ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা, নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মডেল মেঘনার জব্ধকৃত মালামাল ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির আদেশ সারাদেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মেলিওডোসিস ওয়ারড্রব ম্যালফাংশনের শিকার হলেন জেনিফার লোপেজ এবার প্রাক্তন স্বামীর ৩০ হাজার কোটির সম্পত্তিতে ‘চোখ’ কারিশমার অক্ষয় কুমারের ফিটনেস রহস্য ফাঁস! বিপাকে রাজকুমার! জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে জয়ার নতুন সিনেমা সবাইকে কেন সতর্ক করলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান? আবারও রায়হান রাফী ও তমা মির্জার প্রেমে ভাঙন বিএনপির ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে আপসহীন খালেদা জিয়া ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টের মধ্যে জারি করতে হবে : নাহিদ ইসলাম বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রানওয়েতে স্কুলের পারমিশন যারা দিয়েছে তাদের ধরতে হবে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একই দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চায় এনসিপি ও ছাত্রদল দেশকে পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান-ফখরুল রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির
এইচবিআরআই’র গবেষণা

ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে ঢাকার ৫৬ শতাংশ ভবন

  • আপলোড সময় : ১৫-০৩-২০২৫ ০৬:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-০৩-২০২৫ ০৬:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন
ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে ঢাকার ৫৬ শতাংশ ভবন
এইচবিআরআই’র গবেষণা
* ঢাকা শহরে ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ ভবন ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে
* মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভবন
* রিখটার স্কেলে ৪ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এসব ভবন


ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে ঢাকার ৫৬ শতাংশ ভবন। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ, অপ্রশস্ত সড়ক অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবই এ ঝুঁকি তৈরি করেছে। মাঝারি থেকে প্রবল মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী। ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে এমন শীর্ষ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে যত কংক্রিটের ভবন বিদ্যমান তার ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ রয়েছে ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকির মধ্যে। মাঝারি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভবন। রিখটার স্কেলে ৪ বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এসব ভবন। আর তুরস্ক ও সিরিয়ায় সম্প্রতি যে মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে ঢাকার ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জিআইএস ডাটাবেজ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৯৩টি ভবনের তথ্য নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছে এইচবিআরআই। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের অর্থায়নে ‘টেকনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট টু আপগ্রেড স্ট্রাকচারাল ইন্টেগ্রিটি অব বিল্ডিংস ইন ডেনসলি পপুলেটেড আরবান এরিয়াস অ্যান্ড ইটস স্ট্র্যাটেজিক ইমপ্লিমেন্টেশন টুওয়ার্ড রেজিলিয়েন্ট সিটিস ইন বাংলাদেশ (টিএসইউআইবি)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এইচবিআরআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
এ গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ম্যানুয়াল তৈরি করেছে এইচবিআরআই। এসব ম্যানুয়ালের একটি হলো ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা ভবনের শ্রেণি বিভাজন। এ শ্রেণি বিভাজন অনুযায়ী, কিছু ভবন একেবারে ভেঙে ফেলতে হবে। কিছু ভবনে বড় ধরনের সংস্কার করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যাবে। আর কিছু ভবন সাধারণ সংস্কারের মাধ্যমেই ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত রাখা সম্ভব। একইভাবে ভিজুয়াল রেটিং ম্যানুয়ালের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক দেখে একটি ভবন কী অবস্থায় রয়েছে, তা নির্ধারণ করা যাবে। সিসমিক ইভ্যালুয়েশন ম্যানুয়ালে বিস্তারিত মূল্যায়ন করে ভবনের মান নির্ধারণ করা যাবে। সিসমিক রেট্রোফিটিং ম্যানুয়ালে তুলনা কম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিতে থাকা ৭ শতাংশ ভবন ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ৩১ শতাংশ ভবনের। অন্যদিকে প্রায় ৪০ শতাংশ ভবনের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। যেসব ভবনের উচ্চতা বেশি, সেগুলো রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
বড় ধরনের ভূমিকম্পে ধসে পড়ার উচ্চঝুঁকি রয়েছে, এমন ভবনের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। এসব ভবনকে ‘ই’ ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করা হয়েছে এইচবিআরআইয়ের গবেষণায়। ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ধসে পড়ার মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ২১ দশমিক ৬২ শতাংশ ভবন। ক্ষতি হলেও ধসে পড়বে না এমন ভবনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৪৮টি ওয়ার্ডে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ভবনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ‘খুব উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ১, ৩, ৭, ১২, ১৪, ২২, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড। আর ‘উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ২, ৫, ১১, ১৩, ১৬, ১৮, ১৯, ২১, ২৩, ২৫, ২৬ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ‘খুব উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ১, ১২, ১৩, ১৬, ১৭, ২৩, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড। আর ‘উচ্চঝুঁকি’র মধ্যে রয়েছে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১৫, ১৯, ২৭, ৩৯, ৪৫, ৪৭ ও ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড।
গবেষণাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে টিএসইউআইবি প্রকল্প পরিচালক ও এইচবিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে প্রণয়ন করা ম্যানুয়ালগুলো একদিকে যেমন বাংলাদেশে ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, তেমনি ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো সম্পর্কেও নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।’
গবেষণার বিষয়টি উল্লেখ করে ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে জানতে চাইলে এইচবিআরআইয়ের মহাপরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘২০১৬-২২ মেয়াদে বাস্তবায়িত জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মাধ্যমে বাস্তবায়িত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়েছে। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঢাকাসহ দেশের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোর ভবনের বর্তমান অবস্থার একটি চিত্র তুলে আনা। দেশ-বিদেশের গবেষকরা আমাদের এ কাজে সহায়তা করেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটের ভূমিকম্পের রেড জোনে থাকা এলাকাগুলোয় বিদ্যমান ভবনগুলোয় আমরা সমীক্ষা চালিয়েছি।’
‘ঢাকায় ভবনগুলো খুব একটা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার একটা বড় অংশের ভবন তৈরি করা হয়েছে জাতীয় বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে। ঘনবসতিপূর্ণ এসব ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশস্ত রাস্তাও নেই। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতায় এ বিষয়টিও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। ঢাকায় ভূমিকম্প হলে এসব কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অনেক বেশি’Ñ যোগ করেন আশরাফুল আলম।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স