ঢাকা , শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ , ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ময়মনসিংহে অ্যাম্বুলেন্স অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ রেললাইনে বসে আড্ডা ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ তরুণের মৃত্যু বগুড়ায় ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ-শিবির মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত সিলেট সীমান্তে ঝুলছে বাংলাদেশি যুবকের লাশ বান্দরবানে সেনা অভিযান, আটক ৯ টাকা ধার নিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার নারী রাঙামাটিতে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ ইউটিউবার টিপুসহ তিনজন কারাগারে নির্বাচনের কথা বললেই গোসসা করেন- আলাল চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাসহ ১৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা ব্যবসা পরিস্থিতির অবনতি কিট না থাকায় খুলনা মেডিকেলে করোনা পরীক্ষা বন্ধ পিএসজিকে হারিয়ে চমক দেখালো বোতাফাগো মেসির গোলে প্রথম জয় পেলো মায়ামি এবার সান্তোস ছাড়ছেন নেইমার! হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন এমবাপে উইন্ডিজের বিপক্ষে অজি দল থেকে বাদ পড়লেন লাবুশেন তিন উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি অভিষেকে নাঈমের ফাইফার
* গ্যাসের সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শিল্পকারখানা ভুগছে * ব্যাংকঋণের সুদের হার চড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো সংকট * উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পণ্যের চাহিদাতেও গতি কম * দুর্নীতি, কর-জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বন্দরে দীর্ঘ সময় লাগা ইত্যাদি

ব্যবসা পরিস্থিতির অবনতি

  • আপলোড সময় : ২১-০৬-২০২৫ ১২:০১:৪০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৬-২০২৫ ১২:০১:৪০ পূর্বাহ্ন
ব্যবসা পরিস্থিতির অবনতি
দেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি ঘটেছে এবং দিনদিন তা বেড়েই চলেছে। গ্যাসের সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের শিল্পকারখানা ভুগছে। এছাড়া, ব্যাংকঋণের সুদের হার চড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো সংকট তো রয়েছেই। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পণ্যের চাহিদাতেও গতি কম। এসবের সঙ্গে দুর্নীতি, কর-জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বন্দরে দীর্ঘ সময় লাগা ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই। সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। এদিকে, বেসরকারি বিনিয়োগের মধ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই এফডিআইয়ে গতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ (জুলাই-মার্চ) মাসে ৮৬ কোটি ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১৬ কোটি ডলার। তার মানে এ সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ২৬ শতাংশ। একাধিক উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্ত বলেছেন, দেশি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা যদি মসৃণ হয় তাহলে বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোনোটাই হচ্ছে না। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি ও চলমান প্রক্রিয়া। এটি কখনোই রাতারাতি ঘটে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা নির্বাচিত সরকার আজ কোনো নীতিগত বা প্রশাসনিক উদ্যোগ নিলেই কাল বিনিয়োগ বেড়ে যাবে, ব্যাপারটা এমন নয়। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দরকার, যাতে বিনিয়োগকারীরা পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে, তা সমাধানের জন্য আমরা এখন নানাবিধ সংস্কার করছি। এদিকে, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন বাড়ছে। এ সংকট কাটিয়ে ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলে সেটা কাটানো যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখন অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা একসঙ্গে মিলেছে। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। সামনে কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না যে, কবে এটা ঠিক হতে পারে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে যখন অনিশ্চয়তা যোগ হয় তখন কোনো কিছুর সম্ভাবনা থাকে না। এডিবি ও বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। তার মানে অর্থনৈতিক উন্নতির ন্যূনতম কিছু হচ্ছে না। শিল্প উৎপাদন, বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ছে না। সবকিছু স্থবির হলেই ৭ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নামতে পারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। তিনি বলেন, আয়ের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি। তার মানে কেউ সঞ্চয় করতে পারছে না। সঞ্চয় করতে না পারলে বিনিয়োগ কোথা থেকে আসবে। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। দরিদ্র আরও বাড়বে সামনে। এ পরিবেশ বজায় থাকলে আমাদের অর্থনীতি চরম পরিস্থিতির দিকে যাবে। তিনি আরও বলেন, সরকার বলছে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩১ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং। কারখানায় বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। কীভাবে হবে বিনিয়োগ। আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি সেটা উন্নতি করার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক হয়রানি একই আছে। যদি কর্তৃপক্ষের কোনো দায়-দায়িত্ব না থাকে; তাদের ওপর কেউ আস্থা না পায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। এদিকে, সমপ্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনসিটিএডি বা আংকটাড), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পৃথক প্রতিবেদন বাংলাদেশের অর্থনীতির এক কঠিন চিত্র তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতে দুর্বলতা- এসবই অর্থনীতির গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর রপ্তানিপ্রবাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে পোশাক ও কৃষি খাতে। এর ফলে মার্কিন বাজারে প্রবেশ আরো কঠিন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পূর্বাভাস বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত ৩৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা বিনিয়োগ কমে যাওয়া ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফল। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে নতুন বিনিয়োগেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। জ্বালানি-বিদ্যুতের ঘাটতির পাশাপাশি যোগ হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মব-সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ, রপ্তানি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে। এডিবির বিশ্লেষণ অনুসারে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শ্রমিক বিক্ষোভ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলেছে। আইএমএফও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হওয়া এবং ভোগের প্রবণতা কমে যাওয়ার কথা বলছে। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন বাজেটও ধারকর্জ নির্ভর এবং সীমিত আকারের হতে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিবর্তে বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ানো হবে, যার একটি বড় অংশ আবার সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে। উন্নয়ন প্রকল্পেও বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেছেন যে সরকার নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং আইএমএফের শর্তগুলো মেনে চলতে হচ্ছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ধীরগতির কারণে আগামী অর্থবছরেও সরকার সন্তোষজনক আয় বাড়ানোর পথ সুগম করতে পারেনি। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি। তহবিল সংকটে উন্নয়ন প্রকল্পেও গতি নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগে চলছে এক ধরনের স্থবিরতা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার উৎস শক্তিশালী করা (রপ্তানি ও রেমিট্যান্স) এবং বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে বিনিয়োগের পরিবেশ স্থিতিশীল করা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা না গেলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স