ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা, নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মডেল মেঘনার জব্ধকৃত মালামাল ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির আদেশ সারাদেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মেলিওডোসিস ওয়ারড্রব ম্যালফাংশনের শিকার হলেন জেনিফার লোপেজ এবার প্রাক্তন স্বামীর ৩০ হাজার কোটির সম্পত্তিতে ‘চোখ’ কারিশমার অক্ষয় কুমারের ফিটনেস রহস্য ফাঁস! বিপাকে রাজকুমার! জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে জয়ার নতুন সিনেমা সবাইকে কেন সতর্ক করলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান? আবারও রায়হান রাফী ও তমা মির্জার প্রেমে ভাঙন বিএনপির ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে আপসহীন খালেদা জিয়া ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টের মধ্যে জারি করতে হবে : নাহিদ ইসলাম বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রানওয়েতে স্কুলের পারমিশন যারা দিয়েছে তাদের ধরতে হবে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একই দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চায় এনসিপি ও ছাত্রদল দেশকে পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান-ফখরুল রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির

বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকল্প

  • আপলোড সময় : ১৯-১২-২০২৪ ১০:১৯:২০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-১২-২০২৪ ১০:১৯:২০ অপরাহ্ন
বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকল্প
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া প্রায় চারশ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাতিল করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পটি তোলা হবে বাতিল ঘোষণার জন্য। একনেকে যদি এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তবে এটি হবে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া কোনও প্রকল্প বাতিলের প্রথম ঘটনা।
সিলেটের মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলায় অবস্থিত চিরসবুজ সংরক্ষিত বনভূমির ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকা জুড়ে ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় গত বছরের নভেম্বরে। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেয়া প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল বন অধিদফতর।
দেশের ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নে ২৭০ একর এলাকায় কোর সাফারি পার্কসহ সাফারি কিংডম স্থাপনের জন্য অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পটি ২০২৮ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছিল দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। সে সময় বলা হচ্ছিল, লাঠিটিলা বনের মধ্যে সাফারি পার্ক তৈরি করা হলে তা হবে প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী। সংরক্ষিত বনের চরিত্র পরিবর্তন করে সাফারি পার্ক তৈরিকে সর্বনাশা বলেও অভিহিত করেন অনেকে। সরকারকে এ প্রকল্প থেকে সরে আসতেও আহ্বান জানানো হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান গত মঙ্গলবার জানান, গত সোমবার একনেকে প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব এসেছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা শুধুমাত্র তাদের ওই প্রস্তাব একনেক সভায় উপস্থাপন করছি।
আগামী একনেক বৈঠকে তালিকাভুক্তির জন্য প্রকল্পটি একনেক উইংয়ে পাঠানো হয়েছে।
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেয়া প্রকল্পগুলো আবার যাচাই বাচাই ও মূল্যায়ন করা হবে। প্রয়োজনে এসব প্রকল্প ছাঁটাইয়ের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পটি ‘জীব বৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না’ এমন শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
এরপর পরিকল্পনা কমিশন থেকে পুনর্গঠিত ডিপিপি পাঠানোর জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন, বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব পড়বে কিনা তা দেখতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত ২১ আগস্ট চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইসতিয়াক উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ, আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমদ এবং বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ হলেন এই কমিটির সদস্য।
ওই কর্মকর্তা জানান, এই কমিটি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সেখানে প্রকল্পটি ওই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বনাঞ্চলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে উল্লেখ করে তা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়।
পরে গত ২ অক্টোবর কমিটির ওই সুপারিশ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়। কমিশনের এই বিভাগ এবার প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লাঠিটিলা বনের যে স্থানটিতে সাফারি পার্ক প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পট এর অন্তর্গত এবং টাইগার সার্ভের জন্য একটি অগ্রাধিকার ল্যান্ডস্কেপ। এটি একটি ট্রান্সবাউন্ডারি এলিফেন্ট করিডোর।
সকলের মতামত ও বিভিন্ন সমীক্ষা পর্যালোচনা শেষে এটি স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে যে, প্রস্তাবিত সাফারী পার্ক নির্মাণ হলে লাঠিটিলাসহ সমগ্র বনাঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পুরো পাথারিয়া হিল রিজার্ভের জীববৈচিত্র্যকে আমলে নিয়ে, জীববৈচিত্র্যের উপর প্রস্তাবিত সাফারি পার্কের ফলে সৃষ্ট প্রভাবগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এবং স্থানীয় অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কমিটি মনে করে লাঠিটিলাসহ এ ধরনের প্রাকৃতিক বনে সাফারি পার্ক নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়।
জীববৈচিত্র্যের উপর উপরোক্ত নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক প্রকল্পটি বাতিলের জন্য কমিটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেখানে পরিকল্পনা কমিশনের ‘কৃষি পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের’ মতামত দিয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত কমিটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে লাঠিটিলার বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের উপর চরমভাবে বিরূপ প্রভাব পড়বে মর্মে সুপারিশ প্রদান করেছে। কাজেই লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবমতে প্রকল্পটির অনুমোদন বাতিল করা যায়।
একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রতিবেদনে পরিকল্পনা কমিশনের এই বিভাগটি এই প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ তুলে ধরে। এতে বলা হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বন অধিদফতরের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (১ম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের গত ০৯-১১-২০২৩ তারিখের একনেক কর্তৃক শর্তসাপেক্ষ অনুমোদন বাতিলের লক্ষ্যে একনেক এর সানুগ্রহ বিবেচনা ও সদয় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলো।
পাঁচ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ২৭০ একর এলাকায় মাস্টার বাউন্ডারি, কোর সাফারি ও সাফারি কিংডমের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ অস্থায়ী বেষ্টনি, আরসিসি বাঁধ, রিটেইনিং ওয়াল, বিটুমিনাস রোড তৈরির কথা ছিল।
এছাড়াও প্রকল্পটির আওতায় গাড়ী ও বাস পার্কিং, প্রাণী হাসপাতাল ও গুদামঘর, অভ্যন্তরীণ মেকাডাম সড়ক, হাতি দেখার প্লাটফর্ম ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটরসহ সাবস্টেশন নির্মাণ করার কথা ছিল।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভিসহ সিকিউরিটি সিস্টেম, আইটি ব্যবস্থাসহ এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম, সাউন্ড সিস্টেম এবং ডিজিটাল টিকেটিং ব্যবস্থায়ও ছিল প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রম।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স