ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫ , ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমতলীতে বিএনপি'র ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও রাজস্ব আহরণে ধস জুলাই আহতরা এখনো হাসপাতালে মানসিকভাবে বিপর্যয়ে ৬৭ শতাংশ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৪২৯ ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শনাক্তে ডিসি-ইউএনও অফিসে টাঙানো হচ্ছে তালিকা তৃতীয় ধাপে এনসিপিসহ ৮২ দলকে চিঠি দিচ্ছে ইসি দেশের ইতিহাসে প্রথমবার ‘নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ -দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উচ্চকক্ষ নিয়ে দুদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত-আলী রীয়াজ দলের প্রধান হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না- এটা গণতন্ত্রবিরোধী-সালাহউদ্দিন শেখ হাসিনা মানবজাতির কলঙ্ক, মানুষ তাকে ক্ষমা করবে না-মির্জা ফখরুল ১১০৫ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায়-আলী ইমাম মজুমদার পরিস্থিতির কারণে গোপালগঞ্জে গুলি করেছে সেনাবাহিনী-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য গ্রেফতার পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দেয়া বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন সারজিস দুর্গাপুরে দম্পতির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার সৎ মা-মেয়ে হত্যায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস চার্জের ভাগ চায় চসিক বিএনপি হলো ছ্যাঁচড়া চাঁদাবাজ- ফয়জুল করীম ৪০ বছরের ব্যবসায় এমন সংকট দেখিনি : এ কে আজাদ স্ত্রী-সন্তান-শিক্ষার্থীদের দিয়ে খাতা দেখালে ২ বছর জেল

জুলাই আন্দোলনে ১৬৮ পথশিশু নিহত: লিডো

  • আপলোড সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০২:২৫:০২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০২:২৫:০২ অপরাহ্ন
জুলাই আন্দোলনে ১৬৮ পথশিশু নিহত: লিডো
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে প্রায় ১৬৮ জন পথশিশু নিহত হয়েছে। তবে জাতীয় পর্যায়ে নথিভুক্ত ১৩ হাজার ৫২৯ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে শিশুদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ঢাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ‘রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: জুলাই-আগস্ট ২০২৪ প্রেক্ষাপট’ গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গ্লোবাল ফান্ড ফর চিলড্রেনের অর্থায়নে একমাত্রা সোসাইটি ও লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (লিডো) এ গবেষণা পরিচালনা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলি বা ছররা গুলির কারণে গুরুতর চোখের আঘাতের জন্য ৫০৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্তত ৬০ জন শিশু ছিল। তাদের মধ্যে একজন ৯ বছর বয়সী পথশিশু চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। আটকের ফলে শিশুরা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। কাওরান বাজারে ৪৩ জন পথশিশুকে কোনও আইনি সহায়তা ছাড়াই আটক রাখা হয়। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। এছাড়া ব্র্যাক জানায়, অস্থিরতার সময় ঢাকার ৬২ শতাংশ পথশিশু আশ্রয়স্থল হারায়। সীমান্ত এলাকায় অভিভাবকহীন শিশুদের সংখ্যা ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য দেয় ইউনিসেফ। এইচআরডাব্লিউ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্রে পুলিশি অভিযানের পরে অনেক আশ্রয়স্থল পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা গেছে। এ গবেষণায় পথে বসবাসরত, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ জন শিশুর সঙ্গে করা কেস স্টাডি থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কেস স্টাডিটি ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, আন্দোলন চলাকালীন পথশিশুরা চরম সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হয়। ৭২ শতাংশ শিশু সহিংসতার ফলে আক্রমণের শিকার হয়েছে, কেউ সরাসরি আঘাত পেয়েছে, আবার কেউ নির্মম দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৮ শতাংশ পথশিশু সরাসরি আহত হয়। এর মধ্যে মাথায় আঘাত, ছররা গুলির আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৩ শতাংশ শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ২৬ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হলেও, বন্ধু বা পরিচিতদের মারধর ও আটক হতে দেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা শুরুর আগে পথশিশুদের মধ্যে সচেতনতার মাত্রা ছিল ভিন্ন। ৪১ শতাংশ শিশুর সহিংসতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। তারা কেবল চারপাশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানতে পারে। অন্যদিকে, ৩৬ শতাংশ শিশু আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত ছিল। এছাড়া অংশগ্রহণও ছিল বিচিত্র; ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু সক্রিয়ভাবে সহিংসতায় যুক্ত হয় এবং ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যক্তি-উদ্যোগ বা সংহতির কারণে অংশ নেয়। অংশগ্রহণ বা বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গঠনে ব্যক্তিগত বিশ্বাস, সহকর্মী ও রাজনৈতিক দলভুক্ত ব্যক্তির প্রভাব এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের বিষয়টি প্রভাব ফেলেছে। এতে বলা হয়, অনেক পথশিশুর জন্য সাধারণ জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়ে; কারফিউয়ের কারণে ৫৪ শতাংশ শিশু খাদ্য, পানি বা আশ্রয়ের জন্য সংগ্রাম করেছে এবং ৬০ শতাংশ শিশুর আয় ব্যবস্থাও ব্যাহত হয়েছে। এইসব কষ্টের মধ্যেও কেউ কেউ বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তি ও কমিউনিটির সহায়তায় কিছুটা সামলে উঠতে পেরেছে। তবে মানসিক ক্ষতি ছিল গভীর। ৬১ শতাংশ শিশু মানসিক আঘাত, ভয় ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছে; প্রায় অর্ধেক শিশুই দুঃস্বপ্ন বা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার অভিজ্ঞতা ভাগ করেছে এবং ৭৫ শতাংশ এর বেশি শিশু এখনও চাপ, দুঃখ ও উদ্বেগ নিয়ে বেঁচে আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহিংসতা থেকে সৃষ্ট ট্রমা ছিল ব্যাপক। লিডোর গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, সহিংসতা পরবর্তী পর্যায়ে ৬১ শতাংশ শিশু এখন তাদের এলাকায় তুলনামূলক নিরাপদ বোধ করে; পুলিশ ও গ্যাং-সংক্রান্ত অরাজকতার সংখ্যা কমেছে বলে মনে করছে, তবে মানসিক ক্ষত রয়ে গেছে। সহায়তার ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ শিশু এনজিও বা কমিউনিটির সাহায্য পেয়েছে, ৩৪ শতাংশ শিশু পরিচিত ব্যক্তি, ২২ শতাংশ কমিউনিটি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করেছে, আর মাত্র ১৯ শতাংশ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পেরেছে। তবুও অনেকেই এখনও চরম পরিবেশে টিকে আছে। ৩৩ শতাংশ ভিক্ষাবৃত্তি, ২৩ শতাংশ আবর্জনা বা বোতল কুড়িয়ে জীবন চালায়। অনেকে রেলস্টেশন কিংবা রাস্তার পাশে ঘুমায়। যদিও ৪০ শতাংশ শিশু নিজেদের শারীরিকভাবে সুস্থ বলে জানিয়েছে, তাদের সার্বিক পরিস্থিতি এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, বিগত তিন দশক ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় পথে বসবাসরত শিশুরা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এর ফলে, এসব শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করতে শিশুদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে এবং সহিংসতার কারণে তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সহিংসতার ফলে হতাহতের সংখ্যা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘিরে নানা বিশ্লেষণ ও বিতর্ক দেখা গেলেও সেখানে ঢাকার পথে বসবাসরত অবহেলিত শিশুদের ওপর এই সহিংসতার প্রাণঘাতী প্রভাব মূলধারার আলোচনাগুলোতে উপেক্ষিতই থেকে গেছে। পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত আমাদের স্মৃতির বাইরে চলে গেছে। এই শিশুদের অভিজ্ঞতা শুধু শারীরিক আঘাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ট্রমা, জীবিকার পথে বাধা, বাস্তুচ্যুতির মুখোমুখি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পথকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের আশ্রয়স্থলও হয় এই পথ। তাই রাজপথে সংগঠিত এই রাজনৈতিক সহিংসতা, তাদের এই দুর্বিষহ সামগ্রিক জীবন প্রবাহকে আরও মারাত্মক ঝুঁকির মুখোমুখি করে তোলে। গবেষণায় সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য তাদের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো, সরকার, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীদের প্রতি কয়েক দফা সুপারিশ জানানো হয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ