ঢাকা , বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ , ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ হয়েছে-আলী রীয়াজ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন রাস্তায় অভিনেতাকে সিদ্দিককে গণপিটুনি কারিগরি শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, চাকরির বাজারে তার চাহিদা নেই -সিপিডি আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে : সিইসি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গড়িমসি অপকর্ম বন্ধ করুন, নইলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে -নেতাকর্মীদের ফখরুল সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান বইপ্রেমী এক ডিসির গল্প গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই বোন ই-৮ ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন ২৫ কর্মী পুলিশের জন্য ১৭২ কোটি টাকায় কেনা হবে ২০০ জিপ সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে লিপ্ত থাকার অভিযোগ গ্যাস খাতে বছরে আর্থিক ক্ষতি বিলিয়ন ডলার নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি
* গরম আর যানজটে গলদঘর্ম যাত্রীরা * চালকরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো গাড়ি চালান * ব্যাটারিচালিত রিকশা উঠে এসেছে প্রধান সড়কে, চলছে ফ্লাইওভার দিয়ে * দিনে চলাচল নিষিদ্ধ ভারী যানবাহন চলতে শুরু করে সকাল থেকেই

গতি ফেরেনি ট্রাফিক পুলিশের কাজে

  • আপলোড সময় : ১৩-০৯-২০২৪ ০১:০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৩-০৯-২০২৪ ০১:০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
গতি ফেরেনি ট্রাফিক পুলিশের কাজে

ফ্রি স্টাইলে নিয়ম না মেনে চলছে গাড়ি। কার আগে কে যাবে এনিয়ে গাড়ির ড্রাইভারদের মাঝে চলে প্রতিযোগিতা। এসব গাড়ীর প্রতিযোগিতার কারনে এলোমেলো চলমান গাড়ী সড়ক দখল করে আটকে যাচ্ছে অপরদিক থেকে ছুটে আসা গাড়ির লেনে। ফলে রাজধানী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও প্রবেশ পথে মহাড়কে সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে তীব্র যানজট।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। অবশ্য এর কয়েকদিন আগে থেকেই ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ার ভয়ে সড়কে দায়িত্ব পালন থেকে একরকম বিরত ছিল ট্রাফিক পুলিশ। ৫ আগস্টের পরে প্রায় এক সপ্তাহ ছাত্র-জনতা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আস্তে আস্তে ট্রাফিক পুলিশকে কাজে ফেরায়। কাজে ফিরলেও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মনোবল এখনও চাঙা হয়নি। তারা এখনও নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হচ্ছেন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। আর সড়ক আইন না মেনে ইচ্ছেমতো যানবাহন চালাচ্ছেন চালকরা। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও তাদের কাজে গতি ফেরেনি। এই কারণে নেই কোনো শৃঙ্খলার বালাই। যে যেভাবে পারছেন, যানবাহন চালাচ্ছেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা উঠে এসেছে প্রধান সড়কে, চলছে ফ্লাইওভার দিয়েও। দিনে চলাচল নিষিদ্ধ ভারী যানবাহন চলতে শুরু করছে সকাল থেকেই। ফলে নগরীর যানজট পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা এখনও আগের মতো অ্যাকশনে যেতে পারছেন না। কেউ সড়ক আইন না মানলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে তারা রীতিমতো বকাঝকা এমনকি হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
গত ৪ দিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে নিয়ম ভাঙার চিত্র। পরিস্থিতি এমন যে অধিকাংশ পরিবহণ চালক সড়ক আইন মানতে নারাজ। তারা যে যেভাবে পারছেন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। আর ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দণ্ডায়মান থাকতে দেখা গেছে।
উত্তরার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবুল হাসান বলেন, সাধারণত মোটরসাইকেলে যে কোনো জায়গায় যেতেই সময় কম লাগে। কিন্তু সরকার পতনের পর ট্রাফিক পুলিশ সড়কে দায়িত্বে ফিরলেও বেশিরভাগ সময় মোটরসাইকেল নিয়ে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বাড্ডা থেকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকায় অফিস করি। ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে সড়কের প্রতিটি সিগন্যালে দাঁড়াতে হচ্ছে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটা বেশি সময়। সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা আগের মতো তৎপর নন। যে কারণে সিগন্যালগুলোতেও নানা রকম অনিয়ম হচ্ছে। বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো গাড়ি চালাচ্ছেন নিয়ম ভেঙে। যে কারণে যানজট আরও বেড়েছে। এছাড়া আগে অলিগলিতে চলাচল করলেও এখন রাজধানীর সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় ব্যাটারিচালিত রিকশাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো বাধা না মেনে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ফ্লাইওভারসহ প্রায় সব জায়গাতেই ব্যাটারি রিকশার আনাগোনা। বিভিন্ন সড়কে উলটোপথে চলাচল করতে দেখা যায় এসব রিকশা। এতে যেমন যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। গত সোমবার রাজধানীর শাহবাগে ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় আড়াই বছরের শিশুর সামনে তানিয়া খানম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। বিএসএমএমইউতে ডাক্তার দেখিয়ে আজিমপুরের বাসায় ফিরতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন শাহবাগ মোড়ে। এ সময় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। গত মঙ্গলবার মিরপুরের ইব্রাহিমপুর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় মীরা রানী নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এরকম ঘটনা দুর্ঘটনা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই ঘটছে।
বুধবার কালশী মোড়ে ব্যাটারিচালিত একজন রিকশার চালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রধান সড়কে চলে এসেছেন, কিন্তু পুলিশ কোনো বাধা দেয় না কেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘কে বাধা দেবে? এটা স্বাধীন রাষ্ট্র, আমরা এখন স্বাধীন। তাই স্বাধীনভাবে গাড়ি চালাইয়া খাই।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় একজন ট্রাকচালককে দিনের বেলা ট্রাক চালানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবাই চালাচ্ছে, আমিও চালাচ্ছি। এখন কোনো বাধা নেই। রাত ১০টার পর ভারী যান চলাচলের নিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওইটা ছিল স্বৈরাচারের নিয়ম। এখন নতুন বাংলাদেশ। এখন আগের এসব নিয়মকানুন নেই।
অপরদিকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কাজলা টোল প্লাজার সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় দেখা যায় তীব্র যানজট। এখানেই যানজটে আটকে থাকা রজনীগন্ধ্যা পরিবহনের ড্রাইভার রফিক (৪০) এর সাথে কথা হয়। চল্লিশ উর্ধ্ব ড্রাইভার রফিক জানায় গত কয়েকদিন থেকেই এই ফ্লাইওভারে যানজট লেগে থাকে। ফ্লাইওভার পার হয়ে গুলিস্তান যেতেই সময় লেগে যায় এক ঘন্টার উপরে অথচ রাস্তা ক্লিয়ার যানজট মুক্ত থাকলে এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ মিনিট। 
এদিকে সড়কে বিশৃঙ্খলার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবারও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিল যানজট। ভাদ্র মাসের শেষে এসে গরমের তীব্রতাও অনেক বেশি। গরম আর যানজটে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হচ্ছে মানুষকে।
একদিক যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, গুলিস্থান অপরদিকে উত্তরা, হাউজ বিল্ডিং, এয়ারপোর্ট, প্রগতি সরণি, লিংক রোড, গুলশান-১, রামপুরা, হাতিরঝিল, কাকরাইল, কাকলী, বনানী, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, আসাদগেটসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি পয়েন্টেই যানজট লেগে থাকে। বাংলামোটর এলাকায় দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সদস্য জানান, আমরা যানজট নিরসনে প্রাণপণ চেষ্টা করছি। কিন্তু অনেকেই আমাদের কথা শুনতে চান না। পালটা নানা অজুহাতে ধমক দেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, বিভিন্ন দাবিতে প্রায় সময় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করা হয়। এতে যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এছাড়া নগরীতে প্রায় ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়কে উঠে এসেছে। ভারী যানবাহন দিনের বেলায় চলতে শুরু করেছে-এগুলোও যানজটের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আস্তে আস্তে মামলায় যাচ্ছি। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিনশ মামলা হচ্ছে নগরীতে। যদিও আগে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ মামলা হতো। পর্যায়ক্রমে ব্যাটারি রিকশা এবং দিনে চলা ভারী যানবাহন সড়কে চলতে দেওয়া হবে না। তিনি যানজট নিরসন এবং সড়ক আইন মেনে ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান সাধারণ মানুষের প্রতি। রোববার বিজয় সরণি মোড়ে একজন ট্রাফিক সদস্য একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে ঘুরিয়ে দিতে চাইলেন। এ সময় ওই রিকশাচালক ট্রাফিক পুলিশকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, আপনাদের আগের পাওয়ার আর নেই। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ছাত্র ডাক দেব, বলব ঘুস চাইছেন। তারপর তো কি হবে বুঝেনই। ওই ট্রাফিক সদস্য কথা না বাড়িয়ে ফিরে যান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিদিনই আমাদের পড়তে হচ্ছে। পেটের তাগিদে চাকরি করি। বিকল্প উপার্জনের ব্যবস্থা থাকলে চাকরিই ছেড়ে দিতাম। অন্যায়ভাবে মানুষের কটু কথা আর নিতে পারি না।
গত মঙ্গলবার সকালে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় নিয়ম অমান্য করে উলটো পথে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই যুবক। একজন ট্রাফিক সদস্য এগিয়ে গেলে তাকে ধমক দিয়ে গালাগাল করেন তারা। ট্রাফিক সদস্য কোনো কথা না বলে পেছনে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা পালটা মিথ্যে অভিযোগ তুলে অশোভন আচরণ করছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এমন যে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন সিগন্যাল ঘুরে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা অনেকটা নির্বাক হয়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ ট্রাফিক আইন অমান্য করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। গত ৪ দিনে মাঠপর্যায়ের অন্তত দশজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বেশিরভাগ লোকজন এখনও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। কেউ কেউ গায়ের জোরে উলটো রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে চলে যান। অনেকেই সিগন্যাল মানেন না। একজন ট্রাফিক পুলিশ যুগান্তরকে বলেন, বেশিরভাগ সময় অল্প বয়সি মোটরসাইকেল চালকরা গালাগাল করে। তাদের কিছু বলাও যায় না। আইন-অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গেলে পালটা পুলিশের ওপর তেড়ে আসে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ