ঢাকা , শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫ , ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পরিবর্তন আসছে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায় সবাইকে ছাতার নিচে আনতে ভিত গড়ছে ঐকমত্য কমিশন জুনে ৩২৪টি রাজনৈতিক মিথ্যা তথ্য শনাক্ত : সিজিএস অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের সময় এসেছে-দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গাজীপুরে আসন বাড়ছে কমছে বাগেরহাটে : ইসি ৩৯টি সংসদীয় আসনে আসছে পরিবর্তন : ইসি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে ১৫ সদস্যের কমিটি শান্তি মিশনে মানের দিক থেকে শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাশিয়ায় ভূমিকম্পের পর আঘাত হেনেছে সুনামি কুড়িগ্রামের উলিপুরে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড জুলাইয়ের আহত-নিহতদের তালিকায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে-মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা সবুজায়ন স্বপ্নে খরা ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৬ সড়কে আলু ফেলে নওগাঁর কৃষকদের মানববন্ধন রাজধানীতে মাসে ২০টিরও বেশি হত্যা ও ৫টি ডাকাতি হচ্ছে রিয়াদের বাসা থেকে আড়াই কোটির চেক-এফডিআর নথি উদ্ধার এনসিপির সমাবেশে হামলায় আরেক মামলা আসামি সাড়ে ৫ হাজার তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে হচ্ছে কমিটি : ধর্ম উপদেষ্টা ভয়াবহতার মূলে এডিস মশার অস্বাভাবিক প্রজনন

রেলে কৃষিপণ্য পরিবহনে সফলতা মিলছে না

  • আপলোড সময় : ২২-১১-২০২৪ ১১:১১:৩৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-১১-২০২৪ ১১:১১:৩৯ অপরাহ্ন
রেলে কৃষিপণ্য পরিবহনে সফলতা মিলছে না
* ট্রেনের চেয়ে ট্রাকে পণ্য পরিবহন তুলনামূলক সহজ ও ঝামেলামুক্ত
* ব্যবসায়ীরা ট্রাক বা সহজলভ্য পরিবহন ভাড়া করে কৃষকের পণ্য মাঠ থেকেই সংগ্রহ করে
* কৃষকদের অতিরিক্ত কোনো পয়সা খরচ হয় না
* ট্রেনে লোডিং-আনলোডিংয়ের খরচ রয়েছে


রেলে কৃষিপণ্য পরিবহনে সফলতা মিলছে না। কারণ ব্যবসায়ী ও কৃষকরা ট্রেনের চেয়ে ট্রাকে পণ্য পরিবহন তুলনামূলক সহজ ও ঝামেলামুক্ত মনে করে। আর এ কারণেই ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না। মূলত ব্যবসায়ীরা ট্রাক বা সহজলভ্য পরিবহন ভাড়া করে কৃষকের পণ্য মাঠ থেকেই সংগ্রহ করে। এজন্য কৃষকদের অতিরিক্ত কোনো পয়সা খরচ হয় না। বিপরীতে ট্রেনে পরিবহনের ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য লোডিং-আনলোডিংয়ের খরচ রয়েছে। স্টেশনে আনা-নেয়া করতে হয়। এতে বাড়তি খরচের পাশাপাশি কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। এজন্য ট্রেনে পণ্য পরিবহনে আগ্রহ পান না কৃষকরা। ব্যবসায়ী, কৃষক এবং রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বাজার ব্যবস্থায় পণ্যের দাম নির্ধারণে মধ্যস্বত্বভোগীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তাদের এড়িয়ে স্বল্প খরচে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে রেলের বিশেষ ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ নিলেও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতায় তা সফল হচ্ছে না। কারণ রেলে কৃষিপণ্য পরিবহনের শুধু কৃষকের পণ্য এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছানোর দিকেই নজর দেয়া হয়েছে। মাঠ থেকে পণ্য কীভাবে স্টেশনে আসবে এবং স্টেশন থেকে কীভাবে সেগুলো পাইকারি বাজার পর্যন্ত যাবে তা আমলে নেয়া হয়নি। তবে রেল ও সড়কপথের সমন্বয় করে উদ্যোগ নেয়া হলে রেলে কৃষিপণ্য পরিবহনে সফলতা আসতো। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের তিনটি রুটে চারদিন কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করে আয় করেছে মাত্র ৬ হাজার ৮ টাকা। বিপরীতে ট্রেন পরিচালনা করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। প্রত্যাশিত কৃষিপণ্য না পেয়ে এবং ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কারণে ইতিমধ্যে পঞ্চগড়-ঢাকা ও রহনপুর-ঢাকা রুটে বিশেষ ওই ট্রেনটির চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লোকসানের কারণে সর্বশেষ খুলনা-ঢাকা রুটের ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়ার জন্য রেল ভবনে সুপারিশ করা হয়েছে। অথছ কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে পরিবহন ব্যয় কমাতেই বিশেষ ট্রেন চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’ নামের ওই ট্রেনটিতে সংযুক্ত করা হয়েছিলো সাতটি লাগেজ ভ্যান, যার মধ্যে একটি ছিল রেফ্রিজারেটেড। ঢাকা-খুলনা রুটে গত ২২ অক্টোবর প্রথম ট্রেনটি পরিচালনা করা হয়। ওই ট্রিপে পণ্য পরিবহন করা হয় ১ হাজার ৮৬০ কেজি। তাতে রেলের আয় হয় ২ হাজার ৩২০ টাকা। ২৪ অক্টোবর একই ট্রেন পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে পরিচালনা করা হয়। তাতে ৭৬০ কেজি কৃষিপণ্য পরিবহন করে রেলওয়ে পায় ১ হাজার ২৯৬ টাকা। রহনপুর-ঢাকা রুটে ২৬ অক্টোবর পরিচালনা করা ট্রেনটিতে বুকিং হয় মাত্র ২৬০ কেজি কৃষিপণ্য। আয় আসে ৪৮২ টাকা। ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’ সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর ঢাকা-খুলনা রুটে দ্বিতীয়বার চলে। তাতে ১ হাজার ২২৫ কেজি কৃষিপণ্য পরিবহন করে রেলওয়ে পায় মাত্র ১ হাজার ৯১০ টাকা। সূত্র আরো জানায়, খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি কৃষিপণ্য বহনে খরচ পড়ত ১ টাকা ৪৭ পয়সা। এরপরও ব্যবসায়ীদের অনীহার কারণে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া মিলেনি। তবে লোকসানের কারণে কৃষিপণ্য স্পেশাল বন্ধ করে দেয়া হলেও রেলওয়ে মৌসুম ধরে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল’ ও ‘ক্যাটেল স্পেশাল’ নামের ট্রেন দুটিকে পরিচালনা করছে। যদিও এখন পর্যন্ত হাতেগোনা আম ও পশু পরিবহন করেছে রেল। ওই ট্রেন দুটি পরিচালনায় আয়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। আম পরিবহনের জন্য ২০২০ সাল থেকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে। চালুর পর চার বছরে ট্রেনটি পরিচালনা করতে গিয়ে সংস্থাটির ১ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। একইভাবে লোকসান গুনেছে কোরবানির পশু পরিবহনের ট্রেন ক্যাটেল স্পেশালও। শুধু বিশেষ ট্রেন নয়, কৃষিপণ্য পরিবহনে বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গেও লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করেছে রেলওয়ে। এজন্য ৩৫৮ কোটি টাকা খরচ করে কেনা হয়েছে ১২৫টি লাগেজ ভ্যান। ওসব পণ্যবাহী কোচ রেলের বহরে যোগ হওয়ার পর রেলের আয় বৃদ্ধির বদলে উল্টো কমেছে। ২০২৩ সালে রেলের বহরে ছিল ৫১টি পুরনো লাগেজ ভ্যান, যা দিয়ে ওই বছরের আগস্ট পর্যন্ত সংস্থাটি আয় করে প্রায় ১০ কোটি টাকা। চলতি বছর তিন ধাপে রেলে ১২৫টি নতুন লাগেজ ভ্যান যুক্ত হলেও গত আগস্ট পর্যন্ত আয় হয়েছে ৮ কোটি টাকার কিছু বেশি। বিভিন্ন ট্রেনে সংযুক্ত লাগেজ ভ্যানগুলো বেশির ভাগ সময়ই ফাঁকা থাকছে। এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা কৃষকের পণ্য কম খরচে পরিবহনের লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ ট্রেন ও বিভিন্ন ট্রেনে লাগেজ ভ্যানগুলো সংযোজনের উদ্যোগের ধারণাটিকেই ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য রেল স্টেশন পর্যন্ত আনতে এবং ওই পণ্য ট্রেনে তুলতে ও নামাতে কুলি খরচ আছে। খরচের পাশাপাশি স্টেশনের কুলি সিন্ডিকেটের কারণেও বিড়ম্বনা আছে। তারপর স্টেশন থেকে বাজারে নিয়ে আসতে আবার খরচ। এতো খরচ আর ঝক্কি-ঝামেলা ছোট কৃষকরা কখনই নিতে চাইবে না। ফলে কখনই ওসব ট্রেন পরিচালনার উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। যারা নতুন ট্রেন বা ট্রেনে লাগেজ ভ্যান যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের হয়তো এ বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই।’
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স