ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নগরে ফিরছে মানুষ পথে পথে ভোগান্তি এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো-আনু মুহাম্মদ প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছেন-জামায়াত ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক দেশে স্বস্তি এনেছে বললেন দুদু মামলার আগেই আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক, বড় পরিবর্তন আসছে আইনে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিটেন্সে ধস আয়রন ডোম চুরমার ইসরায়েলি সদর দফতর গুঁড়িয়ে দিল ইরান ইরানের কাছে ধরাশায়ী ইসরায়েল মেসিদের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ মাঠে ফেরায় তোড়জোড় গগবার অনিশ্চয়তায় ক্যাবরেরার ভবিষ্যৎ ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আয়োজক হওয়ার প্রস্তাবকে আইসিসির ‘না’ বিগব্যাশে ডাক পেলেন বাবর আজম পাকিস্তানের কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন ইউসুফ তারকাবিহীন দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলি হামলায় নিন্দার ঝড় ইরানের পাল্টা হামলার শঙ্কায় খাবার ও পানি মজুত করছে ইসরায়েলিরা সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি করুন ইরানকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
* শিল্পাঞ্চলে কারখানায় শ্রমিকদের অসন্তোষ * শ্রমিক আন্দোলনের মুখে বিভিন্ন স্থানে কারখানা বন্ধ করেছে মালিকপক্ষ * রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

আধিপত্যের লড়াইয়ে ব্যাহত উৎপাদন

  • আপলোড সময় : ০২-০৯-২০২৪ ০৯:৫৩:৪৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ১২:৫২:৪৯ পূর্বাহ্ন
আধিপত্যের লড়াইয়ে ব্যাহত উৎপাদন
দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানাগুলোতে আধিপত্যের লড়াইয়ে পোশাক শিল্প খাতসহ প্রায় সকল শিল্পের উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে একটি মহল। এছাড়াও আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকদের ব্যবহার করে পরিস্থিতি অস্থিশীল করছে। শ্রমিকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ। এরই মধ্যে অব্যাহত শ্রমিক আন্দোলনের মুখে সাভার ও আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এ নিয়ে ওই এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন ও শৃঙ্খলা। রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গার্মেন্টস শিল্পমালিক এবং শ্রমিক নেতারা।
গতকাল সোমবার সাভার ও আশুলিয়ায় বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এ নিয়ে ওই এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। অন্যদিকে গতকাল সোমবার চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। গতকাল সকাল থেকে চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা, নাওজোর, কোনাবাড়ী, বোর্ডবাজার ও টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেন কারখানার শ্রমিকরা।
তবে শ্রমিকরা জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শুধু নারী শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন পুরুষ শ্রমিকরা। তাই কারখানাগুলোতে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন কারখানার চাকরিবঞ্চিত পুরুষরা সড়কে নেমে আসেন।
গাজীপুরের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার সকাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
অন্যদিকে টঙ্গী এলাকার বাটা সু কোম্পানির শ্রমিকরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা ও ভোগরা বাইপাস এলাকায় পোশাক কারখানার পুরুষ শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এছাড়াও ১০ দফা দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজারমেইল এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এ সময় মহাসড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
কারখানার শ্রমিক মনজুরুল ইসলাম বলেন, এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গ্রুপ থাকে। ক্ষমতার পালাবদলের পর তারা নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন। দেশে এটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। এতদিন আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করতেন, এখন পরিবর্তনের পর সেটা অন্য কেউ করবে। যেসব এলাকায় কারখানা আছে সেখানকার লোকাল কিছু লোক থাকেন যারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। যেমন-ঝুটের ব্যবসা, খাবার ও অন্য সামগ্রী সরবরাহ। তিনি আরও বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক একটা পরিবর্তন এসেছে এবং এতদিন যারা বঞ্চিত ছিলেন তারা নতুন করে তাদের অবস্থা জানান দিতে চাচ্ছেন। ফলে শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে এ ধরনের আন্দোলনের ডাক দিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বিদেশি মুদ্রা জোগানদাতা। এখানে সমস্যা হলে অর্থনীতি সমস্যায় পড়বে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কারা এর সঙ্গে জড়িত এবং তাদের দাবি-দাওয়া যদি যৌক্তিক হয় তার সমাধান করা। একই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বর্তমানে যে ধরনের আন্দোলন চলছে, আমার মতে তা শ্রমিক আন্দোলন নয়। কারণ এই মুহূর্তে শ্রমিকদের তেমন কোনো আন্দোলন দাবি-দাওয়া নেই। যদি কোনো দাবি থাকেও তাহলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। বর্তমান অবস্থায় কোনোভাবেই আন্দোলন করা শ্রমিক এবং শিল্পের জন্য সমীচীন নয়। অন্য কেউ যেন কোনো ধরনের সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনকে ত্বরিত গতিতে পদক্ষেপ নিয়ে এর সমাধান করতে হবে।
শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেন শ্রমিক নেতা ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে শ্রমিকের কিছু যৌক্তিক দাবি থাকে এবং সেগুলো পূরণ করা উচিত। কিন্তু এই সময়ের বিষয় (আন্দোলন) ক্লিয়ার নয়। আমি মনে করি দাবি থাকলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। তিনি আরও বলেন, অনেক জায়গায়ই দেখা যায়, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক থাকে, সেক্ষেত্রে তারা শ্রমিকদের ভুলভাবে ব্যবহার করছে কি না সেটা দেখতে হবে। যেহেতু বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ, অনেকে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সেক্টর যেন ধ্বংস না হয়, শ্রমিকরা যেন বেকার না হয়, সেদিকে সরকারকে নজর দিতে হবে এবং সত্যটা সামনে এনে পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সমাধান করতে হবে।
এ বিষয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহিল রাকিব বলেন, এ আন্দোলন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতার লড়াই। এর একটা হলো ঝুটের ব্যবসা দখল, অন্যটি আওয়ামী লীগের শোডাউন দেখানো যে তারা মাঠে আছে। এখানে সাধারণ শ্রমিকদের তেমন কোনো দাবি-দাওয়া নেই। তবে এক জায়গায় বলা হচ্ছে শ্রমিক ছেলে-মেয়ে ফিফটি ফিফটি করতে হবে। আন্দোলনকারীদের একটা অংশ কারখানায় গিয়ে বলছেন ছেলেরা বসে আছে আর মেয়েদের কাজ দিচ্ছেন, এটা হতে পারে না। কিন্তু তারা জানেনই না যে, মেয়েদের হাতের টেইলারিং কাজ পুরুষরা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আন্দোলনে দুটি গ্রুপ আসছে। এর একটি হলো যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তারা আন্দোলনে আসছে, অপর গ্রুপটি হলো রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেট হয়ে আসছে। আমার কারখানায়ও দেখেছি কিছু লোক আসছে যারা হেলমেট পরা, লুঙ্গি পরা, স্যান্ডো গেঞ্জি পরা। কিশোর গ্যাং টাইপের কিছু লোক দেখা গেছে। লোকাল নেতার আহ্বানে তারা এসেছে, প্রভাব বিস্তার করতে চান তারা। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, একটি সংস্থা আমাদের সতর্ক করেছিল যে কারখানাগুলোয় থ্রেট আসতে পারে। সেই সতর্কতা এখন দৃশ্যমান। আন্দোলন ও প্রভাব বিস্তারকারীদের কারা অর্থায়ন করছে সেটা দেখার বিষয়। সবাই মিলে এই পরিস্থিতি প্রতিহত করতে হবে। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বসছি, সরকারকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিকদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। দেশের ও অর্থনীতির স্বার্থে শ্রমিকদের বাঁচাতে হবে, কারখানাও সচল রাখতে হবে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর এসপি মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, এ মুহূর্তে সেখানে জিএবি লিমিটেডসহ স্নোটেক্স, স্টারলিং গ্রুপ, নাসা অ্যাপারেলস ও একমি অ্যাগ্রোভেট অ্যান্ড কনজ্যুমারস লিমিটেডের কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহাম্মেদ বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তারপরেও শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য