ঢাকা , বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টাঙ্গাইলে এনসিপির পদযাত্রা, নিরাপত্তায় ৯ শতাধিক পুলিশ সদস্য সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত মডেল মেঘনার জব্ধকৃত মালামাল ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরির আদেশ সারাদেশে নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মেলিওডোসিস ওয়ারড্রব ম্যালফাংশনের শিকার হলেন জেনিফার লোপেজ এবার প্রাক্তন স্বামীর ৩০ হাজার কোটির সম্পত্তিতে ‘চোখ’ কারিশমার অক্ষয় কুমারের ফিটনেস রহস্য ফাঁস! বিপাকে রাজকুমার! জারি হলো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে জয়ার নতুন সিনেমা সবাইকে কেন সতর্ক করলেন অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান? আবারও রায়হান রাফী ও তমা মির্জার প্রেমে ভাঙন বিএনপির ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে আপসহীন খালেদা জিয়া ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ৫ আগস্টের মধ্যে জারি করতে হবে : নাহিদ ইসলাম বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে ২ জন নিহত ডিএসসিসির পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রানওয়েতে স্কুলের পারমিশন যারা দিয়েছে তাদের ধরতে হবে-স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একই দিনে শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে চায় এনসিপি ও ছাত্রদল দেশকে পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তারেক রহমান-ফখরুল রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির

ক্যান্টনমেন্টে সেদিন কী কথা হয়েছিল জানালেন সারজিস

  • আপলোড সময় : ২৪-০৩-২০২৫ ০২:০০:৩৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৩-২০২৫ ০২:০০:৩৮ অপরাহ্ন
ক্যান্টনমেন্টে সেদিন কী কথা হয়েছিল জানালেন সারজিস
ক্যান্টনমেন্টে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে সেদিন কী কথা হয়েছিল, এবার তা নিয়ে মুখ খুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাসে সেদিনের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। এ সময় তিনি সেনাপ্রধানকে নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর দেয়া স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। পাঠকদের জন্য সারজিসের দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে আমার জায়গা থেকে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন : সেদিন আমি এবং হাসনাত সেনাপ্রধানের সাথে গিয়ে কথা বলি। আমাদের সাথে আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ আরেকজন সদস্যেরও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি যেতে পারেননি। প্রথমেই স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখি সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেয়া হয়নি বরং সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারের সাথে যখন প্রয়োজন হতো তখন ম্যাসেজের মাধ্যমে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ও উত্তর আদান-প্রদান হতো। যেদিন সেনাপ্রধান পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবসে অনেকটা কড়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন এবং বললেন ‘এনাফ ইজ এনাফ’ তখন আমি সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইসরকে জিজ্ঞাসা করি আপনাদের দৃষ্টিতে অনাকাক্সিক্ষত কিছু দেখছেন কিনা? সেনাপ্রধানের বক্তব্য তুলনামূলক ংঃৎধরমযঃ-ভড়ৎধিৎফ এবং যধৎংয মনে হচ্ছে। তিনি আমাকে বললেন তোমরা কি এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাও? আমি বললাম-বলা যেতে পারে। এরপরে সেদিন সেনাপ্রধানের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয় । সেনাভবনে সেই রুমে আমরা তিনজনই ছিলাম। সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি। মানুষ হিসেবে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির অভিমতকে একেকজন একেকভাবে অবজার্ভ করে। হাসনাত সেদিন তার জায়গা থেকে যেভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে অবজার্ভ ও রিসিভ করেছে এবং ফেসবুকে লিখেছে আমার সেক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিমত আছে। আমার জায়গা থেকে আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ দেয়ার আঙ্গিকে দেখিনা বরং ‘সরাসরি অভিমত প্রকাশের’ মতো করে দেখি। ‘অভিমত প্রকাশ’ এবং ‘প্রস্তাব দেয়া’ দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যদিও পূর্বের তুলনায় সেদিন সেনাপ্রধান অনেকটা স্ট্রেইথ-ফরোয়ার্ড ভাষায় কথা বলছিলেন। পাশাপাশি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য ‘চাপ দেয়ার’ যে বিষয়টি এসেছে সেখানে ‘চাপ দেয়া হয়েছে’ এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে সেটা তিনি অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলছিলেন। হাসনাতের বক্তব্যে যে টপিকগুলো এসেছিল, যেমন-রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, সাবের হোসেন, শিরিন শারমিন চৌধুরী, সোহেল তাজ, এসব নিয়ে কথা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে কিনা, এই ইলেকশনে আওয়ামী লীগ থাকলে কি হবে না থাকলে কি হবে, আওয়ামী লীগ এই ইলেকশন না করলে কবে ফিরে আসতে পারে কিংবা আদৌ আসবে কিনা এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল। এসব সমীকরণে দেশের উপরে কি প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা কিংবা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে সেসব নিয়ে কথা হয়েছিল। কিন্তু যেই টোনে হাসনাতের ফেসবুক লেখা উপস্থাপন করা হয়েছে আমি মনে করি-কনভারসেশন ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে অন্য কোন একদিনের চেয়ে অবশ্যই স্ট্রেইথ-ফরওয়ার্ড এবং সো-কনফিডেন্ট ছিল। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের ইলেকশনে অংশগ্রহণ করা যে প্রয়োজনীয় সেই বিষয়ে সরাসরি অভিমত ছিল। হাসনাত তার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছে-আলোচনার এক পর্যায়ে বলি-যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। এই কনভারসেশনটা হয়েছে এটা সত্য। কিন্তু আমাদের রুমে বসে হওয়া কনভারসেশন হঠাৎ এককভাবে শেষ করে যখন সেনাপ্রধান উঠে দাঁড়ালেন এবং রুম থেকে কথা বলতে বলতে বের হয়ে এসে যখন আমরা গাড়িতে করে ফিরবো তার পূর্বে বিদায় নেয়ার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই কনভারসেশন হয়েছে। সেনাপ্রধান রেগে যাওয়ার সুরে এই কথা বলেছেন বলে আমার মনে হয়নি বরং বয়সে তুলনামূলক বেশ সিনিয়র কেউ জুনিয়রদেরকে যেভাবে অভিজ্ঞতার ভারের কথা ব্যক্ত করে সেই টোন এবং এক্সপ্রেশনে বলেছেন। ‘হাসনাত না ওয়াকার’ এই ন্যারেটিভ এবং সেøাগানকে আমি প্রত্যাশা করিনা। হাসনাতের জায়গা ভিন্ন এবং সেনাপ্রধান জনাব ওয়াকারুজ্জামানের জায়গাও ভিন্ন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টি অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোও কখনো প্রাসঙ্গিক নয়। পাশাপাশি সেনা প্রধানের পদত্যাগ নিয়ে যে কথা দুয়েক জায়গায় আসছে সেটিও আমাদের বক্তব্য নয়। এসবের পাশাপাশি আমি আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে একটি অভিমত প্রকাশ করতে চাই। আমি ভুল হতে পারি কিন্তু এই মুহূর্তে আমার এটিই সঠিক মনে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ না কেউ যোগাযোগ রক্ষা করে। সেই প্রাইভেসি তারা বজায় রাখে। আমাদের সাথে সেনাপ্রধানের যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে সেগুলোর সাথে আমাদের সরাসরি দ্বিমত থাকলেও আমরা সেগুলো নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারতাম, সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম, সে অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারতাম। কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের বিরুদ্ধে এখনকার মতই রাজপথে নামতে পারতাম। অথবা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি আমাদের সাথে ঐক্যমতে না পৌঁছালে আমরা শুধুমাত্র আমাদের দলের পক্ষ থেকেই এই দাবি নিয়ে রাজপথে নামতে পারতাম। কিন্তু যেভাবে এই কথাগুলো ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এসেছে এই প্রক্রিয়াটি আমার সমীচীন মনে হয়নি বরং এর ফলে পরবর্তীতে যেকোনো স্টেকহোল্ডারের সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থার সংকটে পড়তে পারে। আমার এই বক্তব্যে আমার সহযোদ্ধা হাসনাতের বক্তব্যের সাথে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত এসেছে। এটার জন্য অনেকে আমার সমালোচনা করতে পারেন কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমাদের ব্যক্তিত্ব স্রোতে গা ভাসানোর মত কখনোই ছিল না। ছিল না বলেই আমরা হাসিনা রেজিমের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। আজও কেউ হাসনাতের দিকে বন্দুক তাক করলে তার সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কমিটমেন্ট আমাদের আছে। কিন্তু সহযোদ্ধার কোনো বিষয় যখন নিজের জায়গা থেকে সংশোধন দেয়ার প্রয়োজন মনে করি তখন সেটাও আমি করব। সেই বিবেকবোধটুকু ছিল বলেই ৬ জুন প্রথম যেদিন শহীদ মিনারে কয়েকজন কোটা প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় তাদের মধ্যে সামনের সারিতে আমরা ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই বিবেকবোধের জায়গাটুকুই আমাদেরকে সঠিক পথে রাখবে। আত্মসমালোচনা করার এই মানসিকতাই আমাদেরকে আমাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্যে নিয়ে যাবে। জুলাই গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো ‘আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স