ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বাগেরহাটে ৪ সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে হরতাল যেদিন রাস্তায় নামবো, সেদিন বন্দুকও কিছু করতে পারবে না : কাদের সিদ্দিকী প্রার্থিতা ফিরে পেতে জুলিয়াস সিজারের করা রিট খারিজ ডেসকোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ গত এক মাসে ৭৫০ রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই-সেনাসদর ভিপি নুরের শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়নি-ঢামেক পরিচালক দরবারে হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না-অতিরিক্ত ডিআইজি ভিপি প্রার্থী শামীমকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ইলিয়াসের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নিরাপত্তাজনিত কোনো শঙ্কা নেই -ডিএমপি কমিশনার খালেদা জিয়ার নাম ভাঙিয়ে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা বদরুদ্দীন উমর বাহাত্তরের সংবিধানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন-নাহিদ ইসলাম এমন সংবিধানের স্বপ্ন দেখি যেখানে আর কোনো বোনকে কাঁদতে হবে না সারাদেশের পূজামণ্ডপ ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে থাকবে জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস-তারেক রহমান এবারও দুর্গাপূজায় ভারতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ ভয়াবহ সহিংসতায় নিহত ২০ খেলাপি ঋণের অর্ধেকই উৎপাদনমুখী শিল্পে তিন বছরে দেশে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৯৫৫৫১ টাকা ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭৩

বরিশালে ৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া বিদেশি জাহাজ উদ্ধার

  • আপলোড সময় : ০৯-০৯-২০২৫ ১২:৩১:৪৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৯-২০২৫ ১২:৩১:৪৪ পূর্বাহ্ন
বরিশালে ৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া বিদেশি জাহাজ উদ্ধার
বরিশালে ৩৩ বছর আগে ঝড়ের কবলে পড়ে বৈদ্যুতিক মালামাল নিয়ে ডুবে যাওয়া বিদেশি জাহাজটি অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়নের মিঠুয়া গ্রাম সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদী থেকে ইঞ্জিনসহ জাহাজের অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করেন শ্রমিকরা। উদ্ধারকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তেঁতুলিয়া নদীতে ৩৩ বছর আগে পণ্যবাহী ওই জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। দীর্ঘ সময়ে নদীর তলদেশে জাহাজ ডুবে যাওয়া স্থানে পলি জমে চর পড়ে যায়। এক যুগের বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর সেই চর খনন করে প্রায় ৭০ ফুট নিচ থেকে সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে বৈদ্যুতিক মালামাল নিয়ে খুলনার উদ্দেশে যাচ্ছিল ‘এমবি মোস্তাবি’ নামের জাপানি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ। মিঠুয়া গ্রাম সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ সেটি ডুবে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তখন সরকারি উদ্যোগে কিছু মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও জাহাজটিকে পানির নিচ থেকে তোলা সম্ভব হয়নি। এর আগে একাধিক উদ্ধারকারী দল জাহাজটি তোলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। সবশেষ উদ্ধারে নিলামের জন্য ২০০৫ সালে দরপত্র ডাকে বিআইডব্লিউটিএ। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ২০ লাখ টাকায় নিলাম পায় খুলনার ‘অগ্রণী ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আনসার উদ্দিন মারা যাওয়ার আগে কাজটি কিনে নেন সাব ঠিকাদার বরিশালের বাসিন্দা মো. ইউসুফ মিয়া। ইউসুফ মিয়া বলেন, ?২০১২ সাল থেকে কয়েক দফা জাহাজটি তোলার চেষ্টা করলেও উদ্ধার করতে পারিনি। চার মাস আগে আবার প্রায় পাঁচ একর জমি ও ৪৮ ফুট চর খনন করে এটি তোলা হয়। উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হয় তিনটি শক্তিশালী বিকে বার্জ (নদী বা সমুদ্রের অগভীর পানিতে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়), বিশেষ ধরনের ক্রেন, ডুবুরি ও আধুনিক প্রযুক্তি। শ্রমিক ছিলেন শতাধিক। উদ্ধার জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮০ ফুট, প্রস্থ ১৪ ফুট এবং উচ্চতা ১৭ ফুট। দামি যন্ত্রাংশের মধ্যে আছে ইঞ্জিনসহ অন্যান্য মালামাল। উপজেলার চর গোপালপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. মাসুদ বলেন, একসময় তেঁতুলিয়া নদীর ওই অংশ দিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করতো। নদীও উত্তাল ছিল। ১৯৯২ সালে জাহাজটি সেখানে ডুবে যায়। এরপর সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্ধারের চেষ্টা চলে। কিন্তু কোনোভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে জাহাজে থাকা কিছু বৈদ্যুতিক মালামাল উদ্ধার করা হয়েছিল আগেই। এরই মধ্যে ডুবে যাওয়া জাহাজের ওই অংশে চর পড়তে শুরু করে। ২০১২ সালের দিকে চর দৃশ্যমান হয়। এরপর থেকে সেখান দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি জোয়ার-ভাটা বাধাগ্রস্ত হয়ে পলি জমতে থাকে। সেইসঙ্গে চর জেগে ওঠে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১০ একরের বেশি জমিজুড়ে চর জাগে। সেগুলোতে মানুষের বসতি গড়ে ওঠে। প্রতিদিন বসতির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি সেখানকার বাসিন্দারা চরে চাষাবাদও শুরু করেন। ইতিমধ্যে পুরো জাহাজটি দৃশ্যমান হয়। পরে খণ্ড খণ্ড কেটে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের ধারণা ছিল, কোনোদিন তোলা সম্ভব হবে না। কিন্তু যারা কাজ করেছেন তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল। এক যুগ ধরে শ্রমিকরা ওই গ্রামে বাস করায় সেখানের বাসিন্দার মতো হয়ে গেছেন। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা হানিফ রাঢ়ী বলেন, এক যুগ আগে একটি দল এসে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছিল। তখন সরকারি লোকজনও ছিলেন। সম্ভবত ২০১২ সালের দিকে প্রথম খুঁড়লে জাহাজটি দৃশ্যমান হয়। পরে জাহাজের পুরো অংশ তুলতে প্রায় চার একর জমি খনন করেন তারা। এরপর কেটে কেটে জাহাজটি তোলা হয়। এর মধ্যে কিছু জিনিসে মরিচা ধরে গেছে। তবে বেশিরভাগ জিনিস অক্ষত অবস্থায় দেখছি আমরা। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজ উত্তোলনের কাজ করছেন খুলনার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান মৃধা। তিনি এই জাহাজ উদ্ধারের কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আব্দুল মান্নান বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে খননকাজ চালিয়ে কেটে কেটে জাহাজটি তোলা হয়। এই কাজে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। কয়েক দশক ধরে নদীর তলদেশে থাকার পরও জাহাজের রং প্রায় অক্ষুণ্ন আছে। কাঠামোর প্লেটগুলো এখনও মজবুত আছে। আমার কাছে জাহাজের দামি জিনিসের মধ্যে রয়েছে মেশিন। যার মূল্য ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু এখন ভাঙারি হিসেবে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে। এদিকে, পুরোনো জাহাজ তোলার খবর শুনে অনেকে দেখতে আসছেন। বরিশাল থেকে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, জাহাজটি তোলার খবর শুনে দেখতে এলাম। এর বেশিরভাগ জিনিসপত্র অক্ষত আছে। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, ‘যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে জাহাজটি উত্তোলন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখন এটি কেটে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো নৌযান ডুবে গেলে তা উদ্ধারে তিনবার চিঠি দেয় সংস্থাটি। এরপর কোনো সাড়া না পেলে নৌযানটিকে নিলামে তোলার বিধান আছে। বিআইডব্লিউটিএর সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের বরিশালের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল বাকী বলেন, মেহেন্দীগঞ্জে ডুবে যাওয়া নৌযানটি উদ্ধার করা হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স