ঢাকা , সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫ , ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার পদত্যাগ ঈদের লম্বা ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে শিডিউল বিপর্যয় অবৈধভাবে ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগে টিউলিপকে দুদকের তলব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিহত দুই কর্মীকে নিয়ে জামায়াত-বিএনপি ঠেলাঠেলি মোসাদের দুই গুপ্তচরকে আটক করেছে ইরান ১০ দিনের ছুটি শেষে খুলেছে সরকারি অফিস খেলাপি ঋণ ছাড়াল ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা যারা খেলে খেলুক আমরা শুধু রেফারি হয়ে কাজ করব-সিইসি এনটিআরসিএতে অবস্থান নিয়েছেন ভাইভায় ফেল করা প্রার্থীরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ পুলিশের লাঠিচার্জ মানবিক পুলিশ চাচ্ছি আমরা, সবার সঙ্গে যেন ভালো ব্যবহার করে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাচার অর্থ ফেরাতে সরকার চাইলে এখনই আইনজীবী নিয়োগ সম্ভব-গভর্নর শেষ মুহূর্তে রাজধানীতে মানুষের স্রোত গ্যাস সিলিন্ডারজনিত অগ্নি দুর্ঘটনা বাড়ছে কারাগারে ‘ফাঁস নিলেন’ বিরুলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান সুজন আজ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার জরুরি বৈঠকের ডাক ইরানের হামলায় তছনছ ইসরায়েল করোনা-ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা নকলমুক্ত রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশনা ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য কফিনে শেষ পেরেক-প্রেস সচিব

নতুন অনুপ্রবেশে ঘনীভূত হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট

  • আপলোড সময় : ২২-১০-২০২৪ ১২:০৪:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-১০-২০২৪ ১২:০৪:২৮ পূর্বাহ্ন
নতুন অনুপ্রবেশে ঘনীভূত হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট
সম্প্রতি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। মূলত মিয়ানমারের আরাকানে সামরিক এবং বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধির মধ্যে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। সরকারি হিসেবে গত দেড় মাসে নতুন এমন অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আট হাজারেরও বেশি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাস্থবে নতুন করে ঢোকা রোহিঙ্গার সংখ্যা এর দ্বিগুণ। বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে। সরকার অবশ্য বলছে, নতুন করে আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দেয়ার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। যদিও মিয়ানমারে সংঘর্ষ চলতে থাকায় বাংলাদেশ যেন নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় সে বিষয়ে চাপ আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করতে পারবে কি-না সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ গত ৭ বছর ধরে মায়ানমার থেকে আগত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এর ফলে আমরা বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। তিনি বলেন, মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট এই সংকট বাংলাদেশ ও আমাদের অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত উভয় ধরণের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত চাই। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গারা যেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে তাদের নিজ ভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে, তার পথ সুগম করা দরকার। ড. ইউনূস বলেন, মায়ানমারের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা বিবেচনায় রেখে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে সরকারের এসব প্রচেষ্টার মধ্যেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ চলছে। জানা গেছে, এক শ্রেণির দালাল টাকার বিনিময়ে তাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে। স্থানীয়দের হিসাবে, গত একমাসে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তবে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের মতে, এ সংখ্যা আট থেকে নয় হাজার। সীমান্ত এলাকার লোকজন বলছে, মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহরে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। মংডু টাউনশিপ ঘিরে এ লড়াইয়ে আবারও রোহিঙ্গাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। প্রাণভয়ে ভিটেমাটি ফেলে গত একমাস ধরে মংডু ও আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এমনকি অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে টেকনাফ সীমান্ত দিয়েই বেশির ভাগ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গারা কাঠের নৌকায় করে নাফ নদী পার হয়ে দালালদের সহযোগিতায় টেকনাফে ঢুকছে। এরপর তারা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকে পড়ছে। অনেকে টেকনাফে বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও আশ্রয় নিচ্ছে। সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডসহ প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যেই আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝায় এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, এ অবস্থায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ উদ্বেগের। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থানে না গেলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে বাংলাদেশে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। সাত বছরে কাউকেই ফেরত নেয়নি মিয়ানমারের জান্তা সরকার। সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম শুরু হলেও রাখাইনের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তা থেমে যায়। নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা নতুন আগতদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিল, যা সরকার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইউএনএইচসিআরকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের পক্ষে আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। জানা গেছে, এ অবস্থায় বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা ও টহল বাড়িয়েছে বিজিবি। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স