* রিকশাচালক-ভাসমান বিক্রেতাদের কষ্ট * রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন পরিস্থিতি * পরিবহন সংকট ও নারীদের দুর্ভোগ * আবহাওয়ার পূর্বাভাস কমছে না দুর্ভোগ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সারা দেশে শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টিতে জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল এবং যানবাহনের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। রিকশাচালক, বাস চালক, ভাসমান দোকানি, নিম্ন আয়ের মানুষসহ প্রায় সকল শ্রেণির মানুষই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এমন অবস্থায় আয়ও কমে গেছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া ঝিরিঝিরি বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই। গতকাল রোববার দিনভর বৃষ্টি চলতে থাকায় ঢাকার পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, মৌচাক এলাকায় রাস্তাঘাট ছিল বেশ ফাঁকা। ফুটপাতেও মানুষের ভিড় ছিল না। পল্টন মোড়ে দেখা যায়, রিকশাচালকরা ভিজে থাকা শার্ট-লুঙ্গি পরেই রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশাচালক জহিরুল জানান, শনিবার থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তা থামছে না। শরীর গরম হয়ে আছে। রাস্তায় মানুষ তুলনামূলক কম। ভাড়া বেশি পাইনি। দুপুর থেকে ভেজা শার্ট-লুঙ্গি পরে রিকশা চালাচ্ছি।
রিকশাচালক কলিমউদ্দিনের অবস্থা আরও করুণ। তিনি বলেন, গায়ে রেইনকোট দিয়েও নিস্তার নেই। গায়ে পানি ঢুকছে। এভাবে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবো। রিকশা না চালিয়ে ঘরে বসে থাকলে ভাত খাবো কোথা থেকে? সকাল থেকে ৩০০ টাকার ভাড়া পাইছি শুধু। বৃষ্টিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ফুটপাতের ভাসমান বিক্রেতারাও। পল্টন মোড়ের আনারস-পেপে বিক্রেতা আরমান জানান, আজ (রোববার) কাস্টমার কম। বিক্রি ভালো না। একদিন বিক্রি না হলে পরদিন মাল আনার টাকা থাকে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন রকম। কোথাও কোথাও গাড়ির চাপ বেশি থাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে, আবার কিছু এলাকায় গণপরিবহনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার সকালে উত্তরা, মিরপুর, ইসিবি, বিশ্বরোড, কুড়িল, নর্দা এলাকা ঘুরে দেখা যায় এই ভিন্নতা। উত্তরা এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল তীব্র। প্রতিটি সিগন্যাল পার হতে যাত্রীদের আগের তুলনায় বেশি সময় লেগেছে।
অন্যদিকে, মিরপুর, ইসিবি চত্বর, কুড়িল এলাকায় ছিল গাড়ির সংকট। দীর্ঘ সময় পরপর গাড়ি আসায় যাত্রীরা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছিলেন। প্রতিটি গাড়িই ছিল যাত্রীতে ঠাসা।
বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০ মিনিট ধরে বাড্ডা রোডের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিটি গাড়ির গেট পর্যন্ত মানুষজন ঝুলে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে বৃষ্টি, অপরদিকে অফিস। ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। যেভাবেই হোক অফিসে পৌঁছাতে হবে। অন্যদিনের তুলনায় আজ গাড়ি অনেক কম মনে হচ্ছে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নারী যাত্রীরা। রাবেয়া আক্তার নামের এক যাত্রী বলেন, এমনিতেই বাস পুরোপুরি ভরে আসছে। তারপর এখানে থামলেও পুরুষরা উঠতে পারছে। নারীরা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।
টানা বৃষ্টির ফলে রাস্তায় মানুষের সংখ্যা কম থাকায় রিকশাচালক ও গণপরিবহন চালকদের আয় কমে গেছে। ভিক্টর পরিবহনের চালক মোরশেদ জানান, বৃষ্টিতে রাস্তায় মানুষ কম। সকালে অফিসগামী কিছু যাত্রী ছিল। এরপর থেকে যাত্রী কমেছে। যারা বের হওয়ার তারা প্রাইভেটকার কিংবা রিকশায় উঠে। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করে না।” উবার চালক কামাল হোসেন জানান, রাস্তায় যাত্রীর জন্য দাঁড়াতেই পারি না। চলতি পথে দু-একজন পাই। গত দুদিন থেকে এভাবেই চলছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবেই এমন বৃষ্টি হচ্ছে। রাত থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আবহাওয়া শিগগিরই স্বাভাবিক হবে না। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, স্থল গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিত অংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গভীর স্থল নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি এবং দেশের অনেক জায়গায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
অবিরাম বৃষ্টিতে জীবনযাত্রা একপ্রকার থমকে দাঁড়িয়েছে। বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ, যানবাহন চালক ও সাধারণ যাত্রীরা। বৃষ্টিতে থেমে থাকলেও জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই বের হচ্ছেন রাস্তায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন
যানজট-যানবাহন সংকটে ভোগান্তি
- আপলোড সময় : ১৬-০৯-২০২৪ ০১:২০:৫৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৯-২০২৪ ০১:২০:৫৫ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ