* একটি দলকে খুশি করতেই ভোট এগিয়ে আনা হচ্ছে : নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আনা হচ্ছে। যা জুলাইয়ের শহীদদের সঙ্গে প্রতারণা বলেও মনে করেন তিনি। এমনকি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলেও দাবি করেন পাটওয়ারী। এ বৈঠকে দেশের মাটি ও মানুষের কোনো সংযোগ নেই।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই বৈঠক শেষে ভোটের সময় নিয়ে আলাপের বিষয়ে সরকার ও বিএনপির যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়, তা উল্লেখ করেন তারেক রহমান।
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বিদেশে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার পরিপন্থী। লন্ডনে বসে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের মিটিং দেশবাসীর স্বার্থ ও গণআকাক্সক্ষার সঙ্গে প্রতারণা। শহীদদের রক্তকে অবমাননা করে বিদেশের মাটিতে মিটিং আয়োজন কখনোই মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, নিছক কোনো নির্বাচন আয়োজনের জন্য দেশের মানুষ সরকারকে ক্ষমতায় বসায়নি। গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন-তাদের আকাক্সক্ষা ছিল আগে বিচার সম্পন্ন হোক। সেইসঙ্গে একটি নতুন সংবিধান প্রণীত হোক এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হোক।
দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে হবে দেশের জনগণের মাধ্যমে, বিদেশি আলোচনায় নয় উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর একটি সামাজিক চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সেটিকে কার্যকর না করে দেশকে অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। এখনকার বাস্তবতায় নতুন করে একটি জাতীয় বন্দোবস্ত প্রয়োজন। আর এই বন্দোবস্ত হতে হবে জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে, কোনো একক দলের সুবিধার জন্য নয়। বর্তমান সরকার যদি সংস্কার, বিচার এবং সংবিধান প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয়, তাহলে এনসিপি দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানের দিকে যেতে বাধ্য হবে। এমনকি এই সরকার জনগণের আকাক্সক্ষা প্রতিফলনে ব্যর্থ হলে এনসিপি কোনো নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, শুধু রাজা বা রানী বদল হলেই চলে না, কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন। এনসিপি বিশ্বাস করে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। শহীদদের আত্মত্যাগ ও আহতদের কষ্টের মূল্যায়ন করতে হবে। গ্রামের মানুষের কাছে যেতে হবে, জানতে হবে তারা কী চায়। জনগণের বেদনার প্রতিফলন যদি সরকার বুঝতে পারে, তবেই বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় তারা সক্রিয় হবে।
বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বিএনপি এক সময় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানালেও এখন রোজার আগের সময়সীমায় এসে পৌঁছেছে। কিন্তু তারা এখনো জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র, বিচার বা নতুন সংবিধান নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেয়নি। ফলে এটি বোঝা যাচ্ছে, তারা কেবল ক্ষমতার লোভে যুক্ত হয়েছে, গণআকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে না। অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি একযোগে দেশের জনগণকে পাশ কাটিয়ে একটি গভীর সংকট তৈরি করছে। জনগণ অতীতেও লড়াই করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকারই বৈধ হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাচন করলেই হবে না, সঠিক বিচার ও সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের অর্থ নেই। এখনকার নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থার প্রতীক নয়। বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে কাজ করছে। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, আরপিও সংশোধন এবং জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন না হলে দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়।
এদিকে, লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতির বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি বিচার ও সংস্কার নির্বাচনের আগে সম্পন্ন করতে হবে। কোনোভাবেই পরবর্তী সংসদের হাতে সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া যাবে না। কোন পদ্ধতিতে সংস্কার হবে তা আলোচনা সাপেক্ষ। শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচনের আগে সংস্কার হতে হবে উল্লেখ করে সারোয়ার তুষার বলেন, নির্বাচিত সংসদের হাতে সংস্কার বাস্তবায়নের একটিও ঐতিহাসিক কিংবা পদ্ধতিগত কারণ নাই। সংসদ সংস্কার করবে না, সংসদ গঠিত হবে সংস্কারের ভিত্তিতে। এটাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক নিয়তি। তিনি বলেন, এছাড়াও জুলাই ঘোষণা ও সনদকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। উল্লিখিত বিষয়সমূহ নিশ্চিত হওয়ার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের মাস নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতার এ উদ্যোগ আদৌ কোনো অর্থ বহন করে কি না।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ সময় আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার কথা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেছেন, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

যৌথ বিবৃতির প্রতিক্রিয়া এনসিপির
নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে
- আপলোড সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ০৬:৪২:০৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ০৬:৪২:০৫ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ