
‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলায় শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করেছিলেন-জবানবন্দিতে নাহিদ
- আপলোড সময় : ১৮-০৯-২০২৫ ১২:৩৭:৫৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৯-২০২৫ ১২:৩৭:৫৬ অপরাহ্ন


তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যায়িত করায় সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করেছিলেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় গতকাল বুধবার ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি পেশ করার সময় তিনি এ কথা বলেন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ এবং ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ অভিহিত করে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা দেওয়া হয়। কারণ, তারা সবসময় দেখেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। তিনি বলেন, ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা অপমানিত বোধ করেন। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এ মামলায় গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আংশিক জবানবন্দি দেন নাহিদ ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার আবার তার জবানবন্দি গ্রহণ করার কথা রয়েছে। জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এর পরের দিন আমরা দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেই। ওইদিন (১৬ জুলাই) পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। এছাড়া চট্টগ্রামের ওয়াসিমসহ সারাদেশে ছয়জন শহীদ হন। ১৭ জুলাই ডিজিএফআই বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এনসিপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, গত বছরের ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তাদের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন (১৮ জুলাই) সারাদেশে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান। সেদিন সারাদেশে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। সেদিন রাতে সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। জবানবন্দিতে নাহিদ বলেন, ১৯ জুলাই তারা বুঝতে পারেন সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। তাদের আন্দোলনের ও হতাহতদের কোনো খবর কোনো মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছিল না। এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে মামলার ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দির জেরা শেষ করা হয়। গত সোম ও গত মঙ্গলবারও তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নাহিদ ইসলামের জবানবন্দির মাধ্যমে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সাক্ষী উপস্থাপন শেষ হবে। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। এর মধ্য দিয়ে মামলার শুনানি সমাপ্তির দিকে যাবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ