ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর, তবে দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে নানা বিতর্ক, অভিযোগ ও বেদনাদায়ক ঘটনা। ভোর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা, আর ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলে সর্বপ্রথম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি দাবি করেন, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করেছেন। এরপর থেকেই আচরণবিধি ভঙ্গের আরও অভিযোগ সামনে আসে- মোটরসাইকেলে করে ভোটার পরিবহন, খাবার বিতরণ এবং কেন্দ্রের আশপাশে প্রচারণা চালানো, যা নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
দিনটির সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে কার্জন হলে। চ্যানেল এস-এর সাংবাদিক তরীকুল ইসলাম শিবলি সংবাদ সংগ্রহের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক মহল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি ঘটে আমর একুশে হলে। সেখানে ভোটগ্রহণের সময় এক ভোটারকে একসঙ্গে দুটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয়। এই অনিয়ম চোখে পড়তেই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। পরে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পোলিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এই ঘটনা ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে এবং সামাজিক মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের বাইরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ ওঠে। ভোটগ্রহণের সময় কেন্দ্রের আশপাশে প্রার্থীদের সমর্থকদের প্রচারণা চালাতে দেখা যায়, কেউ কেউ ভোটারদের কাছে প্রচারণামূলক সিøপ বিতরণ করছিলেন। নির্বাচন আইন অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজের মধ্যে কোনো প্রকার প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও অনেক জায়গায় এই নিয়ম মানা হয়নি। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ক্যাম্পাসজুড়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এদিন দুপুরের দিকে এফ রহমান হলে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে হঠাৎ করে উত্তেজনা দেখা দেয়। কয়েকজন সমর্থকের মধ্যে তর্কাতর্কি থেকে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উভয়পক্ষের সমর্থকরা সেøাগান দিতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়ও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম এগিয়ে আসে এবং উভয়পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। যদিও এই ঘটনা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। এছাড়া আরেকটি আলোচিত ঘটনা ঘটে সহকারী প্রক্টর ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের মধ্যে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে কথা বলার সময় তাদের মধ্যে বাকবিন্যাস হয়, যা দ্রুত তর্কে রূপ নেয়। ঘটনাস্থলে থাকা অন্যরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন, তবে এই মুহূর্তটিও সংবাদকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের নজর এড়ায়নি। পরে এই ঘটনাও ক্যাম্পাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। পুরো দিনজুড়ে এসব ঘটনার পাশাপাশি ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি এবং প্রথমবারের ভোটারদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক সাড়া তৈরি করলেও অনিয়ম, উত্তেজনা এবং বিতর্কিত মুহূর্তগুলো আজকের ডাকসু নির্বাচনের স্মৃতিতে থেকে যাবে। নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়ে। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, কিছু কেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়া হয়েছে এবং ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও প্রধান রিটার্নিং অফিসার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাসিম উদ্দিন সরকার জানান, সামগ্রিকভাবে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ঘটেনি। দিনভর ক্যাম্পাসে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল উৎসাহজনক। প্রথমবার ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ উচ্ছ্বাস দেখা যায়। অনেকে জানান, আগের নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও এবার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরে তারা আনন্দিত। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অশান্তি ও অভিযোগ-প্রতিবাদের কারণে শান্তিপূর্ণ ভোটের পাশাপাশি বিতর্কও সমানভাবে আলোচনায় ছিল। উৎসব, অভিযোগ ও শোকের মিশেলে শেষ হয় ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, দিনভর আলোচনা নানা ঘটনা
- আপলোড সময় : ১০-০৯-২০২৫ ০১:২৭:৩২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৯-২০২৫ ০১:২৭:৩২ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ