কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তির দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। তিনি আরও বলেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। গতকাল শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনের দরজা সব সময় খোলা : শেখ হাসিনা বলেছেন, গণভবনের দরজা শিক্ষার্থীদের জন্য সব সময় খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। সব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। আমি আর সংঘাত চাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সাথে যদি বসতে চায় আমি এখনও রাজি। তারা যদি এখনও আসতে চায় কথা বলতে চায় আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। তাদের দাবি কী কী বাকি আছে শুনতে চাই। আমাদের সাধ্যমতো সেটা পূরণ করতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। তিনি বলেন, তারা যদি আমার সঙ্গে বসতে চায়, আমি বসবো। তাদের কথা শুনবো। তাদের দাবি-দাওয়া যা মানার মেনেছি, আরও কিছু আছে কি না সেটা শুনতে হবে। আপনাদের সামনে আমি বলতে চাচ্ছি, দেশবাসীরও জানা উচিত, আমি কখনোই আমার দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা। যখনই আন্দোলনকারীরা কথা বলতে চায়, আলোচনা করে সমাধান করতে চায় আমি তাদের সঙ্গে বসতে রাজি। যে কোনো সময় তারা আসতে পারে, আলোচনা করতে পারে। দরকার হলে তাদের অভিভাবকদের নিয়ে আসতে পারে।
পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে : এ সময় প্রধানমন্ত্রী রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় যে পুলিশ সদস্য জড়িত তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বিচারবিভাগীয় যে তদন্ত কমিশন করেছিলাম, আমি কারও অপেক্ষায় থাকিনি। আমি চাই যারা এর সঙ্গে জড়িত সে যেই হোক, পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউ হোক, যারা অস্ত্রধারী এ ধরনের ঘটনা ঘটায় সকলেরই তদন্ত হোক বিচার হোক। তদন্ত কমিশনের সদস্য দু’জন বাড়িয়ে কর্ম পরিধি বাড়ানো হয়েছে। যাতে যথাযথভাবে তদন্ত হয়। তিনি বলেন, যে কয়টা জায়গায় এসব জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে সবকটা ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। আমি চাই এ ধরনের অন্যায় বা হত্যাকাণ্ড যারাই ঘটাক... তারাতো আমার দেশের নাগরিক। সে পুলিশ হোক, একটা শিশু হোক, একটা মানুষ হোক, সন্ত্রাসী হোক, ডাকাত হোক বা ছাত্র হোক যাই হোক এদেশের নাগরিক। এর যথাযথ তদন্ত করে এর বিচার হবে। তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অবশ্যই বিচার করা হবে। স্পষ্ট করে বলি, সে যেই হোক অবশ্যই তাদের বিচার করা হবে। যারা জড়িত তদন্ত করেই তাদের বের করা হবে। যারা অস্ত্রধারী, যেমন রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে। যে পুলিশ দায়ী তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। তার বিচার হবে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।
ঢাকাসহ সব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিচার হবে : বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু কারও দাবির অপেক্ষা রাখিনি। আমি চাই যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে যেই হোক সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক, যারা অস্ত্রধারী, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাদের সকলেরই বিচার হোক, তদন্ত হোক। শুধু ঢাকা নয়, যতগুলো জায়গায় এ সব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। এজন্য আমি যে জুডিশিয়াল কমিশন করেছিলাম সেখানে আরও দুজন জাজ নিয়োগ দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন করেছি। তাদের কর্মপরিধিও বাড়িয়ে দিয়েছি সময়ও বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে যথাযথভাবে এটা তদন্ত হয়। আমি চাই এ ধরনের অন্যায় হত্যাকাণ্ডের যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, এর বিচার হবে। আমি স্পষ্ট বলি হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই বিচার হবে। যারা জড়িত তদন্ত করেই তাদের বের করা হবে। যারা অস্ত্রধারী, যেমন রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে। যে পুলিশ দায়ী সেই পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে এবং তার বিচার হবে, যুক্ত করেন তিনি।
ছাত্রদের মুক্তির নির্দেশ : কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গ্রেফতার সাধারণ ছাত্রদের মুক্ত করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আন্দোলনের সময় সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেফতার যারা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা ছাত্র ছিল, তাদের সবাইকে জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে আমি এও নির্দেশ দিয়েছি, এর ভেতরে যারা নিরীহ আছে, তাদের সবাইকে এবং ছাত্র যারা অর্থাৎ একেবারেই যারা খুনের সাথে জড়িত না, এ সব ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত নয়, তাদের মুক্তি দেয়া শুরু করুন এবং সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যারা যারা দোষী, ঠিক তাদের চিহ্নিত করে তারা থাকবে (জেলে) এবং বাকিরা যাতে মুক্তি পায় সে ব্যবস্থা কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।
আজ রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাকও দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এরই মধ্যে এ ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গত শুক্রবার রাতে গণভবনে এক জরুরি বৈঠকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসতে দলের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। একইসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতার একটি টিম করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। এই টিমে ১৪ দলীয় জোটের জ্যেষ্ঠ নেতাদের যুক্ত করারও নির্দেশনা দেন তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কোটা সংস্কার আন্দোলন * শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনের দরজা সব সময় খোলা * আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী * শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে
সংঘাত নয় আলোচনায় বসতে চান প্রধানমন্ত্রী
- আপলোড সময় : ০৪-০৮-২০২৪ ১২:০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৮-২০২৪ ১২:০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ