ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ , ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নগরে ফিরছে মানুষ পথে পথে ভোগান্তি এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো-আনু মুহাম্মদ প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছেন-জামায়াত ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক দেশে স্বস্তি এনেছে বললেন দুদু মামলার আগেই আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক, বড় পরিবর্তন আসছে আইনে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিটেন্সে ধস আয়রন ডোম চুরমার ইসরায়েলি সদর দফতর গুঁড়িয়ে দিল ইরান ইরানের কাছে ধরাশায়ী ইসরায়েল মেসিদের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ মাঠে ফেরায় তোড়জোড় গগবার অনিশ্চয়তায় ক্যাবরেরার ভবিষ্যৎ ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আয়োজক হওয়ার প্রস্তাবকে আইসিসির ‘না’ বিগব্যাশে ডাক পেলেন বাবর আজম পাকিস্তানের কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন ইউসুফ তারকাবিহীন দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলি হামলায় নিন্দার ঝড় ইরানের পাল্টা হামলার শঙ্কায় খাবার ও পানি মজুত করছে ইসরায়েলিরা সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি করুন ইরানকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

রাজশাহী নগরীতে ছাতিম ফুলের সৌরভে ক্লান্তি ভুলে পথচারী

  • আপলোড সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:৩৫:১৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১০-২০২৪ ০১:৩৫:১৬ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী নগরীতে ছাতিম ফুলের সৌরভে ক্লান্তি ভুলে পথচারী
রাশাহী প্রতিনিধি
ঋতু বৈচিত্র্যে এখন শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত। দেশের অন্য যেকোনও শহরে গেলে প্রাচীন বৃক্ষ হিসেবে দু-একটা সপ্তপর্ণা বা ছাতিম গাছের দেখা মিলেই যায়। যা হয়তো যত্রতত্র বেড়ে উঠেছে অনাদরে, অযত্নে ও অপরিকল্পিতভাবে। কিন্তু একমাত্র রাজশাহী শহরেই নগর সড়কের দুই ধারের ফুটপাতে একটির পর একটি ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছে একেবারে পরিকল্পনা করে। নিয়মিত যত্ন যেমন নেওয়া হয়েছে, তার বহুগুণ সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে নগর প্রকৃতিতে। যে ঘ্রাণ সত্যিই যে পথচারীসহ যাত্রীদেরও মোহমুগ্ধ করছে! ‘অপু বলিলো, কী ফুলের গন্ধ বেরোচ্ছে না দিদি? তাহাদের মা বলিলো, তাহাদের জ্যেঠামশায়ের ভিটার পেছনে ছাতিম গাছ আছে, সেই ফুলের গন্ধ। তাহার পর সকলে গিয়া ঘুমাইয়া পড়ে। রাত্রি গভীর হয়। ছাতিম ফুলের উগ্র সুবাসে হেমন্তের আঁচলাগা শিশিরাদ্র নৈশবায়ু ভরিয়া যায়। মধ্যরাতে বেনুবনশীর্ষে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের ম্লান জ্যোৎস্না উঠিয়া শিশিরসিক্ত গাছপালার ডালে পাতায় চিকচিক করছে।’
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালি’ উপন্যাসে সে ছাতিম ফুলের বর্ণনা দিতে গিয়ে যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন লেখক, বর্তমান সময়ের কবি-সাহিত্যিক ও লেখকদের মন ও শব্দভান্ডার দুটোকেই ভিন্নমাত্রা দিতে পারে রাজশাহীর রাতের নগর। রাজশাহী নগর প্রকৃতিতে ছাতিমের ঘ্রাণ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত বছরও সুঘ্রাণ ছড়িয়েছে ছাতিম। থরে থরে ধরেছে ফুল। পথচারীদের মন কেড়েছে। তবে বছর ঘুরতে গাছ যেমন নিজেকে উন্নত করেছে, ফুলগুলোও হয়েছে সমৃদ্ধ। বেড়েছে সুঘ্রাণের মাত্রা। ফুলের ঘ্রাণের মোহ রাস্তা থেকে পৌঁছেছে ঘরেও। এমন মনমাতানো তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ যেন নগরবাসী আগে কখনো পায়নি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে নগরীর বিভিন্ন চওড়া ফুটপাতে প্রায় ৫৬০টি ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর রেলগেট থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত, সিপাইপাড়া জেলখানার পেছনের সড়কের ফুটপাত, উপশহর, সপুরাসহ বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে এসব ছাতিম গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রেলগেট থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে লাগানো হয়েছে ৩৫০টি ছাতিম গাছ। এসব গাছ এখন ফুলে ফুলে নুয়ে পড়ার অবস্থা। রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুরে রোগী নিয়ে এসেছিলেন সাজ্জাদ আলী। বাবার অসুস্থতার মাঝে চারপাশের প্রকৃতি তার কাছে ছিল ভীষণ বিদঘুটে। সুযোগ করে ফুটপাতের কাছে এসেছিলেন চা খেতে। হঠাৎ আবিষ্কার করলেন প্রশান্তিময় সুঘ্রাণ। চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন ছাতিমের সুঘ্রাণ তাকে প্রশান্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘দিনে এই ঘ্রাণ পাইনি। সন্ধ্যার পর ছাতিম ফুলের এমন তীব্র মিষ্টি গন্ধ যেভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, তা অশান্ত মনকে নিমিষেই শান্ত করতে পারে।’ জানা যায়, ২০১৯ সালের পর থেকে শহরের বিভিন্ন পথের ধারে ফুটপাতে ছাতিম গাছ লাগাতে শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। ‘জিরো সয়েল প্রজেক্টের’ মাধ্যমে রাজশাহী সিটির সড়ক বিভাজক ও ফুটপাতে লাগানো শুরু হয় এসব গাছ। এই প্রজেক্টের পার্টনারশিপে ছিল ‘একলি সাউথ এশিয়া’ নামের একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন এবং নরওয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। ছাতিম গাছ ‘অ্যাপোসাইনেসি’ বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছটি বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে। ছাতিম মূলাবর্তে সাতটি পাতা একসঙ্গে থাকে বলে সংস্কৃত ভাষায় একে ‘সপ্তপর্ণ’ বা ‘সপ্তপর্ণা’ নামে ডাকা হয়। এ গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বহু শাখাবিশিষ্ট গাছটির ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধূসর। ছাতিম পাতার ওপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর থাকে। ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা পাতা একই মূলাবর্তে ৪ থেকে ৭ টা পর্যন্ত থাকে। শাখার শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংঙে থোকায় থোকায় ক্ষুদ্রাকৃতি ফুল ফোটে। ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা সরু ফল এক বৃন্তে সাধারণত দুটো করে ঝুলে থাকে। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে একগোছা চুল থাকে। ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতো সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর পরিমাণে থাকে। এর ঔষধি গুণও চমৎকার।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য