
আমেরিকায় এমন সহিংসতার স্থান নেই, এটা ক্ষমা করা যায় না : বাইডেন ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা, হামলাকারী তার দলেরই ভোটার ছিলেন হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনী প্রচারণায় রক্তাক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প


জনতা ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারনায় বন্দুক হামলার ঘটনায় একজন নিহত। ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেছে। তবে, তার প্রচারাভিযান দলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপদ আছেন তিনি। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার শহরে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারী নিজেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছিল এবং এটি ছিল একটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা।
আগামী নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের প্রচারে শনিবার বাটলার শহরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে শোভযাত্রা শেষে অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দিতে ওঠেন তিনি।
তার এই কর্মসূচির লাইভ ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি কথা বলা শুরু করা মাত্র পরপর একাধিক গুলির আওয়াজ উঠল এবং তিনি তার ডান হাত দিয়ে ডান দিকের কান চেপে ধরলেন। প্রায় এক মিনিট পর তিনি যখন হাত নামালেন, তখন তার কান ও মুখে রক্ত দেখা গেছে। এ সময় মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে কয়েকবার ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’-সেøাগানও দিয়েছেন তিনি। অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার জন্য যখন উঠেছিলেন ট্রাম্প তখন তার মাথায় ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ সেøাগান সম্বলিত লাল ক্যাপ ছিল। তবে গুলির প্রায় এক মিনিট পর যখন তাকে ফের দেখা গেল, সে সময় তার মাথায় ক্যাপ ছিলো না। আশেপাশে থাকা গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অবশ্য গুলির আওয়াজের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ঘিরে ধরেছিলেন। সে সময়ও হাত উঁচিয়ে সেøাগান দিচ্ছিলেন তিনি।
বাটলার শহরের প্রধান আইন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, টানা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে আততায়ী। এতে ট্রাম্পের সঙ্গে থাকা তার এক সমর্থক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন এবং আরেক জন হয়েছেন গুরুতর আহত। এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, মঞ্চের কাছাকাছি একটি ভবনের কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে এবং তিনি গুলির পর আততায়ীকে ওই ছাদ ত্যাগ করতে দেখেছেন। তবে তিনি সঠিক বলছেন কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
হামলাকারী আততায়ীও ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাতে খুন হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলাকারীকে টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও আহত করার পর অভিযুক্ত ওই হামলাকারী মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। মার্কিন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে গতকাল রোববার নিজেদের লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল। স্থানীয় সময় গত শনিবার পেনসিলভানিয়ায় একটি সমাবেশে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে এই হামলা হয়। এই হামলাকে মার্কিন রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-ও আনুষ্ঠানিকভাবে হামলাকারীর নাম টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস বলে জানিয়েছে। পেনসিলভানিয়ার বেথেল পার্কের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী এই যুবক সমাবেশের মঞ্চ থেকে ১৩০ গজ দূরে একটি ভবনের ছাদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে কমপক্ষে আটটি গুলি ছুড়েছেন। মূলত ২০ বছর বয়সী এই বন্দুকধারীই গত শনিবার পেনসিলভানিয়ার সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টায় গুলি করে আহত করে। সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হাজার হাজার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার সময় ১৩০ গজ দূরে একটি ভবনের ছাদ থেকে এআর রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণ করে হামলাকারী। সঙ্গে সঙ্গে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট নিচে লুটিয়ে পড়ে নিজেকে আড়াল করেন। এসময় সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা তার পাশেই ছিলেন। এরপর তাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রাম্পকে যখন ধরে স্টেজ থেকে নামানো হচ্ছে, সেই সময়ই কানের পাশ, গালে রক্ত লক্ষ্য করা যায়। স্টেজ থেকে নামার সময় হাত উঁচিয়ে, মুঠো করে হার না মানার ইঙ্গিত করে দেখান ট্রাম্প।
হামলার পর গোয়েন্দা ও নিরপত্তা কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক তৎপরতার জন্য তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন ট্রাম্প। তার প্রচারাভিযান দলের মুখপাত্র স্টিভেন চেয়াং এ প্রসঙ্গিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই ঘৃণ্য হামলা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আইনি প্রয়োগকারীরা অত্যন্ত দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এই দক্ষতা ও কৃতিত্বের জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এখন সুস্থ রয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট কানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এরপরই এই হামলার বিষয়ে কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকায় এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এমনকি এই ধরনের হামলা ক্ষমা করা করা যায় না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। কড়া বক্তব্য ও মন্তব্যের আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন এ দুই প্রার্থী। এর মধ্যেই পেনিসেলভেনিয়ার বাটলার শহরে নির্বাচনী প্রচারণায় হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন ট্রাম্প। সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট কানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং গুলি তার কান ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। কার্যত হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। এই হামলার ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন এবং জিমি কার্টার নিন্দা জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারে হামলার ঘটনা আগেও অনেকবার হয়েছে। এর আগে চার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। এছাড়া সাতজন হত্যাচেষ্টার শিকার হন। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাদের মধ্যে রয়েছেন, আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮৬৫), জেমস গারফিল্ড (১৮৮১), উইলিয়াম ম্যাককিনলে (১৯০১), জন এফ কেনেডি (১৯৬৫), রাষ্ট্রপতি প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি (১৯৬৮)। ১৯৮১ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে গুলিবিদ্ধ হন রোনাল্ড রিগান। এ সময় গুলিতে তার প্রেস সেক্রেটারি জেমস ব্র্যাডি গুরুতর আহত হন। তার হামলাকারীকে দীর্ঘ দিন একটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আটক রাখা হয়। ১৯৭৫ সালে দুবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড। প্রথম হামলা হয়, ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর সান ফ্রান্সিসকোতেও হত্যাচেষ্টার শিকার হন তিনি। তখন এক পথচারীর কারণে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জর্জ ওয়ালেস। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনিও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। সেই হামলায় তিনি প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। তখন তিনি কোনোরকম রক্ষা পান। তবে শিকাগোর মেয়র আন্তন সেরমাক গুলিতে মারা যান। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন। ১৯১২ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় তাকে গুলি করা হয়। এক সেলুনের কর্মী তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। মার্কিন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্যাম্পেইন চলাকালে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মূলত আমেরিকার রাজনৈতিক সহিংসতার যে ইতিহাস রয়েছে সেক্ষেত্রে এটি একটি নতুন কালো অধ্যায়ের সূচনা করলো বলে মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট কানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং গুলি তার কান ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। কার্যত হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান এ প্রার্থীর ওপর নির্বাচনী প্রচারণার সময় এমন হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ