ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরিবর্তন আসছে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায় সবাইকে ছাতার নিচে আনতে ভিত গড়ছে ঐকমত্য কমিশন জুনে ৩২৪টি রাজনৈতিক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত : সিজিএস অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের সময় এসেছে-দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গাজীপুরে আসন বাড়ছে কমছে বাগেরহাটে : ইসি ৩৯টি সংসদীয় আসনে আসছে পরিবর্তন : ইসি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে ১৫ সদস্যের কমিটি শান্তি মিশনে মানের দিক থেকে শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাশিয়ায় ভূমিকম্পের পর আঘাত হেনেছে সুনামি কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড জুলাইয়ের আহত-নিহতদের তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে-মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা সবুজায়ন স্বপ্নে খরা ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৬ সড়কে আলু ফেলে নওগাঁর কৃষকদের মানববন্ধন রাজধানীতে মাসে ২০টিরও বেশি হত্যা ও ৫টি ডাকাতি হচ্ছে রিয়াদের বাসা থেকে আড়াই কোটির চেক-এফডিআর নথি উদ্ধার এনসিপির সমাবেশে হামলায় আরেক মামলা আসামি সাড়ে ৫ হাজার তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে হচ্ছে কমিটি : ধর্ম উপদেষ্টা ভয়াবহতার মূলে এডিস মশার অস্বাভাবিক প্রজনন
অফিস ভবনেই সংসার পেতেছেন পাসপোর্ট কর্মকর্তা

ঘুষ দিলে হয় সব ‘ম্যানেজ’

  • আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৪ ০৩:২৬:৫৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৪ ০৩:২৬:৫৮ অপরাহ্ন
ঘুষ দিলে হয় সব ‘ম্যানেজ’
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
উপরি টাকায় সব ‘ম্যানেজের’ কারখানা হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এ অফিসে ঘুষ ছাড়া নড়ে না কোনো ফাইলই। এটি সেবাগ্রহীতাদের কাছে দিনকে দিন সীমাহীন ভোগান্তি ও দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ অফিসটির সহকারী পরিচালক আইরিন পারভিন ডালিয়ার বিরুদ্ধে। অফিস ভবনের তৃতীয় তলাতেই তিনি সংসার পেতেছেন। এই অফিস ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে গ্রাহকদের নিয়মিতই গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না সেখানে। পিয়ন থেকে শুরু করে সহকারী পরিচালক, সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা মানুষেরা। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনসহ নানা জায়গায় অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। সবাই যেন ‘ম্যানেজড’। কিশোরগঞ্জের সবকটি উপজেলার মানুষ পাসপোর্ট করতে এখানে আসেন। এর মধ্যে ভৈরব, কুলিয়ারচর, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, কটিয়াদী তাড়াইল-এই উপজেলাগুলোর দূরত্ব প্রায় ২৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার। এ অফিসে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ বা তারও বেশি আবেদন জমা হয়। প্রায় সবারই অভিযোগ, দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়।
জানা গেছে, ভাড়া বাড়ি থেকে সরে শহরতলীর কাটাবাড়িয়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বড় পরিসরে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতেই পাসপোর্ট অফিসের সামনে মানুষের লম্বা লাইন। বেলা বাড়লেও সেই লম্বা লাইন আর কমে না। আবেদনপত্র জমা, বায়োমেট্রিক বা পাসপোর্ট সংগ্রহ যাই হোক না কেন, বাড়তি টাকা না দিলে সারাদিনই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লাইনে। কপাল ভালো থাকলে কোনোভাবে জমা দিলেও বাকি কাজটা টাকা ছাড়া শেষ হয় না। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রায়ই বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, এ অফিসে দালালের দৌরাত্ম্যও অকল্পনীয়। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কাজ সারেন তারা। পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে আবেদন ফরম জমা দিলে তা অনেক সহজেই জমা পড়ে। দালালরা দ্বিগুণ টাকার বিনিময়ে সহজেই পাসপোর্ট করে দিতে পারেন। আর তাদের শরণাপন্ন না হলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে হয়রানির শিকার হতে হয়। তারা পাসপোর্ট ফরমে বিশেষ কলমের চিহ্ন ব্যবহার করেন। সাধারণ মানুষের সেই চিহ্ন বোঝার কোন উপায় নেই। এছাড়া সেখানে কর্মরত কিছু আনসার ও পুলিশ সদস্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাদের মাধ্যমেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়তি টাকার ভাগ পান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরমে সবকিছু ঠিক থাকার পরও কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পুনরায় ফরম পূরণ করে জমা দিতে বলেন। পরে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা এমন পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে নিজেরা ফরমটি ঠিক করে দেবেন বলে জানান। এসব কাজে স্থানীয় দালালদের লাগানো হয়। এরপরও ‘চ্যানেলে’র মাধ্যমে না গেলে আবেদন ফাইল স্বাক্ষর হয় না। ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা বাধ্য হন দালাল ও চ্যানেল ধরতে। শুধু পাসপোর্টই নয়, জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধনী ও বয়স বাড়ানোর কাজটিও করেন দালালরা। বয়স কম থাকলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তা বাড়িয়ে দিয়ে পাসপোর্ট করা হয়। এর জন্য গুনতে হয় ৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাসপোর্ট করতে আসা একজনের কাছ থেকে অফিসের আনসার সদস্য ইকরাম তিন হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার গোপন ভিডিও ও মোবাইল ফোনে কথোপকথনের প্রমাণ আসে সাংবাদিকদের হাতে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইকরাম জানান, সব টাকা তিনি পান না, অন্যান্যদেরও দিতে হয়। স্যার-ম্যাডামকে দেয়ার পর সামান্য কিছু টাকা তার কাছে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ আছে পাসপোর্ট অফিসটির সহকারী পরিচালক আইরিন পারভিন ডালিয়ার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ৭ অক্টোবর তার বক্তব্য নিতে যান সাংবাদিকরা। এদিন দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে তার রুম বন্ধ পাওয়া যায়। দায়িত্বরত অফিস সহকারীর কাছে তার খোঁজ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যাডাম তৃতীয় তলায় নিজের বাসায় আছেন। তিনি কখন আসবেন জানতে চাইলে ওই কর্মচারী সহকারী পরিচালককে ফোন দিয়ে বলেন সাংবাদিকরা এসেছেন। উত্তরে তিনি জানতে চান সাংবাদিকরা কেন এসেছেন। তার একটি বক্তব্য নেয়ার কথা জানানো হয় তাকে। পরে তিনি সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বলেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অফিস কক্ষে আসেন এই কর্মকর্তা। অফিসের আনসার সদস্যরা টাকা নিয়ে কাজ করেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। উলটো সাংবাদিকদের বের হয়ে যেতে বলেন। একপর্যায়ে বায়োমেট্রিক রুম থেকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হেদায়েতুল্লাহকে ডেকে আনেন এবং বক্তব্য নিতে যাওয়া সাংবাদিকদের ভিডিও করে রাখেন তিনি। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, গোপন ভিডিওসহ সব তথ্য না দেখালে উনি কোনো বক্তব্য দেবেন না। যা মন চায় তাই করতে বলেন সাংবাদিকদের।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য