ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা, নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মডেল মেঘনার জব্ধকৃত মালামাল ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির আদেশ সারাদেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মেলিওডোসিস ওয়ারড্রব ম্যালফাংশনের শিকার হলেন জেনিফার লোপেজ এবার প্রাক্তন স্বামীর ৩০ হাজার কোটির সম্পত্তিতে ‘চোখ’ কারিশমার অক্ষয় কুমারের ফিটনেস রহস্য ফাঁস! বিপাকে রাজকুমার! জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে জয়ার নতুন সিনেমা সবাইকে কেন সতর্ক করলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান? আবারও রায়হান রাফী ও তমা মির্জার প্রেমে ভাঙন বিএনপির ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে আপসহীন খালেদা জিয়া ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টের মধ্যে জারি করতে হবে : নাহিদ ইসলাম বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রানওয়েতে স্কুলের পারমিশন যারা দিয়েছে তাদের ধরতে হবে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একই দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চায় এনসিপি ও ছাত্রদল দেশকে পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান-ফখরুল রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির
* অস্তিত্ব সংকটে-আতঙ্কে দিন কাটছে শরিকদের * ৫ আগস্টের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলগুলোর কোনো কার্যক্রম নেই * অনেকে চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন * ১৪ দলের কোনো শরিককে এখনো আমন্ত্রণ জানাননি ড. মুহাম্মদ ইউনূস

​রাজনৈতিক সংকটে ১৪ দলীয় জোট

  • আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ১১:৩০:২৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ১১:৩০:২৬ পূর্বাহ্ন
​রাজনৈতিক সংকটে ১৪ দলীয় জোট
সব মিলিয়ে টানা ১৫ বছর ৮ মাস ধরে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপর্যয় ও সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। সারাদেশজুড়ে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে এবং গ্রেফতারকৃত মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হচ্ছে। তারপরও আদালত প্রাঙ্গনে আসামীদের ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে জড়ো হতে দেখা যায়।
কেউ কেউ গ্রেফতারকৃতদের উপর কিল-ঘুষি এবং ডিম ছুড়ে মারছেন। এতে ভয়-আতঙ্ক আর অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় ভুগছেন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর নেতারা। আত্মরক্ষার পাশাপাশি নিজেদের দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, অস্তিত্বে ফিরে আসা সম্ভব হবে কিনা বা কত দিনে সেটা সম্ভব হবে সেটাই এখন এই জোটের দলগুলোর নেতাদের প্রধান ভাবনা। তবে আপাতত পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দলগুলোর কোনো কার্যক্রম নেই। এই জোটের অন্যতম দুই দলের দুই শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করছেন। অন্য নেতাদের কেউ কেউ রয়েছেন আতঙ্কে। রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু গ্রেফতার হওয়ার পর এ আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
জোটের বেশ কয়েজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৪ দলীয় জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ও অস্তিত্বহীন পরিস্থিতি তাদেরকেও ভয়, আতঙ্ক ও হতাশার মধ্যে নিয়ে গেছে। এই দলগুলোর নেতা কর্মীরা কেউ দলীয় কার্যালয়ে যান না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর ১৪ দলের নেতারা নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকে গ্রেফতার ও ভয় আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন। কর্মীদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ নেই। নেতা বা কর্মীরা কে কী অবস্থায় আছেন সে খবরও অনেকে নিতে পারছেন না। দলের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ কি তাও এই মুহূর্তে কেউ বলতে পারেন না। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এই দলগুলোর নেতারা কোনো কথাও বলছেন না। 
সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখনও এ দলগুলোর অনেক নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। বিশেষ করে যারা ১৪ দল এবং নিজ নিজ দলের রাজনীতিতে সক্রিয় ও সামনের সারিতে ছিলেন। অনেকে চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আবার অনেকে মামলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে আছেন। কারণ, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিক মামলায় ১৪ দলের তিন নেতাও রয়েছেন। তারা হলেন-ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। রাশেদ খান মেনন ও হাসানুর হক ইনু এখন গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে আছেন। সাবেক মন্ত্রী ও এমপি ও নেতাদের নামে মামলা দেয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে জোট নেতারা বলছেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ দলগতভাবে সংকটে পড়েছিল। পরে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে দলটি। এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলও সংকটে পড়েছে। এবারও তারা পরিস্থিতি আগের মতো মোকাবিলা করবে, তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। আওয়ামী লীগকে মাইনাস করে কোনো নির্বাচন হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টারা গত শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত কোনো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, দল কীভাবে টিকবে বা এই রাজনৈতিক সংকটপূর্ণ মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে এ দলগুলোর নেতারা কেউ কিছু বলতে পারছেন না। ওই সব নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা সম্ভব হচ্ছে না। দু-একজনের সঙ্গে কথা হলেও তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না বা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে এই মুহূর্তে চুপ থাকাই ভালো বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। আবার এই মুহূর্তে চুপ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখার কৌশলও নিয়েছেন অনেকে এবং সেটি অব্যাহত রেখেছেন। তবে এ জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ্য থেকে মাঝে মধ্যে দুই একটি বিবৃতি পাঠানো হচ্ছে মিডিয়াতে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের মতো এ জোটভুক্ত দলগুলোও এখন মারাত্মক সংকটে পড়েছে। প্রায় এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোটের দলগুলোর নেতাকর্মীরা আত্মোপলব্ধি করতে শুরু করেছেন ও নিজেদের দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতে দল অস্তিত্ব নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না সেই আশঙ্কাও রয়েছে কোনো কোনো দলের নেতাকর্মীদের।
২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদের (পূর্ণাঙ্গ) ও চতুর্থ মেয়াদের ৭ মাসের সরকারের প্রথম দুটিতে জোটের কয়েকটি দলের নেতারা মন্ত্রীসভায় ছিলেন। প্রথম সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, দ্বিতীয় সরকারের মন্ত্রীসভায় ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পাটির(জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এই জোট থেকেই নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন। এছাড়া জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ এই দলগুলো থেকে আরও কয়েক জন নবম, দশম ও একাদশ সংসদে এমপি হয়েছিলেন। মঞ্জু ছাড়া এরা সবাই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ন্যাপ ও গণতন্ত্রী পার্টি থেকে একজন করে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য করা হয় নবম সংসদে। সদ্য বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদে রাশেদ খান মেনন, জাসদের রেজাউল করিম তানসেন এমপি ছিলেন। আর সংরক্ষিত মহিলা আসনে গণতন্ত্রী পার্টির এক জন এমপি ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশা জোট থেকে অংশ নিলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ২০০৫ সালে ১৪ দলের যাত্রা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ বা দলটির সরকারের ব্যর্থতার দায় এ দলগুলোকেও বহন করতে হচ্ছে বলে দলগুলোর নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এ বিষয়ে ১৪ দলের শরিক এক নেতার সঙ্গে কথা হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দেন। দুই চারটা কথা মাঝে তিনি বলেন, আমরা তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে ছিলাম। এখন এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের যে অবস্থা, আমাদেরও সেই অবস্থা। দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, এখনই কোনোও মন্তব্য করবো না। দলের মিটিং আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারকে কল করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দল নিয়ে এই মুহূর্তে কোনও চিন্তাভাবনা নেই। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখছি আমরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা পরিস্থিতি ও ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে দেখছি, এর চেয়ে বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা কী করে দেখি। ভালো কাজ করলে আমরা সমর্থন করবো।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স