ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ভয়াবহ সহিংসতায় নিহত ২০ খেলাপি ঋণের অর্ধেকই উৎপাদনমুখী শিল্পে তিন বছরে দেশে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৯৫৫৫১ টাকা ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭৩ কুমিল্লায় ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার প্রযুক্তিনির্ভর বন নজরদারিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ- পরিবেশ উপদেষ্টা জয়পুরহাটে ৫ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ আরও এক হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বরিশালে ৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া বিদেশি জাহাজ উদ্ধার রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩ বিআরটিএ অফিসে দালাল চক্রের কাছে গ্রাহকরা জিম্মি রুয়েটে ক্লাস করতে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ এনআইডি সংশোধনের জটিল আবেদন শুনানি ব্যতীত সিদ্ধান্ত নয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরকে শেষ শ্রদ্ধা জলবায়ু মোকাবিলায় সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে- অর্থ উপদেষ্টা প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আজ উৎসব ও শঙ্কার ডাকসু নির্বাচন নির্বাচনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের জন্য ঐতিহাসিক পরীক্ষা : আইজিপি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
* ভোট গ্রহণের সময় সাংবাদিকদের চোখের সামনে রাখতে চান ঢাবি উপাচার্য * ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ, প্রবেশে কড়াকড়ি * ফেসবুকে সাইবার আক্রমণের অভিযোগ প্রার্থীদের

আজ উৎসব ও শঙ্কার ডাকসু নির্বাচন

  • আপলোড সময় : ০৮-০৯-২০২৫ ১০:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-০৯-২০২৫ ১০:৪৭:৫৮ অপরাহ্ন
আজ উৎসব ও শঙ্কার ডাকসু নির্বাচন
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হলের বাইরে আটটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। তবে প্রচুর রিপোর্ট মারা হচ্ছে, ফেসবুক আইডি গায়েব করার চেষ্টা চলছে এমন অভিযোগের শেষ নেই প্রার্থীদের। তাদের কেউ কেউ সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটার তার সুবিধাজনক সময়ে নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটকেন্দ্রে থাকা পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার তার পরিচয় নিশ্চিত করবেন। ভোটার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হলে তার লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন সিøপ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। পরিচয় নিশ্চিতের পর ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। ভোটর তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করবেন ভোটার। এরপর পোলিং অফিসারকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে। এদিন ব্যালট নিয়ে ভোটার প্রবেশ করবেন গোপন ভোটকক্ষে। ভোটকক্ষে মোবাইল ফোন বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। ব্যালট পেপার থেকে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর খুঁজে বের করবেন ভোটার। এরপর পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশের ঘরে স্পষ্টভাবে ক্রস চিহ্ন দেবেন ভোটার। খেয়াল রাখতে হবে, ক্রস চিহ্নটি যেন ঘরের বাইরে না যায়। পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদান শেষে ব্যালট বক্সে ব্যালট পেপার জমা দেবেন ভোটার। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের জন্য দুটি আলাদা ব্যালট বক্স থাকবে। ব্যালট পেপার ভাঁজ না করে সেগুলো নির্ধারিত বক্সে ফেলে ভোটার তার ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। ইতিমধ্যে ভোট দেওয়ার নিয়মকানুন ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছে চিফ রিটার্নিং অফিসারের অফিস। এই ভিডিওচিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোট প্রদানে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করতে তিনটি অনুষদ ও একটি ইনস্টিটিউটে সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব সভায়ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন ভোটারদের ভোটদান পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে, আর ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যারা ব্রেইল পড়তে পারেন না, তারা আরেকজনের সহযোগিতা নিয়ে অন্য সবার মতোই ভোট দিতে পারবেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিতে হল থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পেয়েছে কমিশন। তারা এবার ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট দিতে পারবেন। ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর।
ফেসবুকে সাইবার আক্রমণের অভিযোগ প্রার্থীদের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে নতুন নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এবার ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ অভিযোগ তুলেছে, তাদের একাধিক ফেসবুক প্রোফাইলে সাইবার আক্রমণ হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। প্যানেলের সহ সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার ভেরিফায়েড আইডি নাই হয়ে গেছে। প্রমাণাদি দিয়ে প্রাথমিকভাবে ফিরে পেলেও একটি পোস্ট করার পর আবারও ডিজেবল করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে আদৌ আইডি ফিরে পাব কি না জানি না। অথচ এই আইডিতে আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতাম, যেখানে প্রচুর রিচ হতো। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে আমাদের ওপর সাইবার আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর এমন ঘটনা বেদনাদায়ক। দীর্ঘ সংগ্রামের পর আমরা এ জায়গায় এসেছি। জীবনে কখনো শিক্ষার্থী অধিকার বা স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করিনি। তাই মিথ্যার শক্তিতে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না, সত্যের জয় হবেই। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আপনারা ভোটের মাধ্যমে জবাব দেবেন। প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানভীর বারী হামিম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের তিনজনের আইডিতে সাইবার আক্রমণ চালানো হয়েছে। এর পেছনে সুস্পষ্টভাবে পরাজয়ের আশঙ্কা কাজ করছে। আজ আইডি গায়েব হচ্ছে, কাল নির্বাচিত হলে তারা ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর আইডি ডিজেবল করে দেবে। আগে মানুষ গুম করা হতো, এখন হচ্ছে সাইবার গুম। আমি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাব যারা সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে, মঙ্গলবার ব্যালট অ্যাটাকের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে জবাব দিন। একই অভিযোগ করেছেন ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, রোববার রাত থেকে তার ফেসবুক আইডিতে ‘প্রচুর পরিমাণে রিপোর্ট মারা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ অভিযোগ করেছেন ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, অনেক প্রার্থীর আইডি অলরেডি গায়েব করে দেয়া হয়েছে। হল সংসদ কিংবা সেন্ট্রাল, যাদেরই প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছে, তাদের এভাবে রিপোর্ট মারা হচ্ছে। ওই পোস্টে উমামা ফাতেমা আরও লেখেন, ডাকসুর শুরু থেকেই আমার আইডিতে রিপোর্ট মেরে রিচ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আইডিটাও গায়েব করে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উমামা ফাতেমা লেখেন, এসব কারা করছেন ও কেন করছেন, তা আমরা সবাই জানি। আপনারা নেতৃত্বে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে কেমন নিরাপদ থাকবে, ভিন্নমতের মানুষেরা কীভাবে মতপ্রকাশ করবে, তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক সচেতন। এভাবে নোংরামি করে আর যাই হোক ভোটে জেতা যাবে না। মঙ্গলবার ডাকসু নির্বাচন। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের স্বতন্ত্র সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী শামিম হোসেনকে নির্বাচনি প্রচারণার জন্য বাংলাদেশ-কুয়েত-মৈত্রী হলে প্রজেকশন মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন। পোস্টে শামিম তার আবেদনপত্রের ছবি সংযুক্ত করে লিখেছেন, মৈত্রী হলে আমরা আবেদন করেও হল থেকে অনুমোদন পাইনি। ফলে যেতে পারিনি। আপুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এ বিষয়ে অভিযোগকারী শামিম হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ-কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ মাহবুবা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে এ ধরনের কোনো আবেদনপত্র জমা পড়েনি।
ডাকসু নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে মুসাদ্দিকের উদ্বেগ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আংশিক প্যানেলের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে মুসাদ্দিক বলেন, আগামীকাল ডাকসু নির্বাচন। রোববার থেকেই নিরাপত্তা বেষ্টনী করার কথা ছিল কিন্তু আমরা যথোপোযুক্ত নিরাপত্তা দেখছি না। নিরাপত্তা বেষ্টনী যতটুকু থাকার কথা ততটুকু নেই। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্ট দেখছি পাচ্ছি, যেখানে তারা বলছে আমাদের দলীয় নির্দেশনা পেয়েছি। সেই অনুযায়ী আমরা ক্যাম্পাসের চারপাশে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান করবো। তার মানে কী এটা নয় যে তারা ডাকসু বানচালের চেষ্টা করছে। অথচ, এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কোন কনসার্ন দেখছি না। আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ক্যাম্পাসের বাহিরে গিয়ে টাকা খরচ করে যে খাবার-দাবার খাওানো হয়, প্রশাসন সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি। তিনি বলেন, সাইবার অ্যাটাক ও বুলিং এর মাধ্যমে সবাই প্রোপাগন্ডা চালাচ্ছে ও শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। কারো কারো আইডি ডাউন করা হচ্ছে, তবে চাউর হচ্ছে কেউ কেউ নিজের আইডি নিজেরাই ডিজেবল করছে। প্রশাসনের সাইবার বুলিং এর প্রতি কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। শিক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে ফোন করে একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষে ভোট চাওয়া হচ্ছ। এই বিষয়টি নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি হুমকি। অনেক নারী শিক্ষার্থী তাদের শঙ্কার জায়গাটি প্রকাশ করেছেন।
ঢাবি মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে : ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে ঢাবি মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে। রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথও বন্ধ থাকবে। বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেবল প্রবেশ করতে পারবেন। এবারের নির্বাচন ঘিরে কিছু নাটকীয় ঘটনাও ঘটেছে। এক ভিপি প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভিপিপ্রার্থী মাসুম বিল্লাল শেষ সময়ে সরে গিয়ে বলেন, আমি আমার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আমি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছি। আমি জানি কর্মীর চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ। তবে কয়েকটি জরিপে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে অন্য প্রার্থীরা বলছেন, এসব জরিপ একপক্ষীয় এবং ভোটারদের প্রভাবিত করতে করা হয়েছে। ছাত্রলীগ এবার নিষিদ্ধ থাকায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এর ফলে নির্বাচনী পরিবেশ অন্য রকম হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর ডাকসু নির্বাচন হওয়ায় তাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। এদিন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সোমবার রাত ৮টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান হলের পকেট গেইট বন্ধ থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
নির্বাচনে সাংবাদিকদের চোখের সামনে রাখতে চান ঢাবি উপাচার্য : ডাকসু নির্বাচনের পুরো ব্যাপারটা সাংবাদিকদের চোখের সামনে রাখতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত এক আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য বলেন, সব জায়গাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটুকু সম্ভব সমন্বিতভাবে করার চেষ্টা করছি, কিন্তু সবচেয়ে আগে থাকবে আমাদের শিক্ষক, আমাদের প্রক্টোরিয়াল টিমের সদস্য, আমাদের সেচ্ছাসেবী, আমাদের বিএনসিসি, আমাদের রোভার স্কাউটের পরবর্তীতে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমরা পুরো ব্যাপারটা স্বচ্ছ রাখতে চাই। আমি মনে করি স্বচ্ছতাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৫ জন : চলতি বছরের ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৫ জন। এদের মধ্যে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন নারী ভোটার, যা মোট ভোটারের ৪৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এবার ৪৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)সহ মোট ২৮টি পদে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৮টি কেন্দ্রে বুথ সংখ্যা বাড়িয়ে ৮১০টি করা হয়েছে যাতে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন হয়। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রচারনার শেষদিনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল, শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, বাম-সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যসহ মোট ১০টি প্যানেল এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রান্তে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলেছেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু অস্ত্রোপচারের পর হুইলচেয়ারে বসে প্রচারে অংশ নেন, যা ভোটারদের মধ্যে আবেগ ছড়িয়েছে। তবে ডাকসু নির্বাচনের এবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নারী ভোটারদের সক্রিয়তা ও প্রভাব। ৫টি ছাত্রী হলে থাকা প্রায় ১৯ হাজার ভোটার কার পক্ষে রায় দেবেন, তা নির্ধারণে প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে নারী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ‘প্রজেকশন মিটিং’ করেছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যেসব ভোটার এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, তাদের ভোটই নির্বাচনের ফল নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখবে। রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, জিয়াউর রহমান হল, জগন্নাথ হল, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মতো বড় হলগুলোতে এসব ‘সুইং ভোটারদের’ দিকেই এখন নজর প্রার্থীদের।
হলভিত্তিক ভোটারের পরিসংখ্যান : ঢাবির ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে ছাত্রীদের হলগুলোতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার হচ্ছে-রোকেয়া হল : ৫,৬৬৫। সুফিয়া কামাল হল : ৪,৪৪৩। শামসুন নাহার হল : ৪,০৯৬। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল : ২,১১০। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল : ২,৬৪৫। ছাত্রদের হলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে-জগন্নাথ হল : ২,২২৫। শহীদ জহুরুল হক হল : ১,৯৬৩। বিজয় একাত্তর হল : ২,০৪৩। শহীদুল্লাহ হল : ২,০০৫। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি দখলমুক্ত, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই এখন ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্রধান প্রত্যাশা। এখন দেখার বিষয়, ভোটগ্রহণের দিন সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স