ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ , ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর লিজ দেয়া হবে না পরিবেশ উপদেষ্টা যৌথ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধÑ খেলাফত মজলিস ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ অ্যাডমিন বর্ষা গ্রেফতার মৌসুমি ফলে ভরপুর বাজার দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতাদের সিলেটে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু রোগী ও স্বজনদের মারধর করলেন ওয়ার্ড বয় উত্তরায় র‌্যাবের পোশাক পরে ‘নগদ’ এজেন্টের কোটি টাকা ছিনতাই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ মানা হচ্ছে না নির্দেশনা নতুন করে সংকটের মুখে দেশের পোশাক খাত নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নগরে ফিরছে মানুষ পথে পথে ভোগান্তি এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো-আনু মুহাম্মদ প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছেন-জামায়াত ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক দেশে স্বস্তি এনেছে বললেন দুদু মামলার আগেই আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক, বড় পরিবর্তন আসছে আইনে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিটেন্সে ধস আয়রন ডোম চুরমার ইসরায়েলি সদর দফতর গুঁড়িয়ে দিল ইরান ইরানের কাছে ধরাশায়ী ইসরায়েল মেসিদের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ মাঠে ফেরায় তোড়জোড় গগবার

শেরপুরের কৃষি খাতেই ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

  • আপলোড সময় : ১১-১০-২০২৪ ০২:২০:৫১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-১০-২০২৪ ০২:২০:৫১ অপরাহ্ন
শেরপুরের কৃষি খাতেই ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা
শেরপুর প্রতিনিধি
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় সৃষ্ট বন্যার ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে। পাহাড়ি নদী মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি নেমে যাওয়ার পর জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী, শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আস্তে আস্তে ফুটে উঠতে শুরু করেছে।
এই বন্যায় ক্ষেতের ফসল ডুবে নষ্ট হওয়া কৃষক পরিবারগুলো দিশেহারা। অনেক স্থান এখনও জলাবদ্ধ থাকায় পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা যাচ্ছে না।
তবে এ বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার ধারনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস।
তিনি বলেন, এবারের বন্যায় শেরপুর জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টরই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া ১ হাজার ৫৯ হেক্টর জমির শাকসবজি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ দশমিক ৭ হেক্টর জমির বস্তায় আদা চাষ আক্রান্ত হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও অনেক জায়গায় বন্যার পানি আছে। যার কারণে ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। পানি নেমে গেলেই বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ফসল নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা বলছেন, ১৯৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েননি তারা। তাদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। এখনি পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে তাদের পথে বসতে হবে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলাম। বন্যায় সব ভেসে গেছে। ক্ষেতের একটা ধানও তুলতে পারবো না। ধার-কর্য করে আবাদ করেছিলাম, সামনে কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
ঝিনাইগাতী উপজেলার কুশাইকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেকের প্রায় ৭ একর এবং আব্দুল মালেকের ৪ একর জমি ধানসহ ঢলের পানিতে আসা বালুতে ঢেকে নষ্ট হয়ে গেছে।
একই অবস্থা দড়িকালীনগর গ্রামের রমিজ মিয়ারও। তিনি বলেন, ৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা আমরা কখনো দেখি নাই। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৫০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। বন্যার কারণে এখন আমি সর্বস্বান্ত।
শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার কৃষক ফরিদ বলেন, আগাম সবজির আবাদ করছিলাম। প্রায় লাখ খানেক টাকা খরচ করেও খেতের সবজি থেকে এক টাকাও আয় হলো না।
এদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জানান, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ২০৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং নাকঁগাও পয়েন্টে ৪২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপদসীমার ১০৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেও তা বিপদসীমার ৫১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে উজান থেকে ঢলের পানি নেমে গেলেও ভাটি এলাকায় নিম্নাঞ্চলে অনেক ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে এখনো পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ কাটেনি। অনেক এলাকায় দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
এই বন্যায় জেলার বাড়ি ঘর, রাস্তাঘাট ও বাধের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। অধিকাংশ রাস্তা ভেঙে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত হয়ে গেছে। আবার কোথাও রাস্তায় পানি থাকায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
বন্যায় অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের অনেকেই বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।কিন্তু বাড়ি-ঘরে এখনও রান্নাবান্নার পরিবেশ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন বেশিরভাগই।
নালিতাবাড়ী উপজেলার বাতকুচি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, সাজেদুল ইসলাম ও হামেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না থাকায় ঘরবাড়ি থেকে ঢলের পানি নেমে গেছে। এমনকি চেল্লাখালী নদীর পানিও কমে গেছে। তবে ভাটির দিকে মানুষের ঘরবাড়ির চারপাশের পানি এখনও সরেনি।
তারা আরও বলেন, গ্রামের লোকজনের বাড়ির বাইরে চলাচলের জন্য কলার ভেলা অথবা কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ওইসব এলাকায় নৌকায় করে অনেকেই ত্রাণ দিয়ে গেছেন। এতে পানিবন্দি মানুষের উপকার হয়েছে।
তবে যেসব গ্রামের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে দ্রুত স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মেরামত করে পুনর্বাসন করা প্রয়োজন বলে তাগিদ দেন তারা।
এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তৈরি হলেও সেখানের পানিও কমতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চলমান রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদের বলা হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার পর পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া বন্যায় বিধ্বস্থ ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে টেউটিন ও নগদ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য