ঢাকা , বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ , ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সবাই মিলে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ হয়েছে-আলী রীয়াজ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বদলিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য ১৭ অভিনয়শিল্পীর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন রাস্তায় অভিনেতাকে সিদ্দিককে গণপিটুনি কারিগরি শিক্ষার্থীরা যা শিখছেন, চাকরির বাজারে তার চাহিদা নেই -সিপিডি আগামী নির্বাচনে সীমিত পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটের প্রস্তুতি চলছে : সিইসি জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশকে উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে গড়িমসি অপকর্ম বন্ধ করুন, নইলে বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে -নেতাকর্মীদের ফখরুল সভ্য হতে হলে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে হবে : এনবিআর চেয়ারম্যান বইপ্রেমী এক ডিসির গল্প গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই বোন ই-৮ ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলেন ২৫ কর্মী পুলিশের জন্য ১৭২ কোটি টাকায় কেনা হবে ২০০ জিপ সামাজিক সুরক্ষায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার উপকারভোগী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনে লিপ্ত থাকার অভিযোগ গ্যাস খাতে বছরে আর্থিক ক্ষতি বিলিয়ন ডলার নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি

পুলিশ কমিশন জরুরি, এটা পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছেÑ সাখাওয়াত হোসেন

  • আপলোড সময় : ১০-১১-২০২৪ ০৪:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-১১-২০২৪ ০৪:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন
পুলিশ কমিশন জরুরি, এটা পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছেÑ সাখাওয়াত হোসেন

পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি, এ দাবি পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক বলয়মুক্ত ও স্বচ্ছ বাহিনীতে রূপান্তর করতে চাইলে, কমিশন গঠনের মাধ্যমেই পুলিশ বাহিনীকে মানবিক করে তুলতে হবে। একজন সিনিয়র বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মধ্যে কমিশনের সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পুলিশের নিয়োগ পক্রিয়া কমিশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট হলে ‘জনমুখী পুলিশ সেবা নিশ্চিতকল্পে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) চলমান জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর ওপর গবেষণা উদ্যোগের একটি অংশ। মূলত জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে এ আয়োজন করা হয়। ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার পতনের পর পুলিশ কর্মবিরতিতে গিয়েছিল। তখন তারা ৯টা দাবি তুলেছিল। এরমধ্যে প্রথম দাবিই ছিল পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কেননা তারা জানে বিদ্যমান আইনে পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ কমিশন গঠন না হলে আবারও পুলিশ রাজনৈতিক অবয়বের মধ্যে যাবে। তাই এই দাবি পুলিশের পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে পুলিশ কমিশন গঠন করা খুবই জরুরি। পুলিশে তিন স্তরের নিয়োগের ফলে অনেক পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের নিয়োগ পক্রিয়া ?দুটি স্তরে করা উচিত। এছাড়া অধস্তন পুলিশদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপারদের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তত এক বছর থানার কাজ করার পর তাদের দায়িত্ব দেয়ার দরকার। বিগত সময়ে পুলিশ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে প্রতিটি সাধারণ পুলিশে পোস্টিংয়ের জন্য এক লাখ টাকা ও ওসির বদলির জন্য এক কোটি টাকা বাণিজ্য হয়েছে। এটা যদি হয়, তাহলে এই পরিস্থিতিতে আর কী আশা করা যায়। ফলে আমাগীর পুলিশকে একটি আদর্শিক পুলিশের বাহিনীতে রূপান্তর করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে পুলিশকে জনসাধারণরে সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেমিনারের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম ও পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং সোশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতান পুলিশ সংস্কারের একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ এবং একটি সম্ভাব্য পুলিশ কমিশন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেশের কমিউনিটিতে পুলিশদের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের জনমুখী পুলিশিং ব্যবস্থা তৈরি করা যায়। যা পুলিশিং এবং কমিউনিটি সেবার মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপন করবে। ড. মো. রিজওয়ানুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন থাকা জরুরি। তা অবশ্যই সরকার এবং পুলিশ এই দুই ক্ষেত্রেই ভালো হবে। পুলিশ কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বর্তমানে এক সংকটময় অবস্থায় আছে। বছরের পর বছর ধরে রাজনীতিকরণ, জবাবদিহিতার অভাব এবং জনগণের আস্থাহীনতার কারণে পুলিশ বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ফলে পূর্ববর্তী সরকারের পতন এ সংকটকে আরও স্পষ্টভাবে সামনে নিয়ে আসে। এই আন্দোলন পুলিশ বাহিনীর অসধাচরণ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে জনগণের ব্যাপক অসন্তোষকে তুলে ধরে। এর ফলে পুলিশ স্টেশন ও কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ এবং অনেক এলাকায় কার্যকর আইন প্রয়োগের অভাব দেখা দেয়। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আলোচকরা বলেন, ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসআইপিজি পরিচালিত তিনটি ভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, পুলিশ বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা নাটকীয়ভাবে কমেছে। ২০১৫ সালে পুলিশের ওপর জনসাধারণের আস্থা ছিল ৪৫ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে মাত্র ১১.১ শতাংশে নেমে এসেছে। পুলিশ বাহিনীকে জননিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষার বাহিনী হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্মমতা, গুম এবং বিরোধী কথা দমনের মতো ঘটনায় জনগণের আস্থা ভেঙে পড়েছে। যা পুলিশ বাহিনীকে একটি পেশাদার ও জনমুখী সেবাদানকারী সংস্থায় পরিণত করার জন্য ব্যাপক সংস্কারকে অত্যাবশ্যক করে তুলেছে। পুলিশ কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করবে। যেখানে রাজনৈতিক প্রতিনিধি ও সাধারণ নাগরিকদের সমন্বয় থাকবে। কমিশনে বিচার বিভাগ, মানবাধিকার সংস্থা, প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম পার্বত্য, সাংবাদিক এবং তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবে। এছাড়াও কমিশনের মূলনীতি হবে স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং জনগণের সম্পৃক্ততা। কমিশনের অধীনে একটি ‘পুলিশ অভিযোগ শাখা’ গঠন করা হবে। যা অসদাচরণের অভিযোগগুলো সমাধানের জন্য কাজ করবে। এতে পুলিশ বাহিনীর যথাযথ কমান্ড চ্যানেল বজায় রেখেই জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসআইপিজি পরিচালক অধ্যাপক শেখ তাওফিক এম. হকের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম জহিরুল ইসলাম, পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজি মাহবুব উল করিম, সেশনের সমাপনী বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ