
মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট
- আপলোড সময় : ০৪-০২-২০২৫ ০৪:২৩:০১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০২-২০২৫ ০৪:২৩:০১ অপরাহ্ন


রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সে মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলমের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের পিয়ন জাহাঙ্গীরের নকল নবিশ আওলাদ ও উমেদার আকিবের নেতৃত্বে বিশাল এক সিন্ডিকেট বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলমের দেশের বাড়ি ফরিদপুর। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন। বিগত সরকার পতনের পরও সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলম রয়ে গেছেন বহালতরিয়াতে। মোহাম্মপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের আগে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত থাকাকালীন ঘুষ, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন তিনি। ডেভেলপার কোম্পানি ও ভূমি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ থাকলে লীগ সরকারের মন্ত্রীদের দাপটে সেই সকল অভিযোগ অন্ধকারে ধামাচাপা পড়ে যায়। যা আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। সর্বসাকুল্যে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলম কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে।
ফরিদপুর আলফাডাঙ্গা উপজেলা ৩নং ওয়ার্ডের বাকাইল এলাকায় একটি একতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন দুই বিঘা জায়গা নিয়ে, যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার উর্ধ্বে। এছাড়াও বাকাইল এলাকার পাশে বিশ শতাংশ একটি প্লট ক্রয় করেছেন কোটি টাকা দিয়ে। গোপালগঞ্জের কাসিয়ানী উপজেলার ফিংগলিয়া মৌজায় প্রায় দুই একর আয়তনের জায়গা ক্রয় করে সেখানে মৎস্যচাষ করছেন তার শ্বশুর বাড়ির এলাকায়। রাজধানী কামরাঙ্গীর চরে চর কামরাঙ্গী মৌজায় তার ভাইয়ের নামে চারশ পঁচিশ অযুতাংশ জমি ক্রয় করেছেন কোটি টাকা দিয়ে সেখানে ৬ষ্ঠ তলা একটি বিলাশ বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য তারই ভাইয়ের নাবালক ছেলেমেয়ের নামে হেবা দলিল করে দেন, যার দলিল নং-৫৯৮২, রেজিস্ট্রি খরচ হিসেবে নাম মাত্র খরচ দেখানো হয়েছে। এভাবেই অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন সাব-রেজিস্টার শাহিন আলম। অপরদিকে তার সিন্ডিকেটের মূল হোতা দীর্ঘদিন একই জায়গায় কর্মরত পিয়ন জাহাঙ্গীর শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন জাহাঙ্গীরের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে অতিষ্ঠ দাতা ও গ্রহীতারা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলম, পিয়ন জাহাঙ্গীর মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দৈনিক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রাষ্ট্রীয় রাজস্ব লুট করছেন তারা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দাপিয়ে বেড়ানো মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের পিয়ন জাহাঙ্গীর রয়ে গেছেন সকল ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেদারছে অনিয়ম, দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তারা। পিয়ন জাহাঙ্গীর রাজধানী পশ্চিম যাত্রাবাড়ী ৩টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা, কাজলা ৫ কাঠা জায়গা ক্রয় করেছেন কোটি টাকা দিয়ে। ডেমরা ডগাই ৫ কাঠা প্লট ক্রয় করেছেন যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২ কোটি টাকার উর্ধ্বে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ এ ৮০ শতক জায়গার উপরে ১ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন কয়েক কোটি টাকা খরচ করে। ২২ বছর চাকরি জীবনে পিয়ন জাহাঙ্গীর এত সম্পদ বানালেন কোন পথে।
এছাড়াও নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি যার কোনো বৈধ ইনকাম দেখাতে পারবেন না, সাব-রেজিস্ট্রার শাহিন আলম ও পিয়ন জাহাঙ্গীর একজন সামান্য ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে পাহাড় সমান সম্পদের মালিক হলে তিনি তার কাছে নাকি আলাউদ্দিনের চেরাগ আছে বলে মুখে মুখে শুনা যায় অত্র অফিসের কর্মরত একাধিক ব্যক্তিদের নিকট। যাত্রাবাড়ী এলাকাবাসী জানেন পিয়ন জাহাঙ্গীর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অনেক বড় অফিসার, তার এত সম্পদ দেখে এলাকার মানুষ হতভম্ব। পিয়ন জাহাঙ্গীর মোহাম্মদপুরে সাব-রেজিস্টার অফিসে যোগদানের পর হতে তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।
পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ভরি ভরি অভিযোগ থাকলেও সাবেক জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুলকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে সেই সকল অভিযোগ ধামাপাচা পড়ে যায়। বর্তমানে পিয়ন জাহাঙ্গীর দলিল সম্পাদনের কমিশন দলিল করে থাকেন। কমিশনকৃত দলিলদাতা গ্রহীতাদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দলিল সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করে থাকেন সাব-রেজিস্ট্রারের যোগসাজশে। মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সেবা নিতে আসা দাতা-গ্রহীতারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাব-রেজিস্টার শাহিন আলম ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর নিকট। দলিলদাতা ও গ্রহীতাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সঠিক নেই বলে বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
নাম না প্রকাশের শর্তে ও অফিসে কর্মরত একাধিক নকলনবিশ এই প্রতিবেদকে জানান পিয়ন জাহাঙ্গীর, তার কর্মকাণ্ডে মনে হয় তারা এই অফিসের অনেক বড় অফিসার। অবৈধ টাকার প্রভাবে পিয়ন জাহাঙ্গীর আচরণ এখন প্রশ্নবৃদ্ধ? নামজারির ফটোকপি, খাজনার ফটোকপি দিয়ে প্রতিদিন রেজিস্ট্রি হচ্ছে একাধিক দলিল। বিভিন্ন অজুহাতে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা। ফলে বছরে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জানা গেছে, ঢাকা, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রারের অধীনে একই জমি একাধিকবার বিক্রি করে একই অফিস থেকে দালালের মাধ্যমে ভুয়া দলিল সম্পাদন করেছেন বিগত সময় পিয়ন জাহাঙ্গীর।
পিয়ন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে কমিশন দলিলের ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল হয় না এমনকি নড়ে না ফাইলও। চাহিদামতো ঘুষের টাকা পেলে খাজনা খারিজ ছাড়াই যে কোনো জমির দলিল সম্ভব তাদের কাছে। যে কারণে, একই জমি একাধিকবার বিক্রির অভিযোগেরও শেষ নাই। জমি আছে দলিল নেই, আর দলিল আছে জমি নেই এমন অভিযোগও অহরহ পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এভাবে অবৈধ পন্থায় শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পিয়ন জাহাঙ্গীর। অপরদিকে উমেদার আকিব ও নকলনবিশ আওলাদ সেবা নিতে আসা দলিল গ্রহীতাদের কাছ থেকে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ