আগামী রোববার থেকে পুরোদমে শুরু হতে পারে সরকারি-বেসরকারি অফিস। শিথিলের সময় আরও বেড়ে শুধু রাতে থাকতে পারে কারফিউ। ফিরতে পারে মোবাইল ইন্টারনেটও। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে আরও কিছুটা সময় নিতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কর্মকর্তাদের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছে না। আগামীকাল শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি, ফলে রোববার পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। এ কারণে পুরোদমে অফিস চালু করতে সমস্যা নেই বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, রোববার থেকে কীভাবে অফিস চলবে। এ বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। এ সিদ্ধান্ত আরও পরে জানা যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই কারফিউ আগামী দু-একদিনের মধ্যে একেবারে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ও জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে রাতে সীমিত পরিসরে কারফিউ জারি থাকতে পারে। গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সেনাবাহিনীর কাজ শেষ হলে, দেশের পরিবেশ যখন ঠিক হবে, সেনাবাহিনী তাদের কাজে চলে যাবে। কারফিউ প্রত্যাহার হবে এবং জনজীবন আবারও স্বাভাবিক গতিতে চলবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি সেটি ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনই খুলে দিতে চাইছে না সরকার। কারণ আন্দোলন শুরুই হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিন্তা করা হচ্ছে। পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারলে পরীক্ষা নেয়া শুরু হতে পারে। ঢাকা ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে কিছুটা সময় নিতে চায় সরকার। এর আগে অন্য অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হতে পারে।
গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি এই মুহূর্তে বিবেচনা করতে পারছি না। আমরা পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের এখন প্রথম যে অগ্রাধিকার সেটি হচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পুনরায় যাতে শুরু করা যেতে পারে। এরই মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরেছে। আগামী রোববার-সোমবারের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ফিরবে বলে গত বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে সব ধরনের ইন্টারনেট খুলে দেয়া হলেও ফেসবুক খুলে দিতে সরকার আরও কিছুটা সময় নিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা-সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাতে সারাদেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রোববার থেকে মঙ্গলবার (২১-২৩ জুলাই) পর্যন্ত ছিল সাধারণ ছুটি। বুধ ও বৃহস্পতিবার (২৪ ও ২৫ জুলাই) সীমিতভাবে চলছে সরকারি অফিস। এর আগে বুধবার রাত থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ইন্টারনেট। পরদিন বৃহস্পতিবার রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেয় সরকার। গত ১৬ জুলাই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরদিন (১৭ জুলাই) অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয় সরকার।
পরে সহিংসতা দমনে সরকার অভিযান চালালে সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ক্রমে বাড়ে কারফিউ শিথিলের সময়। সর্বশেষ বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। প্রথমে দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার অফিস চলেছে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। সীমিত পরিসরে চলেছে ব্যাংকগুলোও। গত মঙ্গলবার রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশিরভাগ স্থানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চলে এসেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালায় আন্দোলনকারীরা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

শিথিল হতে পারে কারফিউ
রোববার থেকে পুরোদমে শুরু হতে পারে অফিস
- আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০২:৪৫:১৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৪ ০২:৪৫:১৮ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ