ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ , ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ হয়েছে-আলী রীয়াজ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন রাস্তায় অভিনেতাকে সিদ্দিককে গণপিটুনি কারিগরি শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, চাকরির বাজারে তার চাহিদা নেই -সিপিডি আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে : সিইসি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গড়িমসি অপকর্ম বন্ধ করুন, নইলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে -নেতাকর্মীদের ফখরুল সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান বইপ্রেমী এক ডিসির গল্প গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই বোন ই-৮ ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন ২৫ কর্মী পুলিশের জন্য ১৭২ কোটি টাকায় কেনা হবে ২০০ জিপ সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে লিপ্ত থাকার অভিযোগ গ্যাস খাতে বছরে আর্থিক ক্ষতি বিলিয়ন ডলার নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি

বিফলে রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প

  • আপলোড সময় : ০৪-০৯-২০২৪ ১০:৫৯:২১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৯-২০২৪ ১০:৫৯:২১ অপরাহ্ন
বিফলে রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প

* ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে নেয়া হয় রাজউকের ৫৬৮ কোটি টাকার আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প
* প্রকল্পের জনবল, সমীক্ষা, অভিজ্ঞতা, যন্ত্রপাতি কাজে লাগাতে একটি স্বতন্ত্র স্বউপার্জিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হলেও তা আটকে দিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়
* অলস বসে আছেন প্রকল্পের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ৮২ জনবল এবং রাজউকের গুলশানের প্রকল্প কার্যালয়ে পড়ে আছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি



পরিকল্পনার অভাবে বিফল হতে বসেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৫৬৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। মাঠপর্যায়ে সব সমীক্ষা শেষ হলেও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান না করায় বাস্তব প্রয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অলস বসে আছেন প্রকল্পের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ ৮২ জনবল এবং রাজউকের গুলশানের প্রকল্প কার্যালয়ে পড়ে আছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।
এই অবস্থা ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে রাজউকের নেয়া আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজউক এটিকে ইউনিট হিসেবে রাখতে চাইলেও এর কাজের ক্ষেত্র সারা দেশ হওয়ায় তা সংস্থার আওতার বাইরে। স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রকল্পের দক্ষ জনবল ও যন্ত্রপাতি-উপকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজউকের সূত্র বলেছে, রাজউকের অধীন আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প শুরু হয় ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ৫৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্প শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। প্রকল্পের মূল কাজ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কাঠামোর নকশা পরীক্ষা ও ভবন নির্মাণ তদারকি করা হয়েছে। ভূমিকম্প প্রকৌশল এবং ইমারত নির্মাণবিধি বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষায়িত সংস্থা গঠনের জন্য প্রকল্পের অংশ হিসেবে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার, সিসমিক ল্যাবরেটরি, দক্ষ মানবসম্পদ গড়া হয়।
সারাদেশে ভূমিকম্প দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন সমীক্ষাও করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে শুধু প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালীকে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। বাকি দক্ষ জনবলকে কোনো কাজে লাগানো হচ্ছে না। প্রায় ৬০ কোটি টাকায় কেনা যন্ত্রপাতিও অলস পড়ে আছে। প্রকল্পের জনবল, সমীক্ষা, অভিজ্ঞতা, যন্ত্রপাতি কাজে লাগাতে একটি স্বতন্ত্র স্বউপার্জিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হলেও তা আটকে দিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে এর জনবল কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু এ প্রকল্পের বিষয়ে কিছু করা হয়নি। ফলে কিছু ঝামেলা তৈরি হয়েছে। তবে আমরা এখন বিষয়টি সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি।
সূত্র জানায়, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকায় আধুনিক ও উচ্চক্ষমতার বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২০০ কিলোনিউটন ক্ষমতার ট্রাক মাউন্ডেড দুটি সিপিটি মেশিন, একটি ১২ ইঞ্চি কংক্রিট কাটার ক্রেন, ৪০ টন ক্ষমতার ওভারহেড ক্রেন ও ৫ টন ক্ষমতার একটি ফর্ক লিফটসহ ২৫ ধরনের ১৫০টি যন্ত্রপাতি। তথ্য-উপাত্ত ভাণ্ডার সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন উপকরণও কেনা হয়। এ ছাড়া ৮২ দক্ষ জনবল তৈরি করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্প শেষে একটি স্বতন্ত্র স্বউপার্জিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের ৫ মার্চ সাবেক পূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়, সেখানে স্বউপার্জিত বিশেষায়িত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান গঠনের বিষয়ে নীতিগত বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই সারসংক্ষেপ পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশের বড় শহরগুলোর অনেক স্থাপনা ধসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩ শতাংশ ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা এমন ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্পের দুর্যোগঝুঁকি কমাতে একটি বিশেষায়িত ট্রাস্ট গঠনের বিষয়ে অংশীজনেরা একমত। এই ট্রাস্ট ভূমিকম্প দুর্যোগ থেকে সম্পদ ও জানমালের সুরক্ষা, ঝুঁকি সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং জাতীয় অবকাঠামো তথ্যভাণ্ডার করবে। ‘দি ট্রাস্টস আইন, ১৯৮২’ অনুযায়ী এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মাস দুয়েক আগে রাজউকের বোর্ড সভায় পাসও হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি আর এগোয়নি।
আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পে কাজ করা একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান রাজউকের অধীনে রাখলে তা ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ অন্যান্য জেলা নিয়ে কাজ করতে পারবে না। কারণ, রাজউকের আওতায় শুধু ঢাকা রয়েছে। তাই রাজউকের অধীনে রাখলে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য সফল হবে না। রাজউকের পক্ষেও এত বড় ইউনিট আয়ত্তে রেখে কাজ করা সম্ভব হবে না।
প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পে স্থাপনার ভূমিকম্পের দুর্যোগঝুঁকি নিরূপণ, মজবুত করা, দুর্যোগজনিত প্রভাব সমীক্ষা, নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিতে কাজ করা হয়েছে। সেখানে ল্যাবরেটরিতে নির্মাণসামগ্রীর পরীক্ষা, ভূমিকম্প-সহনশীল অবকাঠামোর ডিজাইন, রেট্রোফিটিং, ফাউন্ডেশনÑ এসব বিষয়ও ছিল। সারাদেশের সরকারি অবকাঠামোর অগ্নিনিরাপত্তার পরিকল্পনাকারী, উদ্ধারকারী এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, ফোরম্যান, রডমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, ম্যাসন, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজও কিছুটা করা হয়েছে। ফলে রাজউকের আওতায় রেখে এসব কিছু কীভাবে করা হবে, তা বোধগম্য নয়।
রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক (বর্তমানে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী) আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে বিপুল পরিমাণ নথি (ডকুমেন্ট) রয়ে গেছে। এখন এগুলোর কী হবে, তা ঠিক বলতে পারছি না। রাজউকের ইউনিট করার একটা কথা আলোচনায় আছে। তবে তা সারাদেশে কীভাবে কাজ করবে? কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এসব বিষয় মাথায় রাখবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ