
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে বঙ্গভবনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে রাষ্ট্রপতির আলোচনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়
দ্বাদশ সংসদ বিলুপ্ত
- আপলোড সময় : ০৭-০৮-২০২৪ ১২:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০৮-২০২৪ ১২:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির প্রেস উইংয়ে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেয়া শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙার আল্টিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক ভিডিওবার্তায় আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংসদ বিলুপ্ত করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার মধ্যে সংসদ ভাঙা না হলে আগামীকাল বুধবার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
গত সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও দেশত্যাগ করেন। এর পরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে সাত মাসও পার করতে পারেননি শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার জন্ম। শিক্ষাজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। সে সময় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবেই দেশে ফেরেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সোমবার দুপুর আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা উড্ডয়ন করেন। এসময় তার ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সে সুযোগ পাননি।
অপরদিকে বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য
গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এক গাড়ি বহর নিয়ে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেছেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরা। এর আগে সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি মাইক্রোবাসে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন ছাত্র আন্দোলনের ১৩ সমন্বয়কসহ ২ শিক্ষক। সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্তর্বতীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ১৩ সদস্যের একটি টিম বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং অধ্যাপক তানজীমউদ্দীন রয়েছেন। আলোচনা শেষে আমরা বিস্তারিত জানাব। এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়।
ভিডিও বার্তায় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের রূপরেখা দিতে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই রূপরেখা ঘোষণা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হবে। তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্তির সার-সংক্ষেপ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার আগে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী এ-সংক্রান্ত সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়-
১. দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করে দেশ ত্যাগ করেন।
২. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে (সংলাগ-১) বিধান রয়েছে যে, এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শদান করেছেন কিনা এবং করে থাকলে কী পরামর্শ দান করেছেন, কোনো আদালত সেই সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবেন না।
৩. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করায় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তার সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তাই সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলা, জনস্বার্থ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন যাতে বিপদের সম্মুখীন না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের অধীন তার বিচক্ষণতা (ডিসক্রিশনারি পাওয়ার) /সহজাত ক্ষমতা প্রয়োগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে পারেন।
৪. রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর সিডিউল ফোর (সংলাগ-২) এর অধীন জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন সংসদ সচিবালয়ের কর্মপরিধিভুক্ত। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রয়োজন, সেহেতু রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর রুল ৩৩ (সংলাগ-৩) এর আওতায় জনস্বার্থে, রাষ্ট্রপতি অনুচ্ছেদ ৩-এ বর্ণিত অবস্থাধীনে সমীচীন বিবেচনায় সেহেতু রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬ এর সিডিউল ফোর এর ব্যতিক্রম সদয় অনুমোদনপূর্বক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি (পতাকা-ক) জারি করতে পারেন।
৫. অনুচ্ছেদ ৪ এর প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির সানুগ্রহ বিবেচনা এবং অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ