ঢাকা , শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বিশ্বকাপের টিকেট না পাওয়ায় বরখাস্ত হলো ভেনেজুয়েলা ও পেরুর কোচ বিশ্বকাপের টিকিটের জন্য ২৪ ঘণ্টায় জমা পড়লো দেড় মিলিয়ন আবেদন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা হিজাব পরায় হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন উসমান খাজার মা! প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছেনা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট অর্ধশত উইকেটের ক্লাবে পা রাখলেন রিশাদ জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করলো টাইগাররা আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লংকানদের মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা সচিব পদের ১২ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ভোটগ্রহণ ইয়াকুবের পেটে গুলি লেগে বেরিয়ে যায় ভুঁড়ি প্রাণ হারান ইসমামুলও সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়লো অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান নিয়ে ঐকমত্য হয়নি প্রেসিডেন্টের আশ্বাস ট্রাম্প-মোদীর সম্পর্কের বরফ গলছে ঢাকায় ১৯ মি.মি বৃষ্টি জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা টেকনাফের জলসীমায় হঠাৎ বেপরোয়া আরাকান আর্মি বেকারত্বের শীর্ষে ঢাকা ২য় স্থানে চট্টগ্রাম পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা
জামায়াতের নতুন প্রস্তাব

চার সুপারিশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে

  • আপলোড সময় : ১২-০৯-২০২৫ ০৬:৫২:২০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৯-২০২৫ ০৬:৫২:২০ অপরাহ্ন
চার সুপারিশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে
* জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোকে চার উপায়ে বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সেগুলো হলো– অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।
* দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সুপারিশ করে


জুলাই জাতীয় সনদ চারটি উপায়ে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন; এর মধ্যে দুটি সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এসেছে। জামায়াতে ইসলামীর তরফে নতুন একটি প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলেছেন দলটির নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হওয়ার পর প্রস্তাব তুলে ধরে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে আসা ছয়টি প্রস্তাব হল- ১. পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তার কিছু অংশ নিয়ে গণভোট। ২. রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা বলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন। ৩. নির্বাচনের মধ্যে একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থা গ্রহণ। ৪. ত্রয়োদশ সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বাস্তবায়ন। ৫. সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা রূপে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা। ৬. সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে মতামত চাওয়া যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা।
অপর দিকে বিশেষজ্ঞ প্যানেল একাধিক বৈঠকে বিভিন্ন ধরণের বিকল্প বিবেচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্যে সুপারিশ করে; এগুলো হচ্ছে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ এবং ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া। পরে বিস্তারিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিষয়সমূহকে (যার মধ্যে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট আছে) চারভাবে বাস্তবায়নের জন্যে পরামর্শ দিয়েছেন বিশষেজ্ঞরা। এই চারটি উপায় হচ্ছে- অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।
এর বাইরে আরো একটি প্রস্তাব তুলে ধরে সমর্থন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বৈঠকের বিরতিতে বের হয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চারটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। “আশা করি, এই পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা কাছাকাছি আসতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।” জামায়াতের দেওয়া প্রস্তাব প্রসঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া দলটির প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “আমরা একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি। অর্থাৎ ঐক্যমত্য কমিশন যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছে, এর মধ্যে যে বিষয়গুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেগুলোকে একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সংবিধানের উপরে প্রাধান্য দেওয়া। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে, তেমনি থাকবে। “৫ আগস্ট জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বাস্তবায়ন করার জন্যই সকল আলোচনা চলছে। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন কোনো সংবিধান ছিল না, যখন দেশে কোনো সরকার ছিল না, বিচার বিভাগ ছিল না- সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী এই সময়ে জনগণের ইচ্ছা কার্যকর ছিল।” তার মতে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী, জনগণের ইচ্ছার যে চরম বহিঃপ্রকাশ, এই বহিঃপ্রকাশকে একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া হলে আগামী নির্বাচন জুলাই সনদের অধীনে হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকবে না। শিশির মনির বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর সরকার ব্যবস্থায় সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুসরণ করার সুযোগ না থাকায় সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে ৫৭টি অনুচ্ছেদ ইতোমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে। “এজন্য আমরা বলেছি, একটি নতুন সাংবিধানিক আদেশ জারি করার জন্য। একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে আগামীতে সংবিধানের উপরে বিশেষ সাংবিধানিক আইনকে প্রাধান্য দিয়ে ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর দেখাতে।” তাহের বলেন, “গণভোটের প্রস্তাবকে বিকল্প হিসেবে রেখেছি। বিশেষ সাংবিধানিক আইন জারির প্রস্তাবের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোটের মাধ্যমে হবে।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা বলেছি, এই সরকার বর্তমান সংবিধান অনুসরণ করে গঠন করা হয়েছে। তাই বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সাংবিধানিক কোনো বিষয়ের ব্যপারে সংসদ ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নাই। এমন কি গণভোট করাও সম্ভব না, গণভোট করতে হলে সেখানে সংসদে সংবিধানে পরিবর্তন এনে পরে করতে হবে। “এর বাইরে কিছু কিছু বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা যেতে পারে। আর আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবো যদি অঙ্গীকার নেওয়া হয় যে আগামী সসদে গিয়ে আমরা এগুলো বাস্তবায়ন করবো, আর যেসব বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা মত সেগুলো করা হবে। পুরো জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার সুযোগ নেই।” ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ দুইটি প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলো অধ্যাদেশ জারি করে এবং নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেগুলো সরকার ঠিক করবে এবং বাস্তবায়ন করবে। বৈঠকে সিপিবি ছাড়া ২৯ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা আগামী রোববারও চলবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা। তার আগে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর তারা জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তার ভাষায়, “সনদ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা কমিশনের কাছে নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন সরকারকে জানাতে পারে।” জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া হলেও সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাস্তবায়নের উপায় কী হবে তা নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে এক জায়গায় আনতে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় দফার এই বৈঠক। দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, “সর্বশেষ আলোচনায় নোট অফ ডিসেন্টসহ কিছু কিছু জায়গায় আমরা একমাত্র হতে পেরেছিলাম। তার একটি খসড়া আমরা আপনাদের দিয়েছিলাম, আপনারা মতামত দিয়েছেন। অঙ্গীকারনামার বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। আশা করছি চূড়ান্ত খড়সা বিকাল নাগাদ পৌঁছে দেওয়া যাবে।” তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল করে আমরা একাধিকবার আলোচনা করেছি। এই প্যানেলে দুইজন সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী, একজন আইনের শিক্ষক ছিলেন। “প্যানেলে আলোচনার এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে যোগ দিতে বলেছিলাম, তিনি যোগ দিয়েছিলেন। আইন উপদেষ্টা একটা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে বুঝতে পেরেছি, জুলাই সনদের কিছু কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে।” আলী রীয়াজ বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবের নিয়ে আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাচ্ছি না। জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেব না। আমরা চাচ্ছি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এবং দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সরকারকের কাছে সুপারিশ করতে।” এর আগে দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে ঐকমত্য কশিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কমিশন ওই দফার আলোচান শেষেই জুলাই সনদে স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শেষ করবে। তবে তা হয়নি। সবশেষ জুলাই সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে মতামতের জন্য ২২ অগাস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরপরই এ নিয়ে আবার দলগুলোর ভিন্ন মতের খবর আসে। সেসব সমন্বয় করে চূড়ান্ত খসড়া গতকাল বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোকে সই করার জন্য দেওয়ার কথা। সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা বহুল আলোচিত এ সনদে সই করবেন।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স