* দেশে ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ হাজার ৫৮০টি
* ১ হাজার ৪১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অনুপস্থিত
* সকল ইউপির জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করলে বিকল্প হিসেবে ৫৪ হাজার ৯৬০ জন প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশের বিপুলসংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজ কার্যালয়ে হাজির হচ্ছেন না। তাদের অনুপস্থিতি তীব্র হচ্ছে নাগরিক দুর্ভোগ। বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৪ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অনুপস্থিত, যা মোট ইউনিয়ন পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ। আর কত সংখ্যক ইউপি সদস্য বা মেম্বার অনুপস্থিত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনুপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা মূলত পলাতক। বেশির ভাগের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। তাঁরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে। আবার কেউ কেউ নিজেদের ওপর হামলা হবে এমন আশঙ্কা থেকে কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউপি চেয়ারম্যানরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। তাছাড়া ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে। গ্রামে বিভিন্ন সালিস, নতুন রাস্তা নির্মাণ, পুরোনো রাস্তা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হয়ে থাকে। চেয়ারম্যান না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ওসব সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আর সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিপুলসংখ্যক ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রশাসন ৭৮৬টি ইউনিয়ন পরিষদে এরই মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া ইউনিয়নে প্রশাসক হিসেবে হয় ইউএনও নয়তো এসি ল্যান্ড (অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, ভূমি) দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকেই অপসারণের চিন্তাভাব?না করছে। তবে তৃণমূলের ওসব জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করার পর সেখানে বিপুলসংখ্যক প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। আর এত কর্মকর্তা কোথায় পাওয়া যাবে কিংবা ওই প্রশাসকেরা আদৌ কাজ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে। তবে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞদের মতে, ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে না দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে পরিষদ পরিচালনা করলেই বেশি কার্যকর হবে। সূত্র আরো জানায়, একতরফা বিগত স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ওই নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় বিরোধীরা সুযোগ পায়নি। যে কারণে অনেকেই ওই নির্বাচন বাতিল করে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ চান। সকল ইউপির জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করলে বিকল্প হিসেবে ৫৪ হাজার ৯৬০ জন প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ইউনিয়ন পরিষদ চালানো মুশকিল হবে। তাঁদের নিজেদের কাজ রয়েছে। ফলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তার চেয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে পরিচালনা করাই ভালো হবে। সরকার গত আগস্টে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি সব পৌরসভার মেয়রকে অপসারণ করেছে। ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলরদের পাশাপাশি পৌরসভার কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করা হয়। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিলে কিংবা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করলে প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাবে। নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের (মেম্বার) অপসারণ না করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা মেয়াদ শেষ করতে চান। এর আগে অপসারণ চান না। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দেয়া ভালো সিদ্ধান্ত হবে না। এতে নাগরিক সেবা ব্যাহত হবে। চেয়ারম্যানদের পরিবর্তে যাঁদের দায়িত্ব দেয়া হবে, তাঁরা নাগরিকদের সেবা দিতে পারবেন না। তবে যাঁরা পলাতক, সরকার চাইলে শুধু তাঁদের অপসারণ করতে পারে। যেসব ইউপিতে চেয়ারম্যানরা আসছেন না, সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে কাজ করা যেতে পারে। তবু প্রশাসক নিয়োগ নয়। ইউপিতে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিলে কাজের কাজ কিছু হবে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিত নাগরিক সেবা ব্যহত
- আপলোড সময় : ০৯-১১-২০২৪ ০৩:৩১:৪৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-১১-২০২৪ ০৩:৩১:৪৬ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ