
ধামইরহাটে পানির স্তর নেমেছে ১শ ফুট নিচে


ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
ধামইরহাটে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অসম্ভব রকম নিচে নেমে গেছে। টানা তীব্র তাপপ্রবাহে জেলার ১১ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং বিশেষ করে ধামইরহাটে এলাকায় আগ্রাদ্বিগুন ও খেলনা এলাকায় টিউবওয়েলে পানির স্তর প্রায় ১০০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল ও ছোট পাম্প মোটরেও উঠছে না পানি। মধ্যবৃত্তরা বাড়িতেই সাবমারসিবল বসাতে ভিড় করছে হার্ডওয়্যার দোকানগুলোতে। নদী ও খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে মানুষের মধ্যে তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
গত এক মাস ধরে পানির সংকটে কষ্ট করেছেন উপজেলার লাখো মানুষ। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। এলাকাবাসী মসজিদে বিশেষ দোয়া ও বিভিন্ন এলাকায় ইসতিসকার নামাজেও করছেন পানির জন্য প্রার্থনা।
দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা ও পুকুর, খাল-বিল ভরাটের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফকতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তীব্র তাপপ্রবাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও অপরিকল্পিত গভীর নলকূপ ও অসংখ্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এতে অগভীর টিউবওয়েলে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
এতে একদিকে পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানির যেমন সংকট দেখা দিয়েছে একইসঙ্গে কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্যও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পানি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পানির স্তর নিচে নামতে শুরু করেছে। বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উপজেলায় গড় ৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি কৃষি জমিতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন এলাকার মাঠের সেচে পানি উঠছে না। ফলে বোরো ধানের জমিতে সেচ নিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে কৃষকরা। ধামইরহাট উপজেলার পৌর সদরের আবুল খায়ের বলেন, আমাদের এলাকার ৯০ ভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানি না উঠায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যেতে হচ্ছে। আশপাশের এলাকার অবস্থাও একই। পানির অভাবে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
গত একমাস ধরে টিউবওয়েলে পানি উঠে না। বর্তমানে তীব্র পানি সংকটে দিশাহারা অবস্থা। দয়ালের মোড়ের শালুককুড়ি গ্রামের মরিয়ম খাতুন বলেন, অসহ্য গরমে জীবন যখন যায় অবস্থা, তখন বিদুতের মাঝে মাঝে লোডশেডিং আরও কষ্ট বাড়িয়ে তোলে, বিশেষ করে বাড়ির গবাদি পশুদের কষ্ট দেখে মনটাও মলিন হয়ে যায়।
আগ্রাদ্বিগুন বাজারের কলেজ শিক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। খালবিল ও নদী শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে আমরা খুব কষ্টে আছি। খাবার পানি, গৃহস্থালির কাজ ও কৃষি জমিতে সেচ দিতে ভোগান্তি হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ধামইরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিলন কুমার বলেন, ধামইরহাটে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর পৌর এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে, উমার ইউনিয়নে ৫০ ফুট এবং আগ্রাদ্বিগুন ও খেলনা ইউনিয়নে পানির স্তর ১০০ ফুট নিচে চলে গেছে, যা অত্যন্ত অনাকাক্সিক্ষত ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বলা যেতে পারে। তীব্র তাপপ্রবাহ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায়, নদী খালবিল শুকিয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত গভীর-অগভীর নলকূপ ও অসংখ্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণত নলকূপ ও টিউবওয়েলে পানি উঠতে সমস্যা হয়। এক পশলা বৃষ্টি নামলেই এই সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে বলে মনে করছি।
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ