ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা, নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মডেল মেঘনার জব্ধকৃত মালামাল ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির আদেশ সারাদেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মেলিওডোসিস ওয়ারড্রব ম্যালফাংশনের শিকার হলেন জেনিফার লোপেজ এবার প্রাক্তন স্বামীর ৩০ হাজার কোটির সম্পত্তিতে ‘চোখ’ কারিশমার অক্ষয় কুমারের ফিটনেস রহস্য ফাঁস! বিপাকে রাজকুমার! জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে জয়ার নতুন সিনেমা সবাইকে কেন সতর্ক করলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান? আবারও রায়হান রাফী ও তমা মির্জার প্রেমে ভাঙন বিএনপির ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে আপসহীন খালেদা জিয়া ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টের মধ্যে জারি করতে হবে : নাহিদ ইসলাম বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রানওয়েতে স্কুলের পারমিশন যারা দিয়েছে তাদের ধরতে হবে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একই দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চায় এনসিপি ও ছাত্রদল দেশকে পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান-ফখরুল রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির
প্রতিযোগিতা কমিশনের সংস্কার ছাড়া বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে না সরকার

পণ্যের দামে নাজেহাল মানুষ

  • আপলোড সময় : ২৯-১০-২০২৪ ১২:২৫:৫০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-১০-২০২৪ ১২:২৫:৫০ পূর্বাহ্ন
পণ্যের দামে নাজেহাল মানুষ
* প্রতিযোগিতা কমিশনে অর্থনীতিবিদ নেই। নেই আইন বিশেষজ্ঞ
* কমিশনের একাধিক আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন
* কমিশনের আর্থিক বিষয় নিয়ে হয়েছে জনস্বার্থে মামলা, যেগুলো এখনো বিচারাধীন
* ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠিত হয়নি।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় নাজেহাল সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা সব জায়গায়। নিত্যপণ্যের এই বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এসব কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে প্রতিযোগিতা কমিশনের সংস্কার চান সংশ্লিষ্টরা। তবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগে প্রতিযোগিতা কমিশনের আইনি কাঠামোর সংস্কার দাবি করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সৃষ্টি হয়েছে বাজারে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, জোটবদ্ধভাবে দ্রব্যমূল্যর মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের লক্ষ্যে। কমিশন একটি বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। তবে এখানে নেই আইন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিযোগিতা কমিশন সঠিকভাবে কাজ করলে অনেকটাই লাঘব হতো বাজারে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা। প্রশ্ন হলো, ডিম ও মুরগির দাম কমাতে আইন মেনে কতটুকু যথার্থভাবে কাজ করছে প্রতিযোগিতা কমিশন? আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে হঠাৎ ২০২২ সালের আগস্টে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে যায়। বলা হলো সিন্ডিকেটই এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ। প্রতিযোগিতা কমিশন বাজার নিয়ন্ত্রণে তড়িঘড়ি করে স্বপ্রণোদিত মামলা দিলো বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পোলট্রি খামার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি বন্যা বৃষ্টি, ও গরম আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজারো প্রান্তিক খামার। বাজারে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের সরবরাহ ঘাটতি। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশন সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত না করে পোলট্রি খামারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। খামারিদের ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। সেদিন সভায় কমিশনের সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সিন্ডিকেট ভাঙবোই। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। যদি সহযোগিতা না করেন তাহলে প্রতিযোগিতা কমিশনের ক্ষমতা আছে আপনাদের বড় অঙ্কের শাস্তি দেয়ার।
এদিকে কমিশনের একাধিক আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন, তাছাড়া কমিশনের আর্থিক বিষয় নিয়ে করা হয়েছে জনস্বার্থে মামলা, যেগুলো এখনো বিচারাধীন। কমিশনের নিজের কাছেও রয়েছে বিচারাধীন কয়েক ডজন মামলা। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশন বা তার কোনো সদস্যের যাকে তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা কতটুকু আইনসম্মত সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিযোগিতা আইনবিদ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন করতে হবে অর্থনীতি, আইন ও বাজার বিষয়ে অনূন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে কখনোই অর্থনীতি, আইন বা বাজার বিষয়ে অনূন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠিত হয়নি। যার ফলে প্রতিযোগিতা কমিশন তার করণীয় কার্যক্রম ভুলভাবে সম্পাদন করেছে। পাশাপাশি আইন ভঙ্গ করেছে এবং কমিশনের অনেক কার্যক্রমও যে বেআইনি তা স্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে।
যা কমিশন একের পর এক করে গেছে এবং এখনো করছে। সঙ্গত কারণেই হাইকোর্ট কমিশনের বেশ কয়েকটি আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আমি মনে করি দেশের ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আইনে উল্লেখিত পন্থায় পুনর্গঠন করতে হবে। এবং কার বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বা শাস্তি দিতে হলে তা আইন মেনে করতে হবে। মামলার কার্যক্রম ভুলভাবে পরিচালনা করা বন্ধ করতে হবে। যা এখনও কমিশন করে আসছে। আর তা না হলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে। যাতে করে বাজারে পণ্যের যোগানে ঘাটতি দেখা দেবে ও বাড়তে থাকবে পণ্যের মূল্য, অস্থিতিশীল হবে বাজার। আর এর খেসারত দিতে হবে দেশের জনগণ ও অর্থনীতিকে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনকে সংস্কার করে নতুন রুপে গঠন ও আইনসম্মতভাবে কার্যাবলি সম্পাদন নিশ্চিত করণে জাতীয় স্বার্থে হাইকোর্ট বিশেষ দিকনির্দেশনামূলক আদেশ দিতে পারে। প্রয়োজনে আমরা এ বিষয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনব।
বাংলাদেশ ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, মামলা দিয়ে আপনারা পোলট্রি কোম্পানিগুলোকে এত বিরক্ত করেছেন যে বিনিয়োগের পরিবেশ এখন নেই। মামলাগুলো আপনাদের প্রত্যাহার করা উচিত।
বাংলাদেশ ব্রিডারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কাজী জাহিন হাসান বলেন, ডিমের বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার উৎপাদনকারী ও পাইকারি বিক্রেতা বেচাকেনা করেন। ডিমের বাজার একটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার। প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে না। বন্যা, গরম ও অতিবৃষ্টির কারণে অনেক প্রান্তিক খামার ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে করে ডিমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিমের যোগান কম। তাছাড়া মুরগির খাদ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। কাজী জাহিন হাসান আরও বলেন, আপনারা একজন কমিশনে একজন অর্থনীতিবিদ নিয়োগ দিয়ে বাজার বিশ্লেষণ করেন। তাহলে কোথায় সমস্যা আপনারা বুঝতে পারবেন।
প্রতিযোগিতা কমিশনের দুর্বলতা নিয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ এ নাসের বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাজার বিশ্লেষণ করা। কেন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি হলো, এর পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে, সেটা খুঁজে বের করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রতিযোগিতা কমিশনে বাজার গবেষণা করার জন্য একজন অর্থনীতিবিদও নেই। আবার এই কমিশনে একজন আইন বিশেষজ্ঞ নেই। আমি মনে করি প্রতিযোগিতা কমিশনকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হলে এখানে অর্থনীতিবিদ প্রয়োজন। আইনি কাঠামো স্বচ্ছ করা প্রয়োজন।
আইনি কাঠামোর সংস্কার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির বলেন, সত্যিকার অর্থে সচ্ছতা ও ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ এর ৩৭ (২) ধারা অবিলম্বে বাতিলপূর্বক প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ সংস্কার করা জরুরি। তা না হলে কমিশনের ও সরকারের উপর জনগণের এবং অংশীজনদের আস্থার সংকট বাড়বে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স