ঢাকা , রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নগরে ফিরছে মানুষ পথে পথে ভোগান্তি এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো-আনু মুহাম্মদ প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছেন-জামায়াত ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক দেশে স্বস্তি এনেছে বললেন দুদু মামলার আগেই আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক, বড় পরিবর্তন আসছে আইনে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা রেমিটেন্সে ধস আয়রন ডোম চুরমার ইসরায়েলি সদর দফতর গুঁড়িয়ে দিল ইরান ইরানের কাছে ধরাশায়ী ইসরায়েল মেসিদের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপ মাঠে ফেরায় তোড়জোড় গগবার অনিশ্চয়তায় ক্যাবরেরার ভবিষ্যৎ ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আয়োজক হওয়ার প্রস্তাবকে আইসিসির ‘না’ বিগব্যাশে ডাক পেলেন বাবর আজম পাকিস্তানের কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন ইউসুফ তারকাবিহীন দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসবে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলি হামলায় নিন্দার ঝড় ইরানের পাল্টা হামলার শঙ্কায় খাবার ও পানি মজুত করছে ইসরায়েলিরা সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি করুন ইরানকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
শের-ই বাংলা মেডিকেলের চক্ষু বিভাগ

অর্ধযুগ ধরে প্যাকেটবন্দি ১২ কোটির ল্যাসিক যন্ত্র

  • আপলোড সময় : ২২-১২-২০২৪ ১০:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-১২-২০২৪ ১০:৩৬:২৮ পূর্বাহ্ন
অর্ধযুগ ধরে প্যাকেটবন্দি ১২ কোটির ল্যাসিক যন্ত্র
* চোখে উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত ১১ জেলার মানুষ * বন্ধ আছে ছানি অপারেশনের ফ্যাকো মেশিন * অচল মেশিন সারাতে গেলে ব্যয় হবে ১ কোটি টাকা * শুধু মেরামত নয়, দক্ষ জনবল চান চিকিৎসকরা স্টাফ রিপোর্টার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অত্যাধুনিক ল্যাসিক মেশিনটি দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিকল হয়ে আছে। এতে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার প্রায় দেড় কোটি মানুষ। শুধু ল্যাসিক মেশিনই নয়, এখানে চোখের ছানি অপারেশনের ফ্যাকো মেশিনটিও সাত মাসের বেশি সময় ধরে বিকল অবস্থায় আছে। এতে দেশের পুরোনো এই হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরছেন। বছরজুড়ে যেখানে রোগীদের ভিড় থাকত, সেখানে এখন যেন সুনসান নীরবতা। চক্ষু বিভাগের এক স্টাফ বলেন, আগে রোগীদের সেবা দিতে বারান্দা পর্যন্ত যেতে হতো। যখন ল?্যাসিক মেশিন, ফ?্যাকো মেশিন ছিল তখন রোগীর ভিড় লেগেই থাকত। এখন বড় অপারেশন বন্ধ। এমন রোগী এলে ঢাকায় রেফার করা হয়। এখানে রোগীকে কেবল প্রেসক্রিপশন আর প্রাইমারি ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়। হোসনেয়ারা বেগম নামে এক রোগী বলেন, গত বছর চোখে ছানি অপারেশন কইরা (করে) গ্যাছিলাম। এখন আবার চোখে সমস্যা দিছে (হচ্ছে)। একদিন ভর্তি হইয়া আছিলাম। এখন ডাক্তার কয় (বলে) অপারেশন বাইরে করানো লাগবে। হ্যাগো (তাদের) হাসপাতালের মেশিন নষ্ট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন নার্স বলেন, অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় এখানে রোগীর চাপ অনেক কম। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা বন্ধ থাকায় রোগীরা অন্য হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। শের-ই-বাংলা মেডিকেলের চক্ষু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত করা লেজার অ্যাসিস্টেড ইন সিটু কেরাটমাইলিউসিস সংক্ষেপে ‘ল?্যাসিক’ মেশিনটি বাংলাদেশের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্ট (সিএমএসডি) থেকে ২০১৩ সালের ২৯ জুন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে সরবরাহ করা হয়। এসপি ট্রেডিং হাউসের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাবট মেডিকেল অপটিক’ এটি সরবরাহ করে। সূত্র জানায়, দরপত্র অনুযায়ী অ্যাবট মেডিকেল দুদফায় শের-ই-বাংলা মেডিকেলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা। এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, জনবল ও বায়োগ্রাফিক প্রকৌশলীও সংযুক্ত রাখার কথা। এসব না করে মাত্র ৭ দিনের একটি প্রশিক্ষণ করিয়ে দায় সারে সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, মেশিনটি সরবরাহে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এটি ওই বছর হাসপাতালে স্থাপন করা হলেও কীভাবে তা চালাতে হয় জানতেন না হাসপাতালে টেকনিশিয়ানরা। পরে এক বছর অপেক্ষা করে ২০১৫ সালে উৎপাদনকারী দেশ থেকে পুনরায় টেকনিশিয়ান এনে মেশিনটি চালু করা হয়। এরপর কয়েক মাস ভালো চললেও ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ল?্যাসিক মেশিনটি বিকল হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক সিএমএসডি থেকে একটি টেকনিক্যাল টিম এসে মেশিনটি মেরামত করে চালু করেন। তার দুমাসের মধে?্য ২০১৬ সালের জুলাইয়ে আবারও মেশিনটি বিকল হয়। এ অবস্থায় পুনরায় মেশিনটি মেরামতের জন?্য সিএমএসডিতে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অচল হয়ে থাকে মেশিনটি। পরে অক্টোবরে সিঙ্গাপুর থেকে টেকনিশিয়ান এনে পুনরায় এটি মেরামত করে চালু করা হয়। এরপর বেশ কিছুদিন ভালোভাবে সার্ভিস দেয়ার পরও ২০১৯ সালে ফের বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিকল হয়ে আছে ২৫০টিরও বেশি সফল অপারেশন করা মেশিনটি। চক্ষু বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ল্যাসিক যন্ত্রটি সারাতে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। শুধু মেরামত করলেই চলবে না এটি চালু রেখে চিকিৎসা দিতে হলে প্রিমিক্স গ্যাস ও প্রিপেইড কার্ড সরবরাহ দরকার। এগুলো বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় না। এই মেশিন সচল রাখতে সবসময় প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধায়নে রাখতে হয়, কিন্তু তা আমাদের নেই। আমাদের হাসপাতালে ল্যাসিক মেশিন মেইনটেইন করার জনবল কখনোই ছিল না। তিনি বলেন, মেশিনটি চালু থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চোখের উন্নত চিকিৎসা পেতেন। সেই চিকিৎসা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এবার মেশিনটি মেরামত করে দিয়ে কেউ চলে যাবে তা চাইব না। আমি মনে করি, মেশিনটি চালানোর জনবল এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিকট দৃষ্টি, দীর্ঘ দৃষ্টির সমস্যা ও চোখে ঝাপসা দেখার স্থায়ী সমাধানে ল্যাসিক ট্রিটমেন্ট অত্যন্ত কার্যকর। ল্যাসিক মেশিনের নিক্ষেপিত লেজার দিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কর্নিয়ার আকার পরিবর্তন করা হয়। ল্যাসিক ট্রিটমেন্ট চশমা ও কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের একটি বিকল্প। অনেক শিক্ষার্থী ল্যাসিক ট্রিটমেন্ট নিয়ে এখন সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদেও চাকরি করছেন। অথচ ছাত্র অবস্থায় তারা ঠিকভাবে চোখে দেখত না। ‘ল্যাসিক মেশিনের পাশাপাশি চোখের ছানি অপারেশনের ফ্যাকো মেশিনটিও জুলাই মাস থেকে বন্ধ রয়েছে’ বলে জানান তিনি। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম মশিউল মুনির বলেন, শেবাচিম হাসপাতাল অনেক পুরোনো হলেও দেশের অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে এটি পিছিয়ে আছে। এখানে জনবল, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সবকিছুই অপ্রতুল। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি, কোথায় কোথায় আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করেছি। এগুলোর ফাইলও রেডি করেছি। আমি মন্ত্রণালয় ও সিএমএসডিতে যাব। হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে আমি আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করেছি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স