ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ , ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পাচার অর্থ ফেরাতে সরকার চাইলে এখনই আইনজীবী নিয়োগ সম্ভব-গভর্নর শেষ মুহূর্তে রাজধানীতে মানুষের স্রোত গ্যাস সিলিন্ডারজনিত অগ্নি দুর্ঘটনা বাড়ছে কারাগারে ‘ফাঁস নিলেন’ বিরুলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান সুজন আজ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার জরুরি বৈঠকের ডাক ইরানের হামলায় তছনছ ইসরায়েল করোনা-ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা নকলমুক্ত রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশনা ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য কফিনে শেষ পেরেক-প্রেস সচিব ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ গেল ৫ জনের পঞ্চগড়ের দুই সীমান্ত দিয়ে চার ভারতীয়সহ ১৬ জনকে পুশইন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসছে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ বাস কম যাত্রী বেশি, বাড়তি টাকা দিয়েও মিলছে না টিকিট বেনাপোলে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর লিজ দেয়া হবে না পরিবেশ উপদেষ্টা যৌথ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধÑ খেলাফত মজলিস ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ অ্যাডমিন বর্ষা গ্রেফতার মৌসুমি ফলে ভরপুর বাজার দাম নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতাদের সিলেটে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু রোগী ও স্বজনদের মারধর করলেন ওয়ার্ড বয়

টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড সংশোধনে বিলম্ব

  • আপলোড সময় : ১৬-১১-২০২৪ ০২:০৭:৩৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-১১-২০২৪ ০২:০৭:৩৯ অপরাহ্ন
টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড সংশোধনে বিলম্ব

৪৩ লাখ কার্ডধারী পরিবার অনিশ্চতায়
* ‘টিসিবির ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়েছে’Ñ এমন খবরে তোলপাড় চলছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল
* দেশের অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড মেম্বাররা পলাতক, ফলে মাঠ পর্যায়ে টিসিবির কার্ড যাচাই-বাছাইয়ে বিপাকে ডিসি ও ইউএনও

নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের সংশোধন। এর ফলে ৪৩ লাখ কার্ডধারী পরিবার কবে নাগাদ স্বল্প মূল্যে টিসিবির পণ্য পাবেন তা এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। অথচ বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এই টিসিবির পণ্যই হতে পারে গরিব পরিবারের জন্য বড় সহায়তাÑ এমনটাই মনে করেন কার্ডধারী সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আশাহত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া রমজানের আগেই দেশের এক কোটি পরিবার টিসিবির পণ্য হাতে পাবেন।  
জানা গেছে, ‘এক পরিবার এক কার্ড’Ñএই নিয়মেই হওয়ার কথা ছিল (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড। অথচ দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ সরকার এই কার্ডকে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। আওয়ামী লীগ নেতারা কখনও দলীয় কর্মীদের পরিবারকে আবার কখনও সুবিধা নেয়ার মধ্যদিয়ে এক পরিবারকে একাধিক কার্ড দিয়েছে। যে পরিবারে বাবার নামে কার্ড আছে, সেই পরিবারে মায়ের নামেও কার্ড আছে। আবার একই পরিবারের ছেলের নামেও আছে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতদিন এভাবেই চলছিল। অথচ এটি হওয়ার কথা নয়। এ কারণেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার পরিমাণ ৪৩ লাখেরও বেশি। যাচাই-বাছাই শেষ করে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে একটি ফ্রেশ তালিকা তৈরি করে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে টিসিবিতে পাঠানোর জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার কাঠামো সচল না থাকায় কাজটি জটিল হওয়ায় তা সম্ভব নয়। আরও বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ‘টিসিবির ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়েছে’Ñ এমন খবরে তোলপাড় চলছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল। অনেকেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এসে খবর নিচ্ছেন কবে নাগাদ তারা টিসিবির পণ্য পাবেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ভেঙে দেয়া হয়েছে সিটি করপোরেশন। ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে না দিলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে দেশের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড মেম্বাররা হয় পলাতক, না হয় আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে মাঠ পর্যায়ে টিসিবির কার্ড যাচাই-বাছাই করার কাজটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)।            
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাপক অনিয়ম পাওয়ায় টিসিবি’র ৪৩ লাখ কার্ড বাতিল নয়, কার্ডের কার্যকারিতা স্থগিত রয়েছে। কারণ হাতে লেখা কার্ডগুলো স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডে রূপান্তর করতে গিয়ে এই অনিয়ম ধরা পড়েছে। নানা জটিলতায় সব কার্ড স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করা এখনও সম্ভব হয়নি। তাই এখনও আগের হাতের লেখা কার্ডেই টিসিবির পণ্য বিতরণ করতে হচ্ছে। তবে যাচাই-বাছাইসহ স্মার্ট কর্ডে রূপান্তরের কাজটিও চলমান বলে জানিয়েছে টিসিবি সূত্র।
টিসিবি জানিয়েছে, ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি পণ্য পাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে কিনা তাও সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবির উপ-পরিচালক (মুখপাত্র) হুমায়ূন কবির বলেন, অনিয়মের কারণে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ৪৩ লাখ কার্ড বাতিলের বিষয়টি সঠিক নয়। এক কোটি পরিবার কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখ কার্ডকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। বাকি ৪৩ লাখ কার্ড স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এখন তথ্য হালনাগাদ ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে যদি কোনও কার্ডে অনিয়ম ধরা পড়ে সেই কার্ড বাতিল করা হবে। এখন এক কোটি কার্ডধারী সবাইকে পণ্য দেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, কার্ডগুলো স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরে তথ্য হালনাগাদ করার জন্য টিসিবির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে চারবার চিঠি দেয়া হয়েছে।
হুমায়ুন কবির আরও বলেন, কার্ডধারীদের তথ্য পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জনসহ (যদি প্রয়োজন হয়) হালনাগাদ বিভিন্ন তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনে সাম্প্রতিক রদবদলের কারণে টিসিবির হাতে এসব তথ্য এখনও আসেনি। সে জন্য বাকি ৪৩ লাখ কার্ড স্মার্ট কার্ডে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে সময় লাগছে। এখন পুরোনো কার্ডে পরিবারগুলোর কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, এক কোটি হাতে লেখা কার্ড যখন এনআইডি’র সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন করা হয়েছে তখন দেখা গেছে, একই এনআইডি দিয়ে ঢাকায় একবার কার্ড নিয়েছে, আবার নিজের গ্রামের বাড়িতে হয়তো আরেকটা কার্ড করেছে। যার ফলে যখন আমরা এনআইডি দিয়ে যাচাই করতে গেলাম, তখন ৪৩ লাখ কার্ড বাদ পড়ে গেছে।
টিসিবির উপপরিচালক (মুখপাত্র) বলেন, একটি পরিবার যাতে একটি কার্ডের বেশি না পায়, সেজন্য আমরা স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড হয়েছে। বাকি কার্ডগুলো করার জন্য আমরা জেলা প্রশাসন এবং সিটি করপোরেশনকে চার দফা চিঠি দিয়েছি। সম্প্রতি বেশ কিছু জেলা প্রশাসনে রদবদল হয়েছে। সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে এই তথ্যগুলো না পাওয়ার কারণে বাকি কার্ডগুলো আমরা এখনও শনাক্ত করতে পারিনি। এ কারণে সময় লাগছে। বিষয়টি কয়েক দিন আগে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেও জানিয়েছিলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলা বেগম টেলিফোনে বলেন, ‘টিসিবির পণ্য পাচ্ছি না। আমার কার্ডে নাকি ঝামেলা আছে। পুরান কার্ড নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তারা বলেছে এখন নতুন কার্ড হবে। তখনই টিসিবির পণ্য পাবো।’
ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, টিসিবির কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। কাজটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে। বিষয়টি ইউএনও মহোদয় মনিটরিং করছেন।
 
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, চট্টগ্রামেও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। এক পরিবারে একটি কার্ড থাকার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে একাধিক। এছাড়া আরও অনিয়ম রয়েছে। যারা এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য নয়, তাদেরও দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে অনেকে দরিদ্র পরিবার সরকারের দেয়া এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সব অনিয়ম দূর করে একটি সুন্দর নিরপেক্ষ তালিকা করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কাজ করছে। এ কাজের সঙ্গে এডিসি, ইউএনও, জনপ্রতিনিধি এবং ছাত্র সমন্বয়কদেরও যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি জানান, কাজটি জটিল। অনেক জায়গাতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পাওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের যুক্ত করে কাজটি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আশা করছি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে পারবো।’
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, এই কাজটি প্রত্যেক ইউএনওকে দেয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় প্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন। আমার জেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিয়ে তেমন জটিলতা নেই। ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চারটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত। সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যত্র প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে কাজ চলছে। কাজেই টিসিবির কার্ডধারীর তালিকা চূড়ান্ত করতে বেশি সময় লাগবে না।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স