* পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা বিক্ষোভকারীদের
* ছবি ও ভিডিও ধারণের সময় সাংবাদিকদের বাধা
* পুলিশ ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত
সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা। বিক্ষোভ থেকে পরিণত হয়েছে সহিংসতায়। ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন দফতর, নির্বাচন কার্যালয় ও থানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এসময় উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দফতর ও থানা পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া খেয়ে মসজিদে আশ্রয় নেন পুলিশ সদস্যরা। এসময় মসজিদেও হামলা চালান বিক্ষুব্ধ জনতা। এসব ঘটনা ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে সাংবাদিকদের বাধা দেন বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে উত্তাল ভাঙ্গা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যেই হঠাৎ করে সড়ক-মহাসড়কে নেমে আসেন হাজার হাজার জনতা। মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে রাস্তায় নেমে আসার ঘোষণা দিয়ে দুটি মহাসড়কে অন্তত ছয়টি এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় সব রুটের যান চলাচল। আটকে পড়ে অসংখ্য যানবাহন। একপর্যায়ে মুখোমুখি অবস্থান নিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অবরোধকারীদের। শত শত বিক্ষুব্ধ জনতা সড়কের ওপর বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে অবরোধ অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কয়েক হাজার জনতা লাঠিসোঁটা, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। এর কিছুক্ষণ পরই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান তারা। এসময় ১০-১২ জন আর্মড পুলিশের সদস্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। উত্তেজিত জনতার ইটপাটকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। পরে কিছু সময় তাদের ঘিরে রাখেন তারা। একপর্যায়ে মাদরাসা ও মসজিদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করেন। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভকারীরা থানার দিকে চলে যান। এক পর্যায়ে থানায় থাকা গাড়ি ও থানা কার্যালয় ভাঙচুর করেন। ভেতরে আটকা পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয় মোটরসাইকেলে। এরপর হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন মাইটিভির ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি সরোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন। গতকাল সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে অবস্থান নিলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় হঠাৎ করেই বিভিন্ন স্থানে জড়ো হন এলাকাবাসী।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে। আমরা দ্রুত প্রতিবেদন দিলে আশা করি দু-একদিনের মধ্যে একটা সমাধান হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসে ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়নকে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ আসনে সংযুক্ত করা হয়। এর পরেই তিন দফায় গত পাঁচ দিন ভাঙ্গায় দুটি মহাসড়ক, দুটি রেলপথ ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষ। গত শনিবার তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ঘোষণাকারী সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপরাধে গত রোববার রাতে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে পুলিশ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
