ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ , ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ম্যানসিটির নতুন অধিনায়কের নাম জানালেন গার্দিওলা ফ্লুমিনেন্সের সাথে গোলশূন্য ড্র ডর্টমুন্ডের রোনালদোর সই করা জার্সি উপহার পেলেন ট্রাম্প টি-টোয়েন্টিতে ম্যাক্সওয়েলের অষ্টম সেঞ্চুরি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নতুন নিয়ম করছে আইসিসি দুই হাতে বোলিং করা নিয়ে যা বললেন থারিন্দু ২ রানের জন্য ১৫০ রানের মাইলফলক মিস করলেন শান্ত শেষ বিকেলে টাইগার শিবিরে ধাক্কা পরমাণু স্থাপনার কিছুই করতে পারেনি ইসরায়েল : ইরান আত্মসমর্পণ নয় কড়া বার্তা খামেনির জটিল সমীকরণে ইরান ইসরায়েল যুদ্ধ টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ভোগান্তিতে নগরবাসী নারী শ্রমিককে ভারতে পাচার দু’জনের যাবজ্জীবন ক্ষমা চেয়েও শেষ রক্ষা হলো না, কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা পূর্বাঞ্চলের ট্রেন যাত্রীদের বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি জাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার প্রাণদণ্ড মিরপুরে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই গ্রেফতার ৬ রাজধানীতে বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন
* ডেমরা-যাত্রাবাড়ি নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা * ভোগান্তিতে পড়েছেন ভাটারাবাসী * খেটে খাওয়া মানুষের চরম দুর্ভোগ * আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে আবহাওয়াবিদÑসুলতান

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ভোগান্তিতে নগরবাসী

  • আপলোড সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ১২:৩২:১৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৯-০৬-২০২৫ ১২:৩২:১৪ পূর্বাহ্ন
টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ভোগান্তিতে নগরবাসী
বর্ষা শুরু হতে না হতেই তার প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। তীব্র গরম থেকে কিছুটা রেহাই মিললেও টানা বৃষ্টিতে ঢাকার কিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে নগর জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বৃষ্টির কারণে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন অনেক বাসিন্দা। মঙ্গলবারের মতো বুধবার ভোরেও রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকরা ঘর থেকে বের হয়েই পড়ছেন দুর্ভোগে। এছাড়া বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পুরো ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে বলে জানায় নগরবাসী। তবে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেছেন, আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
নগরবাসী বলছেন, প্রতি বছর বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়, এটা নতুন কিছু নয়। তবুও সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা। ধানমন্ডির ঝিগাতলার নতুন রাস্তার বাসিন্দা নিলয়। তিনি বলেন, সকাল থেকে থেমে থেকে গুঁড়িগুঁড়ি, আবার কখনো ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে ভিজতে ভিজতে অফিসে গিয়েছি। এখন আবার ভিজতে ভিজতে এলাম। এতে ঠান্ডা-জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, এমন চলতে থাকলে নতুন রাস্তায় কোমর পর্যন্ত পানি উঠতে দেরি হবে না। এতে ভোগান্তি আরও বাড়বে। কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী রিংকি। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কলেজ শেষ করে যাচ্ছেন বাসার দিকে। যদিও সে বৃষ্টিতে ভেজা আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করছেন বলে মনে হলো। কখনো দুই হাত তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির ছোঁয়া নিচ্ছেন, আবার কখনো দুই হাতে বৃষ্টির পানি ধরে আলতো করে মুখে দিচ্ছেন। রিংকি জানান, আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুবই ভালো লাগে। বাসায় গেলে মা বকবেন ঠিকই, তবুও বৃষ্টিতে ভিজেছি।
ভিন্ন চিত্র খেটে খাওয়া মানুষের। বৃষ্টি তাদের জন্য চরম দুর্ভোগের। তবে টানা বৃষ্টিতে দিনমজুর ও সাধারণ মানুষ কঠিন অবস্থার মুখে পড়েছেন। শহরের সড়ক ফাঁকা, প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না। কর্মহীনতায় অনেকেই হতাশ। এদিন কয়েকজন রিকশাচালক রাস্তার পাশে রিকশা রেখে বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে আশ্রয় নিয়েছেন দোকানের ছাউনিতে। কথা হয় রিকশাচালক হামিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে লোকজন বাসার বাইরে কম বের হয়। ভাড়াও কম হয়। রিকশার চাকা ঘুরলে তবেই কপালে খাবার জোটে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এরকম চলতে থাকলে কপালে খাবার জুটবে কিনা জানি না। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বর্ষায় নগরে জলবদ্ধতা তৈরি হয়। যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে এবারও তাই হবে। একদিন বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট নদী হয়ে যায়। বাসা থেকে বের হতে পারি না। সিটি করপোরেশন শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেই। নির্মাণ শ্রমিক তরিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারিনি, রোজগার না হলে পরিবার খেয়ে থাকবে না। ইজিবাইক চালক ও ভ্যানচালকরাও যাত্রী না পেয়ে বাধ্য হয়ে কাজ থেকে বিরত রয়েছেন।
টানা বৃষ্টির কারণে ডেমরা ও যাত্রাবাড়ির নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ডিএসসিসির ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে, এতে অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ডেমরার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং যান চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, ডেমরার নলভোগ, কামারপাড়া, সরাইল, সারুলিয়া, টেংরা, মাতুয়াইল মদিনাবাগ, ডগাইর বড় মুরগির ফার্ম ও সামসুল হক খান স্কুল এণ্ড কলেজ, খুরিয়াপাড়া, রহমতপুর, কেরানি পাড়া, মাতুয়াইলসহ আশপাশের এলাকা। তবে সামসুল হক খান স্কুলের বাদশা মিয়া রোডের রাস্তায় অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পথচারী-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে।
মাসুদ মিয়া নামে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, হাজী বাদশা মিয়া রোডে অল্প বৃষ্টি হলে প্রধান সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি হয়ে যায় এমনকি এই পানি অনেক দিন জমে থাকে। হাজার হাজার মানুষের খুব ভোগান্তি হচ্ছে।
ডেমরার রানীমহলের বাসিন্দা সালাউদ্দিন দৈনিক জনতাকে বলেন, রানিমহল ব্রীজের পাশে রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টি হলে কাঁদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। নাজেহাল এই রাস্তাটিতে প্রায়ই রিক্সা, পিকআপ ভ্যান উল্টে যায়। স্থানীয় তিতাস উচ্চ বিদ্যালেয়র শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে এই সড়কে চলাচল করছে। বাদশা মিয়া রোডে চলাচলকারী সামসুল হক খান স্কুলের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তার পরিস্থিতি খুবই বাজে রূপ ধারণ করে। পানিতে পড়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকি। এ সড়কে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক রাফিম জামান বলেন, বাদশা মিয়া রোড ও ভুট্টু চত্বরের পানির মধ্য দিয়ে মোটরসাইকেল চলানোর সময় রাস্তার অবস্থা বোঝা যায় না। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। অতি দ্রুত জনসাধারণের দুর্ভোগ কমানোর দাবি রইলো।
টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিঘ্নিত হয় যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। গত সোমবার থেকে টানা গতকাল সকাল ও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এদিন ভাটারার কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। এদিন জলবদ্ধতার বিড়ম্বনা নিয়েই মসজিদে যান মুসল্লিরা। সকাল থেকেই ভাটারার ছোলমাইদ, নতুনবাজার, নয়ানগর, ১০০ ফিট, সাঈদনগর, খিলবাড়িরটেক, ফাঁসেরটেকের মধ্যপাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। বেলা ৩টার দিকে সরেজমিন ভাটারার নয়ানগর সড়কে পানি জমতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কটি দিয়ে চলাচল করা মানুষ। নয়ানগরের দোকানি লোকমান হোসেন বলেন, দোকানের সামনে পানি। ভেতরেও পানি চলে এসেছে। কাস্টমার আসার উপায় নেই। সকালে দোকান খুলেছি, এখন পর্যন্ত একজন কাস্টমারও দোকানে আসেননি। সাইদনগরে রহিম নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সকাল থেকেই কাস্টমার কম। এমন জানলে বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করে মাল কিনতেই যাইতাম না। এখন বইসা আছি, কী আর করা? রাস্তায় পানি জমলে মানুষজন বাসা থেকে বাইরে আসতে চায় না। বেচাকেনা কইমা যায়। তবে ওয়ার্ড সচিব তোফাজ্জল হোসেন জানান, জলাবদ্ধতা নিয়ে অঞ্চল-৩ এর আওতায় সব ওয়ার্ডেই টিম গঠন করে দ্রুত জলবদ্ধতা অপসারণের কাজ চলছে।
আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা দৈনিক জনতাকে বলেন, আগামী কয়েকদিন সারাদেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কারণ দেশের উপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয়। এছাড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যার ফলে সমুদ্র বন্দর এলাকাগুলোতেও বৃষ্টিপাত বেশি হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স