ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরিবর্তন আসছে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায় সবাইকে ছাতার নিচে আনতে ভিত গড়ছে ঐকমত্য কমিশন জুনে ৩২৪টি রাজনৈতিক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত : সিজিএস অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের সময় এসেছে-দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গাজীপুরে আসন বাড়ছে কমছে বাগেরহাটে : ইসি ৩৯টি সংসদীয় আসনে আসছে পরিবর্তন : ইসি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে ১৫ সদস্যের কমিটি শান্তি মিশনে মানের দিক থেকে শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাশিয়ায় ভূমিকম্পের পর আঘাত হেনেছে সুনামি কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড জুলাইয়ের আহত-নিহতদের তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে-মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা সবুজায়ন স্বপ্নে খরা ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৬ সড়কে আলু ফেলে নওগাঁর কৃষকদের মানববন্ধন রাজধানীতে মাসে ২০টিরও বেশি হত্যা ও ৫টি ডাকাতি হচ্ছে রিয়াদের বাসা থেকে আড়াই কোটির চেক-এফডিআর নথি উদ্ধার এনসিপির সমাবেশে হামলায় আরেক মামলা আসামি সাড়ে ৫ হাজার তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে হচ্ছে কমিটি : ধর্ম উপদেষ্টা ভয়াবহতার মূলে এডিস মশার অস্বাভাবিক প্রজনন

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বরণীয় স্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব

  • আপলোড সময় : ০৮-০৫-২০২৪ ১০:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-০৫-২০২৪ ১০:৩৪:৫৯ অপরাহ্ন
পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বরণীয় স্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া
মানিক লাল ঘোষ
বরণীয়, স্মরণীয় আর অনুকরণীয় মানুষের সংখ্যা আজ খুবই কমযতই দিন যাচ্ছে  ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ আর আত্মঅহমিকা আমাদের মনমানসিকতাকে ক্রমাগত গ্রাস করে ফেলছেঅধিকাংশ মানুষের মধ্যেই যেনো আমি কী হনুরে ভাব! সমাজের প্রচলিত এই ধারার বিপরীতে নির্লোভ ও নিরহংকারী মানুষের আজ বড়ই অভাবসেই হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াব্যক্তি জীবনে তিনি কতটা নির্লোভ ও নিরহংকারী ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু না থাকলেও এই প্রজন্মের কাছে তার জীবনাদর্শ তুলে ধরা জরুরিক্ষমতার খুব কাছাকাছি থেকেও এম এ ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন সাদামাটা এক মানুষএকটি স্বাধীন দেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা হয়েও অতিসাধারণ জীবনযাপন করেছেন তিনিপ্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনোই ক্ষমতার ব্যবহার করেননিবরং নীরবে নিভৃতে সারাজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন ড. ওয়াজেদ মিয়া১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেহপুর গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এম এ ওয়াজেদ মিয়াতিনি তার কাজ দিয়ে একদিকে পীরগঞ্জের মানুষকে গর্বিত করেছেনঅন্যদিকে বহির্বিশ্বের কাছেও বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন তার বিজ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়েতিনি নিভৃত এক পল্লী থেকে উঠে এসেছেননিজের যোগ্যতায় সব চড়াই-উতরায় পেরিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেনসততা আর দেশপ্রেম দিয়ে পরবর্তী জীবনেও আত্ম মর্যাদায় ধরে রেখেছেন তার অবস্থানমৃত্যুর পরেও তাকে অমরত্ব এনে দিয়েছে তার কৃতকর্মমরহুম আবদুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জুননেছার সন্তান এম এ ওয়াজেদ মিয়া সুধা মিয়া নামে সবার কাছে পরিচিত ছিলেনমানসম্মত লেখাপড়ার জন্য তাকে রংপুর জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়সেখান থেকেই তিনি ডিসটিনকশনসহ প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস করেন১৯৫৬ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন
১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করেন১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় থেকেই রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন তিনিমেধার চর্চা করে নিজেকে পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি রাজনীতির প্রতি তার একটি সুগভীর আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছেন১৯৬১ সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হনফজলুল হল ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের মনোনয়নে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হনসেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হলে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেনপরে তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হনএর মধ্য দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ ও নীবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসি পাস করার পর ১৯৬৩ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনে চাকরিতে যোগ দেন১৯৬৭ সালে লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আাসেন তিনিএকই বছর ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তরুণ বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া১৮৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে এম এ ওয়াজেদ মিয়াও অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হনস্ত্রী শেখ হাসিনা ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসময়ে জার্মানিতে ছিলেন তিনিতাদের সাথে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাজার্মানিতে ৭ বছর নির্বাসিত জীবনে বিজ্ঞান চর্চা ব্যাহত হয় এই তরুণ বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ারতা না হলে জাতিকে আরো অনেক কিছু দিতে পারতেন তিনিস্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের কারণে কিছুদিন কারাবরণও করেন তিনি
১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আগে ও পরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও ছাত্র আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্যড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯৯ সালে অবসর নেনঅবসর গ্রহণের আাগে ১৯৯৭ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পুনঃবাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়াতার রূপপুর আজ আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতাকাজ পাগল পরমাণু বিজ্ঞানী তার মেধাকে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে লেখক হিসেবে ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেনএম এ ওয়াজেদ মিয়া স্নাতক পর্যায়ের বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেনইংরেজিতে লেখা গ্রন্থদ্বয়ের নাম ঋঁহফধসবহঃধষং ড়ভ ঞযবৎসড়ফুহধসরপং এবং ঋঁহফধসবহঃধষং ড়ভ ঊষবপঃৎড়সধমহধঃরপংতার অন্যতম গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়৪৬৪ পৃষ্ঠার সুপরিসর এই গ্রন্থে বাংলাদেশের বহুল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঘটনার বর্ণনা রয়েছেতার আরেকটি গ্রন্থের নাম বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র যা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়তার লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক গ্রন্থ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে
২০০৯ সালের ৯ মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান এম এ ওয়াজেদ মিয়াতার শেষ ইচ্ছানুযায়ী পীরগঞ্জের ফতেহপুরে বাবা মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জামাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী হওয়া সত্ত্বেও তার সাধারণ জীবনযাপনের প্রভাব পড়েছে পুরো পরিবার জুড়েনিজের কথা না ভেবে ড. ওয়াজেদ মিয়া সারাজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণের কথাই ভেবেছেনসন্তানদের ও গড়ে তুলেছেন একই চিন্তা-চেতনায়বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা আজ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া-শেখ হাসিনার পুত্র ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার সজীব ওয়াজেদ জয় তারুণ্যের অহংকার
তিনি সমৃদ্ধ আগামীর প্রতিচ্ছবিআর মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা সবাই আজ বিশ্বজুড়ে আলোকিতদেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে তারাআর এটা সম্ভব হয়েছে পারিবারিক সততা, দেশপ্রেম, কাজের প্রতি ভালোবাসা ও নির্লোভ থাকার কারণেমা চারবারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে অবস্থান করে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেএই শিক্ষা তারা পিতা এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কাছ থেকেই পেয়েছেতাই নিঃসন্দেহে বলা যায় নিরহংকারী, নির্লোভ পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম এম এ ওয়াজেদ মিয়ার জীবনাদর্শ আগামী প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়

লেখাক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য