ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা, নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মডেল মেঘনার জব্ধকৃত মালামাল ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির আদেশ সারাদেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মেলিওডোসিস ওয়ারড্রব ম্যালফাংশনের শিকার হলেন জেনিফার লোপেজ এবার প্রাক্তন স্বামীর ৩০ হাজার কোটির সম্পত্তিতে ‘চোখ’ কারিশমার অক্ষয় কুমারের ফিটনেস রহস্য ফাঁস! বিপাকে রাজকুমার! জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে জয়ার নতুন সিনেমা সবাইকে কেন সতর্ক করলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান? আবারও রায়হান রাফী ও তমা মির্জার প্রেমে ভাঙন বিএনপির ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে আপসহীন খালেদা জিয়া ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টের মধ্যে জারি করতে হবে : নাহিদ ইসলাম বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রানওয়েতে স্কুলের পারমিশন যারা দিয়েছে তাদের ধরতে হবে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একই দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চায় এনসিপি ও ছাত্রদল দেশকে পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান-ফখরুল রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির

বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনালে পর্যাপ্ত সেবা নিয়ে শঙ্কা

  • আপলোড সময় : ০৬-১২-২০২৪ ০১:৩২:০২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-১২-২০২৪ ০১:৩২:০২ অপরাহ্ন
বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনালে পর্যাপ্ত সেবা নিয়ে শঙ্কা
প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করছে বিমান
ভালো সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হলে দায়িত্ব কেড়ে নিবে সরকার


দুই বছরের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ (থার্ড টার্মিনাল) এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ভালো সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হলে ২ বছর পর কেড়ে নেয়া হবে দায়িত্ব। এমন কথা উল্লেখ করে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ করছে। তাদের কাজের মান নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন পক্ষ প্রশ্ন তুলেছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বরাবরই অসন্তুষ্ট বিমানের সেবায়।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বলতে যাত্রীর বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ আনা-নেয়া, কার্গোর মালামাল ওঠানো-নামানো এবং এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে বোঝায়। ১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ৩৫টির মতো এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা (ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও এয়ার অ্যাস্ট্রা ছাড়া)। এয়ারলাইন্সগুলোর অভিযোগ, মোটা অঙ্কের চার্জ দিয়েও তাদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যায় না।
এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটির (এওসি) ঢাকার চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরের বিমানকে দেয়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ প্রতিবেশী দেশ এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। বিমানের শিফট পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত খারাপ। তারা চেক-ইন কাউন্টার, গেট, র?্যাম্প, লোডিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্টাফ দিতে পারছে না। এতো চার্জ দেয়ার পরও প্রতিটি বিদেশি এয়ারলাইন্সকে বিমানবন্দরের নানা কাজের জন্য কমবেশি ৭০ জন করে নিজস্ব জনবল নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এতে এয়ারলাইন্সগুলোর অপারেশনাল ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা টিকিটের দামের উপর প্রভাব ফেলছে। ভালো সার্ভিস দেয়ার জন্য দায়বদ্ধ গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং প্রতিষ্ঠানের (বিমান) সঙ্গে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর যে সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) ছিল তার বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি বলেন, টার্মিনাল-১ এবং ২ এর কার্গো হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থাপনা দেখে টার্মিনাল-৩ এর হ্যান্ডেলিং ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। টার্মিনাল-৩ এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব দুই বছরের জন্য বিমানকে দিয়েছে বর্তমান সরকার। সরকারের সিদ্ধান্তকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে আমরা প্রস্তাব করছি-এভিয়েশন খাতের উন্নয়ন চাইলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরে যেভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলার নিয়োগ দেয়া হয়, আমাদের বিমানবন্দরেও যেন একইভাবে নিয়োগ হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের সুবিশাল তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর থেকে একসঙ্গে কমবেশি ২০টি এয়ারক্রাফটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করতে হবে। এটি পরিচালনার জন্য বিমানের মোট ৩ হাজার ৮৭৮ জন জনবল দরকার। বর্তমানে বিমানের জনবল ২ হাজার ৪৯৪। আগামী এক বছরের মধ্যে তাদের আরও ১৩৮৪ জনকে নিয়োগ করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যা মোটেও সহজ নয়।
গত ১ ডিসেম্বর বিমানের সক্ষমতা জানতে তাদের ডেকে পাঠায় মন্ত্রণালয়। সেদিন মন্ত্রণালয়কে বিমান নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে ব্রিফ করে। তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজের জন্য জনবল, যন্ত্রপাতি ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিস্তারিত পরিকল্পনা জানায়। তারা টার্মিনাল চালাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা করতে বিমান বাংলাদেশের জনবল আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এয়ারলাইন্সগুলো যেহেতু বিমানের সেবা নেয় সেক্ষেত্রে তারা বিমানের গ্রাহক। কিন্তু বিমান গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয়ে ফোকাস করে না, সমস্যার সমাধান দেয় না। বিমান যতই জনবল বাড়াক কিংবা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ হোক না কেন, গ্রাহক কী চায় (এয়ারলাইন্স), তাদের সমস্যা কী, সেসব বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। একটি এয়ারলাইন্স যে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে সেখানকার চেক-ইন কাউন্টারের পাশে কর্মী দেয়া থেকে শুরু করে ব্যাগেজ সেবা, কার্গো সেবা-সর্বত্র পর্যাপ্ত কর্মী দেয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সংকটের কারণে পর্যাপ্ত কর্মী দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিমান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যারাবিয়া যাত্রীদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার জন্য প্রতি ফ্লাইটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে দুই হাজার ২০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করে। কার্গোর জন্য প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত শূন্য দশমিক শূন্য সাত সেন্ট (মার্কিন ডলার) চার্জও প্রদান করে। এসব ব্যয় সত্ত্বেও বিমান তাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য মাত্র দুই থেকে তিনজন কর্মী দেয়।
বিমানবন্দরে একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি স্টেশন ম্যানেজার বা কাউন্টার সুপারভাইজারই যথেষ্ট। তবে, বিমানের পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় এয়ার অ্যারাবিয়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০ জনেরও বেশি নিজস্ব কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে ইন্ডিগো এয়ার বিমানবন্দরে ২৫ জন এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ৬০ জন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
কাতার এয়ারওয়েজের কার্গো ম্যানেজার সুহেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিমানকে পয়সা দিয়েও সেবা পাওয়া যায় না। আমরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ফি দিলেও বিমানবন্দরে কাতার এয়ারের ৮২ জন স্টাফ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে কাজ বিমানের করার কথা সে কাজ আমাদের নিজেদের লোক দিয়ে করাতে হচ্ছে। তারা পয়সা নিয়েও সেবা দিচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে না। এখন বেশি কিছুর দাবি নেই। আমরা শুধু চাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য বিমানের সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছে, তারা সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করুক।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানের পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ১ ডিসেম্বর থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং অ্যাক্টিভিটি পর্যালোচনার জন্য ম্যান পাওয়ার, ইকুইপমেন্ট, ট্রেনিংসহ ডিটেইল একশন প্ল্যান দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিমানের কিছু সমস্যা রয়েছে। চেক-ইন এ যে জনবল দরকার তা আমরা দিতে পারি না। কিছু ইকুইপমেন্টের শর্টে আছি। পূর্ণাঙ্গ অপারেশনের আগে আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বসবো। আশা করছি তৃতীয় টার্মিনালে আমরা সবাইকে কাক্সিক্ষত সার্ভিস দিতে পারবো।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও দ্যা মনিটর বাংলাদেশের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিশ্বের কোথাও কোনো একটি সংস্থা এককভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে না। সেখানে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে বিমান। এ বিষয়ে সেবা দিতে গিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে কি না তা বলা যাচ্ছে না।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য