসনের সীমায় আংশিক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তবে পরে দাবি-আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত তালিকায় পরিবর্তনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬টি আসনে। গত জুলাইয়ে প্রকাশিত খসড়া তালিকায় বাগেরহাট জেলার চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি আসন করা হয়। যেখানে বাগেরহাট-১ আসনের সীমানা অপরিবর্তিত রাখা হয়। বাগেরহাটের বাকি দুইটি আসনে নতুন করে একটি উপজেলা যুক্ত করে বাদ দেওয়া হয় বাগেরহাট-৪ আসনটি। যেখানে বাগেরহাট-২ আসনের সাথে যুক্ত করা হয় রামপাল, আর বাগেরহাট-৩ আসন তৈরি করা হয় মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলাকে নিয়ে। গত অগাস্টে এ নিয়ে ইসিতে শুনানিও অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত যে গেজেট প্রকাশ করা হয় সেখানে আরো বড় পরিবর্তন আনা হয়। মূলত শুনানি শেষে আরো বড় পরিবর্তন আনার পরই জেলাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়। ওইদিন তাৎক্ষণিক বিক্ষোভও হয়। যেখানে বাগেরহাট সদর উপজেলাকে যুক্ত করা হয় বাগেরহাট-১ আসনের সাথে। আর বাকি দুটি আসনেও আনা হয় বড় পরিবর্তন। ফলে অসন্তোষ দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মধ্যে।
গত শনিবার সকালেই বাগেরহাটে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ সব দলের প্রার্থীরা বৈঠকে বসে নতুন আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আগামী সোমবার থেকে টানা হরতাল, অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ সোমবার থেকে শুধুমাত্র পুলিশি থানা ও হাসপাতাল বাদ দিয়ে বাগেরহাটের সব প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সড়ক পথের পাশাপাশি অবরোধ ডাকা হয়েছে মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ রুটে। মোংলা বন্দর, ইপিজেডসহ বাগেরহাটের সাথে সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার কর্মসূচিও নিয়েছে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, আজ সোমবার থেকেই আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করছি। এর পাশাপাশি আমরা উচ্চ আদালতেও যাবো।
বাগেরহাটের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন যে, ইসি যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে বাগেরহাট থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে না কোনো দল। এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে শনিবারের বৈঠকে।
বাগেরহাটের সদর আসনের জামায়াতের প্রার্থী মঞ্জুরুল হক রাহাদ বলেন, যদি আগের সীমানায় ফেরত না যাওয়া হয়, তাহলে বাগেরহাটের কেউ আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবে না, এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে। হঠাৎ করে ৪২ বছর পর একটি আসন কমানো ও সীমানায় বড় পরিবর্তন আনার বিষয়টির পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। সীমানা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত গেজেটে ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার ৪৬টি আসনে ছোটবড় পরিবর্তন আনা হয়। এর মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনের (ভাঙ্গা সদরপুর চরভদ্রাসন) ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরদিন সকাল থেকে ফরিদপুর-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাছ ফেলে, বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। স্থানীয় প্রশাসন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়।
ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপি নেতা ও এই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছি। এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নাই। সীমানা পরিবর্তনের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ও বুধন্তি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে ইসি। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে ওই দুই ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এই জেলায়ও। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে শুক্রবার রাতে মশাল মিছিল, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে নানা ধরনের দাবি আপত্তি বা সুপারিশ জমা পড়ে। চলতি বছর সীমানার খসড়া প্রকাশের পর এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে কয়েকশ আবেদন জমা পড়ে। সেগুলো নিয়ে শুনানির পর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। কিন্তু এই গেজেট প্রকাশের পরই বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। হরতাল অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এই চাপ কিভাবে সামলাবে। কিংবা আইনি প্রতিকারের কোনো সুযোগ আছে কী না- সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকার জন্য আসন-বণ্টন সম্পর্কিত যে কোনো আইনের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। কিন্তু বাগেরহাটের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান দীপু বলেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, বিষয়টি এমন নয়। আমরা মামলা না করি, রিটতো করতে পারবো। রিটের শুনানি হতে পারে। আমরা মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি আদালতেও বিষয়টি নিয়ে লড়বো। একইভাবে এরই মধ্যে হাইকোর্টের রিটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ফরিদপুরের বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এক সময়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, গেজেটের আগে আপত্তি শুনানি হয়েছে। শুনানির পর গেজেট চূড়ান্ত হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সাধারণত আদালতে কোনো মামলা করা যায় না সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে হয়তো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে পারে। এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নোয়াখালীর একটি আসনের সীমানা নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের রিট হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওই আসনের রিটকারী আইনজীবী ছিলেন বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন। তবে রিট হলেও তখন রিটটির শুনানি আদালতে মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছিল সংবিধানের ১২৫ এর ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। মাত্র দেড় বছর আগে যে সীমানায় ভোট হয়েছে, সেটিতে এত বড় পরিবর্তন আনার পেছনে যুক্তি কী-এমন প্রশ্ন তুলে নির্বাচন বিশ্লেষক ও ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়তো করা যাবে না, কিন্তু সংক্ষুব্ধ কেউ রিট করলে সেই সুযোগ আছে। কোনো কোনো আসনের প্রার্থীরা বলছেন, খসড়া তালিকার নিষ্পত্তি না করে কোথাও কোথাও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে চূড়ান্ত গেজেটে। এটি নতুন করে সংকট তৈরি করেছে।
তবে আইনগতভাবে সংসদীয় সীমানা পরিবর্তনের আর সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তেলার কোনো সুযোগ নেই। বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না। গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ সীমানায় ভোট হবে এবার।
অপরদিকে, পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আসন পুনর্বহাল না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে বেড়ার সিএন্ডবি মোড়ে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিজামীপুত্র পাবনা-১ আসনের জামায়াতের প্রার্থী ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন ও জামায়াতের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন তারা। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধের ফলে সড়কের দু’পাশে যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এসময় ‘সীমানা বদল নয়, জনগণের অধিকার চায়’; ‘পাবনা-১ এর সীমানা কারো একক সম্পদ নয়’; ‘জনগণের কণ্ঠস্বর, দমিয়ে রাখা যাবে না’; ‘গণদাবি অমান্য হলে গণআন্দোলন’; ‘নির্বাচন কমিশনের অবৈধ গেজেট, মানি না মানবো না’; ‘বেড়া-সাঁথিয়ার বৈষম্য মানি না, মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এসময় অবরোধকারীরা বলেন, সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে পাবনা-১ আসনকে ভাগ করা হয়েছে। বেড়া উপজেলাকে পৃথক করে পাবনা-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বেড়া উপজেলার জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে সাঁথিয়ার সঙ্গে যুক্ত। অবরোধে নেতৃত্ব দেন বেড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান ফকির, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজেদুল ইসলাম বিপু, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন ইকবাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আকশেদ আলী প্রমুখ।
বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম হাবিবুল ইসলাম জানান, সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল লোকজন। এখন পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের অসন্তোষ জানিয়ে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ এর ব্যানারে উপজেলার লোকজন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়ে মহাসড়ক থেকে সরে যান তাঁরা। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এনসিপি, জামায়াতে ইসলামসহ উপজেলার বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন। তাদের মহাসড়ক অবরোধে যান চলাচল বন্ধ হয়ে মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুর থেকে বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েন দূরদূরান্তের যাত্রী, পথচারী ও সাধারণ মানুষ।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের ৩৭টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা (গেজেট) প্রকাশ করেছে। পুনর্নির্ধারিত চূড়ান্ত তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়ন দুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)-এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর-এ তিন ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সীমনা পুনর্নির্ধারণ করে ইসি একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে ২৪ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে শুনানি হয়। শুনানিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণের পক্ষে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রুমিন ফারহানা। বিপক্ষে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। শুনানিকালে রুমিন ফারহানার সঙ্গে হট্টগোল হয়। আসন পুনর্নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পর থেকে বেশ উচ্ছ্বসিত রুমিন ফারহানার অনুসারীরা। তারা আনন্দ উৎসব করছেন। তবে বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না বিরোধীরা।
উপজেলা সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আয়োজিত আজকের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে উপজেলার চান্দুরা এলাকায় বেলা সাড়ে ১০টায় জড়ো হন। সেখানে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিজয়নগরের দুটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের পরিবর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা মহাসড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে এবং সড়কের মাঝখানে দুটি ট্রাককে এলোমেলো করে দাঁড় করিয়ে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে যানজট সৃষ্টি হয়ে ওই মহাসড়কে ব্যাপক জনভোগান্তি নেমে এসেছে।
সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ দিনে-রাতে চলবে। এক ব্যক্তির স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমাদের দুর্ভোগে ফেলতে এ বিভাজন করা হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ ও অখণ্ড বিজয়নগর চাই। আমাদের আগের মতো সদরের সঙ্গে রাখতে হবে।
বিক্ষোভ-সমাবেশে জানানো হয়, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে প্রায় ৬০ হাজার ভোটার আছেন, যা উপজেলার একচতুর্থাংশ ভোটারের সমান। দুই লক্ষাধিক ভোটারবিশিষ্ট বিজয়নগর উপজেলা একক সংসদীয় আসনের উপযুক্ত হলেও বছরের পর বছর ধরে এটিকে একবার সদর, একবার সরাইল, আবার কখনো নাসিরনগরের সঙ্গে যুক্ত করে অবহেলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। বক্তারা জানান, তারা সরাইলে নয়, সদর উপজেলায় থাকতে চান। ঠিকানা যেমন আছে, তেমনই রাখতে হবে। বিজয়নগরকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা বন্ধের আহ্বান জানান তারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

সীমানা পরিবর্তনের আর সুযোগ নেই, আন্দোলন করে লাভ হবে না : ইসি আনোয়ারুল
নির্বাচনী সীমানা চূড়ান্তের পর বাড়ছে বিক্ষোভ-অসন্তোষ
- আপলোড সময় : ০৮-০৯-২০২৫ ০৭:০৯:১১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-০৯-২০২৫ ০৭:০৯:১১ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ